মেয়াদি সঞ্চয় থেকে অর্থাগম যোগ আছে। সন্তানের আবদার মেটাতে অর্থ ব্যয়। ধর্মকর্মে মন আকৃষ্ট হবে। ... বিশদ
দিনটা ছিল সেপ্টেম্বরের ১৫। স্বাধীন ভারতের আকাশে প্রথম কোনও অজানা উড়ন্ত বস্তু। হইচই শুরু হতে দেরি হয়নি। ২ অক্টোবর বড় করে খবরও বেরল ইংরেজি কাগজে। বছর ছয়েক আগেও দিল্লিতে এমন ঘটনার গুজব রটেছিল। কিন্তু এবারের মতো সাত-আটশো সাক্ষী পাওয়া যায়নি। সেই শুরু। এই ৫জি যুগে এসেও আসমুদ্রহিমাচলের আকাশে মাঝেমধ্যেই অজানা আলো, চকচকে উড়ন্ত বস্তুরা উঁকি দিয়ে যায়। এমনকী আমাদের শহর কলকাতা, বাংলার অন্যান্য জেলাতেও। কোনও ঘটনার ব্যাখ্যা মেলে, কোনওটা আজও রহস্যে মোড়া।
২৯ অক্টোবর, ২০০৭। ভোর রাতে জল খেতে বিছানা ছেড়েছিলেন পূর্ব কলকাতার বাসিন্দা ফারহান আখতার। এইচ অ্যান্ড আর জনসন সংস্থার ডেপুটি ম্যানেজার। জল খেতে গিয়েই পূবের জানলায় চোখ পড়েছিল তাঁর। অদ্ভুত একটা আলো। ৩০ ডিগ্রি কোণে একটি বড় তারা যেন একটু বেশিই সাদা আলো ছড়াচ্ছে। দেরি করেননি ফারহান। ক্যামেরা এনে সটান ছবি তুলে নিয়েছিলেন। তাঁর চোখের সামনেই তারাটি সাদা আলোর বল থেকে আচমকা রং আর আকার বদলাতে শুরু করে। সেও কয়েক মিনিটের জন্য। গায়ের লাল বিন্দু, মাঝে সাদা আস্তরণ দেখতে দেখতেই মিলিয়ে যায় মেঘের ফাঁকে। কলকাতা বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের রেডারে কিন্তু এই অজানা
উড়ন্ত বস্তু ধরা পড়েনি। তাহলে কী ওই আলোর বলটি? উত্তর আজও অজানা। এই ঘটনাই শেষ নয়। এরপর ২০১১, ২০১২, মায় গত বছরও কলকাতা এবং জেলার আকাশে এমন একটি অদ্ভুত আলো দেখা গিয়েছিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোড়ন ফেলে দেয় সেই ছবি।
ভারতের আকাশে ইউএফও-র দেখা পাওয়ার উল্লেখ মেলে মার্কিন গুপ্তচর সংস্থার সিআইএ-র ডিক্লাসিফায়েড ডকুমেন্টেও। তাদের দাবি, ১৯৬৮ সালে অন্তত ছ’টি অজানা উড়ন্ত বস্ত দেখা গিয়েছিল ভারত, নেপাল এবং ভূটানে। এর মধ্যে চারটিই লাদাখ এবং উত্তর সিকিমে। সেগুলির সবক’টি আবার গোলাকার বা চাকতি নয়। একটি রকেটের মতো সাদা বস্তুও ছিল। সবক’টি থেকেই ধোঁয়া বেরতে দেখতে পেয়েছিলেন স্থানীয়রা। বছর দশেক আগে লাদাখের একটি ঘটনা তো রীতিমতো ভয় পাইয়ে দিয়েছিল কর্তব্যরত ভারতীয় সেনা এবং আইটিবিপির জওয়ানদের। ২০১২ সালের আগস্ট এবং অক্টোবরে প্যানগং লেকের কাছে অন্তত ১০০টি উজ্জ্বল রঙা বস্তুর দেখতে পাওয়া যায়। দিন-রাত মিলিয়ে তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা আকাশে জ্বলে ছিল সেগুলি। তার রিপোর্ট যায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরেও। ওই অজানা বস্তুগুলি কিন্তু চীনা ড্রোন কিংবা স্যাটেলাইট ছিল না। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সেনার গবেষকরাও। ওগুলি আদৌ কী ছিল, তা এখনও জানা যায়নি।
মজার বিষয় হল, বাংলা সাহিত্যে ইউএফও-র আনাগোনা এসবের বহু আগে। অনেকেরই ধারণা, বাঙালিকে ভিনগ্রহী এবং অজানা উড়ন্ত চাকতিদের চিনিয়েছেন সত্যজিৎ রায়। কথাটা আংশিক সত্য তো বটেই। সত্যজিতের ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়েরি’ কিংবা ‘বঙ্কুবাবুর বন্ধু’ সন্দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল গত শতাব্দীর ছয়ের দশকে। তবে এর অন্তত বছর ষাটেক আগে ভিনগ্রহীদের বাংলা সাহিত্যের প্রথম গল্পটি ছাপা হয় ‘ভারতী’ পত্রিকায়। সালটা ১৮৯৫। গল্পের নাম ‘শুক্র ভ্রমণ’। লেখক বিশ্বভারতীয় অঙ্ক-বিজ্ঞানের মাস্টারমশাই জগদানন্দ রায়। শুধু সাহিত্য নয়, বাংলা গানেও অজানা উড়ন্ত বস্তুর উল্লেখ প্রথম এসেছে গত শতাব্দীর সাতের দশকে। সেটা মহীনের ঘোড়াগুলির হাত ধরে... ‘শহর আলোয় উজল/ধোঁয়াশায় আকাশ পিছল/ ছাদে এসে নামে ভিনগ্রহী ফ্লাইং সসার।’