প্রেম-প্রণয়ে কিছু নতুনত্ব থাকবে যা বিশেষভাবে মনকে নাড়া দেবে। কোনও কিছু অতিরিক্ত আশা না করাই ... বিশদ
আমি বিরক্ত গলায় বললাম, ‘আমি তো বললাম আপনাকে আমি চিনি না। আপনি কি আমার কথা বুঝতে পারেননি?’
মেয়েটির হাতে রুমাল। সে রুমাল দিয়ে ঠোঁটের ওপরে এবং নাকের পাশের ঘাম মুছল। তারপর আরও শান্ত ভাবে বলল, ‘হ্যাঁ, আপনি বলেছেন, কিন্তু আমি সেই কথা বিশ্বাস করছি না। আমাকে না চিনলে এটা সম্ভব নয়।’
বিরক্তি ঢেকে আমি জোর করে হাসবার চেষ্টা করলাম। কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললাম, ‘বিশ্বাস করা বা না করা আপনার ব্যাপার। চেনা তো দূরের কথা, আমি আপনার নাম পর্যন্ত জানতাম না। আপনি বললেন, তাই জানতে পারলাম।’
মেয়েটি এবার সরাসরি আমার চোখের দিকে তাকাল। সেই তাকানোয় অবিশ্বাস। আমার কথা সে গ্রাহ্যের মধ্যে নিচ্ছে না।
‘আমাকে চেনেন না, আমার নাম পর্যন্ত জানেন না, তারপরেও এত মিল! একথা বিশ্বাস করতে বলছেন?’
আমি আবার নতুন করে বোঝাবার চেষ্টা করলাম।
‘দেখুন, কোইসিডেন্স বলে একটা কথা আছে। কাকতালীয়। এটাও সেরকম। কল্পনার সঙ্গে বাস্তব মিলে গিয়েছে। তার মানে এই নয়, কল্পনাটা বাস্তব।’
মেয়েটি সুন্দরী। ছিপছিপে, লম্বা চেহারা। বয়স খুব বেশি হলে ছাব্বিশ–সাতাশ। গায়ের রং কালোর দিকে। এই ধরনের রংকে কী বলে? চাপা রং? চোখ দুটো বড় এবং ঝকঝকে। মনে হয়, কাজল ধরনের কিছু দিয়ে আরও কালো করেছে। কপালে ছোট টিপ। সেই টিপও কালো। চুলে লম্বা বিনুনি। বিনুনি সামনে ফেলা। এখনকার দিনে শহুরে মেয়েরা বিনুনিতে ফিতে বাঁধে না। এই মেয়ে বেঁধেছে। কে জানে এটা হয়তো নতুন কোনও ফ্যাশন। নতুন ফ্যাশনের খবর আমি কতটাই বা জানি। শাড়ির রং কালো। কচকচে কালো নয়, অফ হোয়াইটের মতো অফ ব্ল্যাক। কাঁধে শান্তিনিকেতনি ব্যাগ। সেখানেও কালো প্যাচ। মেয়েটি ব্যাগ কোলের ওপর রেখেছে। এই ধরনের মেয়েদের মধ্যে এক ধরনের তীক্ষ্ণ সৌন্দর্য থাকে। বেশিক্ষণ কাছে থাকলে সূচের মতো বেঁধে। অস্বস্তি হয়। আমার কি হচ্ছে?
আমার ‘কাকতালীয়’র ব্যাখ্যা শুনে মেয়েটি ঠোঁটের কোণায় একটু হাসল। বলল, ‘কিছু মনে করবেন না, আমি কলেজে ক্লাস করতে আসিনি। বাস্তব এবং কল্পনার ভাব, গতি প্রকৃতি নিয়ে আমার জানাবার কোনও ইচ্ছে নেই। আমার একটাই প্রশ্ন, আপনি আমার সম্পর্কে এত কিছু জানলেন কী করে?’
এবার আমার রাগ হল। মেয়েটির কথা বলবার ভঙ্গি সৌজন্য ছাড়াচ্ছে। যেন জেরা করছে।
কয়েক বছর আগের ঘটনা বলছি। এত বছর আগের ঘটনায় অচেনা কোনও মেয়ের চেহারা, শাড়ির রং, টিপ ছোট না বড়, এসব খুঁটিনাটি মনে থাকবার কথা নয়। আমার মনেও নেই। তারপরেও এভাবে বলতে পারছি তার কারণ অন্য।
এক বিকেলে অফিসে কাজ করছি। রিসেপশন থেকে ফোন করে জানাল, ভিজিটর এসেছে। আগাম না জানিয়ে অফিসে কেউ দেখা করতে এলে কাজের অসুবিধে হয়। এক, দু-মিনিট কথা বলে চলে আসি। বিরক্ত গলায় রিসেপশনে জানতে চাইলাম, ‘কী ব্যাপার? কে এসেছেন?’
রিসেপশন থেকে ইন্টারকমে ‘ভিজিটর’কে ধরিয়ে দিল। তরুণীকণ্ঠ।
‘স্যার, আমার নাম মৌ। আপনার লেখা একটা গল্পের বিষয় কিছু কথা বলতে চাই।’
আমি বললাম, ‘অফিসের সময় গল্প উপন্যাস নিয়ে কথা বলায় সমস্যা আছে। আপনি কী বলতে চান? গল্পটি খারাপ বা ভালো কিছু বলতে চান কি? নাকি গল্প সিনেমা–থিয়েটার করবেন? এখানে বলতে পারেন, নয় তো পরে জানিয়ে আসবেন।’
তরুণী কণ্ঠ বিচলিতভাবে বলল, ‘নানা, সেসব কিছুই নয়। গল্পটা নিয়ে আমি একটা সমস্যায় পড়েছি স্যার। সিরিয়াস ধরনের সমস্যা। টেলিফোনে বলা যাবে না, আপনাকে ঠিক বোঝাতে পারব না। আপনিও বুঝতে পারবেন না। সামনাসামনি বলতে হবে। তাই চলে এসেছি।’
আমার অভিজ্ঞতা বলছে, কম বয়সের ছেলেমেয়েরা হয় ‘ছোট সমস্যা’কে ‘সিরিয়াস সমস্যা’ বলে, নয় তো ‘সিরিয়াস সমস্যা’কে ‘কিছু নয়’ বলে। এতে গুরুত্ব দিতে নেই। আমি বললাম, ‘ঠিক আছে, পরে ফোন করে আসবেন। তখন আমি আপনার সিরিয়াস সমস্যা শুনব।’
মৌ নামের মেয়েটি থামল না। বলল, ‘কিছুদিন আগে আমি আপনার এই গল্পটা পড়ি। তারপর থেকে সমস্যা শুরু হয়েছে। সমস্যা এতটাই বেশি হয়েছে যে, রাতে ঠিক মতো ঘুমতে পারি না, কোনও কাজে মন দিতে পারি না। আজ আপনার ঠিকানা জোগাড় করে চলে এসেছি।’
এবার আমি থমকালাম। গল্প পড়ে রাতে ঘুমতে পারছে না!
‘গল্পের নাম কী?’
তরুণী গল্পের নাম বলল। আমি অবাক হলাম, এটা তো বেশ পুরনো গল্প! কয়েক বছর আগে লেখা। একটি মেয়েকে আমার গল্প রাতে ঘুমের সমস্যায় ফেলেছে কথাটার মানে কী?
বললাম, ‘বসুন। আমি আসছি।’
রিসেপশনে গিয়ে মেয়েটির মুখোমুখি বসতে সে কোনওরকম ভণিতা ছাড়া বলল, ‘স্যার, চিনতে পারছেন?’
আমি বললাম, ‘কই, না তো!’
মেয়েটি ফের নিজের নাম বলল। বলল, ‘আমি মৌ। এবার চিনতে পারছেন?’
আমার এই হেঁয়ালি ভালো লাগছিল না। তার ওপর একটু আগে অফিসের কাজে গোলমাল করেছি। সেটা মাথায় ঘুরছিল। হালকা কড়া গলায় বললাম, ‘না চিনতে পারছি না। কী ব্যাপার বলুন তো? তাড়াতাড়ি বললে ভালো হয়। আমার কাজ রয়েছে।’
মৌ নামের মেয়েটি আমার তাড়াহুড়োয় গুরুত্ব দিল বলে মনে হল না। একটু চুপ করে থাকল। মাথা নিচু করে কিছু ভাবল। যতক্ষণ মেয়েটি ছিল, তার এই স্বভাবটা মাঝে মধ্যেই দেখছিলাম। মাথা নিচু করে নিচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, পরের কথাটা ভেবে নিচ্ছে। বুঝতে পারছিলাম, খুব একটা প্রস্তুতি নিয়ে আসেনি। অথবা এসেছে, সেটা ঝালিয়ে নিচ্ছে।
‘আপনার ওই গল্পটির নায়িকা এবং আমার নাম যে এক!’
আমি উড়িয়ে দেবার ভঙ্গিতে বললাম, ‘হতেই পারে। আমার বহু গল্পের চরিত্রদের নামের সঙ্গে বাস্তবের নাম মিলে যায়। শুধু আমার কেন, সব লেখকের লেখাতেই হতে পারে। আমরা তো আকাশ থেকে নাম জোগাড় করি না, আশপাশ থেকেই নাম নিই। এই আপনার সিরিয়াস সমস্যা?’
তরুণী আবার একটু চুপ করে থেকে বলল, ‘না, এই আমার সিরিয়াস সমস্যা নয়। আমার সিরিয়াস সমস্যাটা অন্য। আপনার ওই গল্পটির নায়িকার নাম শুধু নয়, নায়িকার চরিত্র এবং তার জীবনের ঘটনার সঙ্গে আমার জীবন হুবহু মিলে গিয়েছে। শুধু শেষটুকু এখনও ঘটেনি। তবে ঘটবে। আপনার নায়িকা তার ইউনিভার্সিটির এক প্রফেসরকে বিয়ে করে বিদেশ চলে গিয়েছে। আমিও তিনমাস পর বিদেশ চলে যাচ্ছি।’ মেয়েটি একটু থামল। মাথা নিচু করে বলল, ‘স্যার, আমাকে কীভাবে চিনলেন?’
এবার আমি একটু ধন্ধে পড়লাম। তবে তা অল্প সময়ের জন্য। নিজেকে সামলে নিলাম দ্রুত। সহজভাবে বললাম, ‘দেখুন এরকম হতেই পারে। লেখকরা তো জীবন থেকেই লেখেন। অথবা লেখকরা যা লেখেন, তা জীবনে কোথাও না কোথাও লুকিয়ে থাকে। এটা কোনও সমস্যা নয়।’
মেয়েটি এবার মাথা নামিয়ে নিচু গলায় বলতে শুরু করে।
‘আপনার ওই গল্পে একটি অতি সাধারণ, গোবেচারা টাইপ ছেলে ইউনিভার্সিটিতে আমার সহপাঠী ছিল। আপনি তার নাম রেখেছেন কৌশিক। তার গোবেচার ধরন নিয়ে আমি ঠাট্টা-তামাশা করতাম। অপমান করতাম। আপনি লিখেছেন, প্রথমটায় কৌশিক গা না করলেও একসময়ে সে আমার প্রেমে পড়ে যায়। সেই প্রেম সাধারণ প্রেম নয়। জটিল প্রেম। সে আমাকে একই সঙ্গে ইউনিভার্সিটির ক্লাসে এবং তার পরিবারের মধ্যে দেখতে শুরু করে। তার কাছে আমি দু’জন হয়ে গেলাম। কল্পনায় দু’জন নয়, টাইম ফ্রেমে দু’জন। সে আমার সঙ্গে যে সময় ক্লাসে রয়েছে, বাড়ি ফিরে শুনল, সেই একই সময় আমি নাকি তার বাড়িতেও রয়েছি। মফস্সলে, তার ভাঙা বাড়িতে, তার মায়ের কাছে বসে রয়েছি। গান গাইছি ‘মাঝে মাঝে তব দেখা পাই...’ জ্বরে ঘরে থাকবার সময় কৌশিক নাকি দেখত, আমি তার কাছে ক্লাস নোটস নিয়ে পৌঁছে গিয়েছি। অথচ আমি তখন ইউনিভার্সিটিতে। যে সময় আমি হয়তো প্রফেসরের সঙ্গে গাড়ি করে ইউনিভার্সিটির গেট থেকে বেরচ্ছি, সেই একই সময় সে আমাকে পাশে নিয়ে কলেজ স্কোয়ারে বসে থাকত। কোন ইলিউশন নয়, সে আমার এক্সিজটেন্স ফিজিক্যালি অনুভব করত। এসব সত্যি মিথ্যে জানি না স্যার। আপনি লিখেছেন, আপনি জানেন।’
মেয়েটি থামল। সে হাঁপাচ্ছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম।
আমি অস্বস্তিতে পড়লাম। বললাম, ‘গল্পটা আমায় বলছেন কেন? আমার মনে পড়েছে।’
মেয়েটি একথা জবাব না দিয়ে বলল, ‘গল্পটা পড়তে পড়তে আমার মনে পড়ল, কৌশিক নামের ওই ছেলে সত্যি আমার সঙ্গে পড়ত। ক্যাবলা, গোবেচারা, কিছুটা বোকাও। কিন্তু জানতাম না সে আমাকে এমন পাগলের মতো ভালোবাসে। কিছুই জানতে পারিনি। আপনি সেকথা লেখেনওনি। কখনও বলেননি, আমি তার প্রেমের কথা জানতাম। আমি তাকে অবহেলা করেছি, বিদ্রুপ করেছি, আপনি গল্পে সেকথাই লিখেছেন। ঠিকই লিখেছেন।’
আমি এবার ঘাবড়ে গেলাম। গল্পের চরিত্রের সঙ্গে লেখকের দেখা হওয়ার ঘটনা নতুন কিছু না, অনেকেই লিখেছেন। সবটাই কল্পনায়। অথবা চরিত্রের মতো কারও সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। তাবলে এই মেয়ের মতো এতটা মিল!
মেয়েটি এবার তার রুমালের কথা ভুলে হাতের উলটো পিঠ দিয়ে কপালের ঘাম মুছল। আমি খানিকটা আমতা আমতা করে বললাম, ‘এটাও হতে পারে। কোইনসিডেন্সের মাত্রা খুব জোরালো হতে পারে। পারে না?’
মেয়েটি মুখ তুলে প্রায় দাঁতে দাঁত ঘষে চাপা গলায় বলল, ‘কতটা জোরালো? আমি যে কৌশিককে একদিন মিথ্যে অভিযোগে চড় মেরেছিলাম, অতটা জোরালো? সে ঘটনাও তো আপনি লিখেছেন।’
আমি চুপ করে গেলাম। মৌ নামের মেয়েটি বলে যেতে থাকে। ‘ছেলেটির নাম, বাড়ি, বাবা–মা, দুই যমজ বোন, তাদের নাম, চরিত্র, সব মিলে গিয়েছে। আমি আগে জানতাম না। আপনার গল্প পড়ে খোঁজ নিয়েছি। ঘটনা ঠিক।’
আমি অবাক গলায় বললাম, ‘আপনি কৌশিকের বাড়ি গিয়েছিলেন?’
‘আমি যাইনি। ওই এলাকায় আমার পরিচিত একজন রয়েছেন। পার্টি পলিটিক্স করে। তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম, সে খবর দিয়েছে।’
আমি বললাম,‘আপনি এখন কী করেন? স্টুডেন্ট?’
‘না। গল্পে আপনি যে স্যারের সঙ্গে আমার বিয়ের কথা লিখেছেন, তাকে বিয়ে করেছি। এবার আমরা বিদেশ চলে যাব।’
হেসে বললাম, ‘তাহলে আর সমস্যা কোথায়? গল্প অনেকসময় জীবনের থেকেও বেশি সত্যি হয়।’
মেয়েটি স্থির চোখে বলল,‘আপনাকে আমার সম্পর্কে এত কথা কে বলেছে? কৌশিক?’
আমি আর রাগ করতে পারলাম না। বললাম, ‘তাকেও আমি চিনি না। আপনার মতোই সে আমার কল্পনার। অতীত নিয়ে চিন্তা করছেন কেন? নতুন জীবন শুরু করতে চলেছেন, তাকে নিয়ে ভাবুন।’
মেয়েটি মাথা নিচু করে চুপ করে রইল। এক সময়ে খানিকটা যেন আপনমনে বলল, ‘চিন্তা করতাম না। আপনার গল্পটা না পড়লে কিছুই চিন্তা করতাম না। আমি গল্প টল্প পড়ি না। আপনার লেখা কখনও পড়িনি। নামও জানতাম না। পুরনো কাগজের আড়াল থেকে ম্যাগাজিনটা হঠাৎ বেরিয়ে পড়ল। পাতা ওলটাতে গিয়ে একটা লেখায় নিজের নামটা চোখে পড়ে। মৌ। তারপর পড়ি। আমি বুঝতে পারিনি, কৌশিক আমাকে এতটা ভালোবাসে। আপনি পেরেছিলেন। আমাকে জানাননি কেন? ইচ্ছে করলেই তো গল্পে লিখতে পারতেন।’
আমি থতমত খেলাম। মেয়েটি কি সত্যি মনে করছে, আমি ওকে চিনি বা কেউ ওর সম্পর্কে আমাকে বলেছে? মাথায় গোলমাল নেই তো? হোক গে। যা খুশি হোক। অনেকটা সময় দিয়েছি, আর নয়। হালকা ব্যঙ্গের গলায় বললাম, ‘জানলে কী করতেন? প্রফেসরকে ফেলে, ওই ক্যাবলা অতি সাধারণ, গরিব, ভাঙা ঘরে থাকা সহপাঠীর সঙ্গে প্রেম করতেন?’
মেয়েটি চোখ তুলে বলল, ‘জানি না। হয়তো করতাম।’
আমি সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। বললাম, ‘সরি, এবার আমাকে কাজে ফিরতে হবে। একটা গল্পের সঙ্গে জীবন মিলে যাওয়া মানে ভাববেন না, জীবন গল্পের মতো। জীবন তার নিজের মতো।’
মৌ নামের মেয়েটি উঠে দাঁড়ায়। তার চোখ কি ভিজে? নাকি আমি ভুল দেখেছি? সে বলে, ‘স্যার, আপনি কিন্তু আমার প্রশ্নের জবাব দিলেন না। যদি দিতেন খুব শান্তিতে থাকতাম।’
আমি রিসেপশনের কাচের দরজা খুলে দিয়ে বললাম, ‘দিয়েছি। আপনি বুঝতে পারেননি। যে ছেলেটির জন্য আপনি এখন কাঁদছেন, তখন কাঁদলে আমি এই গল্প লিখতে পারতাম না।’
সুন্দরী তরুণী দরজার বাইরে পা রেখে সজল চোখ তুলে বলল, ‘আমি কি কৌশিকের সঙ্গে দেখা করতে পারি? তার বাড়ি গিয়ে তার কাছে ক্ষমা চাইতে পারি?’
আমি একটু হেসে বললাম, ‘না পারেন না। কারণ আপনি না জানলেও ওই ছেলে আপনার সঙ্গে মাঝে মাঝে দেখা করে।’
মেয়েটি চলে গেলে, আমি খানিকটা ঘোরের মধ্যে পড়লাম। রাতে বাড়ি ফিরে বই বের করে গল্পটা পড়ি। একবার, দু’বার, তিনবার। পায়চারি করতে করতে নিজেকে বোঝালাম, আজকের ঘটনা সবটা বানানো। কেউ আমার সঙ্গে মজা করবার জন্যও গল্পের চরিত্র বানিয়ে মেয়েটিকে পাঠিয়েছে। সে নিজে থেকেও আসতে পারে। তবে মেয়েটি ভালো অভিনয় জানে। মিথ্যে মৌ হয়ে কেমন কাঁদল! সাজগোজও আমার গল্পের সত্যি মৌ–এর মতো। তবে কাউকে এই ঘটনা বলব না। বোকা ভেবে হাসবে। আমিও নিজের মনে হাসলাম। বোকা বনে যাওয়ার হাসি।
এই হল গল্প। গল্প এখানে শেষ হলে হয়তো ভালো হতো। হয়নি।
একদিন অফিসে কাজ করছি। রিসেপশন থেকে জানাল, একটি ছেলে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। বিরক্ত হয়ে ইন্টারকমেই কথা বললাম।
‘আপনি কে? কী চাই?’
ওপাশ থেকে তরুণ কণ্ঠ বলল, ‘স্যার, আমার নাম কৌশিক। আপনার একটা গল্প পড়ে সিরিয়াস সমস্যায় পড়েছি। রাতে ঘুমতে পারছি না, কাজে মন দিতে পারছি না। আপনার সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই।’ আমরা পিঠ দিয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে যায়। আমি কাঁপা গলায় বলি...।