মেয়াদি সঞ্চয় থেকে অর্থাগম যোগ আছে। সন্তানের আবদার মেটাতে অর্থ ব্যয়। ধর্মকর্মে মন আকৃষ্ট হবে। ... বিশদ
প্রথম ভিনগ্রহী হামলা
১৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৬১। নায়াগ্রা ফলস দেখে নিউ-হ্যাম্পশায়ারের পোর্টসমাউথে নিজেদের বাড়িতে ফিরছিলেন বেটি ও বার্নি হিল। রাত প্রায় সাড়ে দশটা। ঠাট্টা-ইয়ার্কি, খুনসুটিতে মশগুল তরুণ হিল দম্পতি। গাড়ি চালাচ্ছেন বার্নি। ১৯৫৭ সালের শেভ্রলে, বেল এয়ার। নির্জন পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা, ‘ইউএস রুট-থ্রি’ ধরে গাড়ি ছুটছে। ঠাণ্ডা হাওয়া মাঝেমধ্যেই বেটির এলো চুলে বিলি কেটে যাচ্ছে। হঠাৎ গাড়ির খোলা জানলা দিয়ে আকাশের দিকে তাকাতেই বেটির চক্ষুস্থির! একটা বড়সড় উল্কা, নীচে না নেমে উপরে উঠে যাচ্ছে! পরমুহূর্তেই একটা গোত্তা খেয়ে তীব্র গতিতে নীচে ধেয়ে আসতে লাগল উল্কাটা। যত নীচে নামছে, ততই আকার ও ঔজ্জ্বল্য বাড়ছে। টুইন মাউন্টেনের কাছে গাড়ি থামাতে বললেন বেটি। ভালো করে দেখবেন বলে। বার্নি গাড়ি থামালে পোষা কুকুর ডিলসেকে নিয়ে গাড়ি থেকে নামলেন সকলে। বেটির হাতে দূরবিন। কিন্তু খালি চোখেই দেখা যাচ্ছে, উড়ন্ত-চাকির মত অদ্ভুত গোলাকার একটা বস্তু কাস্তের মতো একফালি চাঁদের নীচে পাক খাচ্ছে। এবার দূরবিনে চোখ রেখে চমকে উঠলেন বেটি। উড়ন্ত চাকির গা থেকে বিভিন্ন রঙের চোখধাঁধানো উজ্জ্বল আলো ঠিকরে বেরচ্ছে। আলোর রোশনাই দেখে বার্নি বললেন, নিশ্চয়ই ভারমন্ট থেকে মন্ট্রিয়েল যাচ্ছে কোনও প্লেন। নাহলে এত রাতে আর কী বা আকাশে আলোর ফুলকি ছড়িয়ে দুরন্ত গতিতে উড়ে যেতে পারে!
বার্নির পা দুটো যেন মাটিতে আটকে গিয়েছে। দেখছেন, অবিশ্বাস্য গতিতে উড়ন্ত-চাকিটা তাঁকে ধাওয়া করে নেমে আসছে। হতবুদ্ধি বার্নি তড়িঘড়ি গাড়ি স্টার্ট করে ‘ফ্রাঙ্কোনিয়া নচ’ হয়ে বাড়ির রাস্তা ধরলেন। ‘ক্যানন মাউন্টেন’-এর কাছে পৌঁছে তাঁদের চোখ বিস্ময়ে বিস্ফোরিত। প্রায় ৪০ ফিট লম্বা সেই অদ্ভুতদর্শন উড়ন্ত-চাকিটা পথ আগলে দাঁড়িয়ে। আলোকোজ্জ্বল সেই ভৌতিক যান, মাটির বেশ কিছুটা উপরে, পিংপং বলের মতো অনবরত লাফিয়ে চলেছে। দুদ্দাড় গতিতে সামনে-পিছনে গিয়ে লাট্টুর মতো পাক খাচ্ছে। নানা রঙের আলোর ফুলঝুরিতে রাতের অন্ধকার ফালাফালা হয়ে যাচ্ছে। মন্ত্রমুগ্ধের মতো গাড়ি চালাচ্ছেন বার্নি। ‘ইন্ডিয়ান হেড’এর কাছাকাছি আসতেই ভৌতিক সেই মহাকাশযানটি গাড়ির একেবারে সামনে এসে নিশ্চল হয়ে রইল।
অজানা বিপদের আশঙ্কায়, পিস্তল নিয়ে উড়ন্ত-চাকির দিকে এগিয়ে চললেন বার্নি। উইন্ড-শিল্ডের সামনে বার্নিকে দেখতে পাচ্ছেন বেটি। বার্নির নজর উড়ন্ত-চাকির দিকে। দেখছেন, মানুষের মতো দশ-এগারোজন শলাপরামর্শ করছে। সকলের মুখ ঢাকা, পরনে জোব্বার মত ঝকঝকে কালো পোশাক। মাথায় সৈন্যদের মতো কালো টুপি। কিম্ভুতদর্শন মনুষ্য-সদৃশ সেই প্রাণীদের দলপতি যেন হাত তুলে বার্নিকে থামতে বলল। এবার উড়ন্ত চাকিটা ক্রমশঃ বার্নির দিকে এগিয়ে আসছে। বাদুড়ের মতো দু’পাশে বিস্তৃত ডানা থেকে লাল আলো ঠিকরে বেরচ্ছে। ভয়ে বেটির দমবন্ধ হওয়ার জোগাড়। কানে ঝিঁঝিঁ ধরানো তীক্ষ্ণ আওয়াজে জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন বেটি। সকালে, সম্বিত ফিরলে দুঃস্বপ্নের রাত কাটিয়ে কোনওরকমে বাড়ি আসেন বিধ্বস্ত বেটি-বার্নি। পিছনের দরজায় বাক্সপ্যাটরা ফেলে রেখেই তাঁরা ছুটলেন বাথরুমে। ঘন্টাখানেক ধরে স্নান সারলেন, গতরাতের বিভীষিকার সব ক্লেদ গা থেকে মুছে ফেলতে।
প্রথমে ভেবেছিলেন অভিশপ্ত রাতের স্মৃতিকে ডাস্টবিনে বিসর্জন দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন হিল দম্পতি। কী মনে করে জামাকাপড়ের ব্যাগ ভিতরে এনে পরীক্ষা করতে বসলেন বেটি। দেখলেন তাঁর জামার সেলাই-বোতাম সব কেউ যেন জবরদস্তি ছিঁড়ে দিয়েছে। শখের জুতোজোড়ার হিল উপড়ে গিয়েছে। স্ট্র্যাপ ছেঁড়া। পরনের জামা আলমারিতে রাখতে গিয়ে বেটি খেয়াল করলেন, তাতে গোলাপি রঙের পাউডার লেগে। মিহি পাউডারের বেশিটাই বাতাসে উড়ে গেল। বিশ্বের পাঁচ-পাঁচটা স্বনামধন্য রাসায়নিক ল্যাব বেটির জামার ফরেন্সিক তদন্তে কোনও কিছু উদ্ধার করে উঠতে পারেনি। চিরকালের মতো স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল বেটি-বার্নির ঘড়ি। বিশ্বের কোথাও সে ঘড়ির মেরামতি সম্ভব হয়নি। দিক-নির্ণয়ে ব্যবহৃত কম্পাসটিকে কেউ যেন প্রবল আক্রোশে বেশ কয়েকবার প্রাণপণে ঘুরিয়ে অকেজো করে ফেলে রেখে গিয়েছিল। তাঁদের শেভ্রলে গাড়িতে ভিনগ্রহীদের আঁচড়ের দাগ বা স্ক্র্যাচ তুলে ফেলাও সম্ভব হয়নি কারও পক্ষে। এখানেই শেষ নয়। চাঞ্চল্যকর বেশ কিছু দাবিও তোলেন বেটি। ঘোরের মধ্যে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, কেউ বা কারা তাঁর প্যান্টের চেনের জিপার টেনে খোলার চেষ্টা করছে। চেন খুলে নাভির নীচে সূচ ফুটিয়ে তিনি গর্ভবতী কি না, সেই পরীক্ষাই নাকি করেছিল ভিনগ্রহীরা। পর পর পাঁচদিন ঘুমের মধ্যে নানা দুঃস্বপ্ন দেখেন তিনি। মানসিক ভাবে স্থবির হয়ে যান বার্নি। দু’জনেরই যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করে মার্কিন প্রশাসন। সেই বছরেই ২১ অক্টোবর, সমস্ত ঘটনাটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ‘ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন কমিটি অন এরিয়াল ফেনোমেনা’ বা এনআইসিএপি-র সামনে বলেন বার্নি। এনআইসিএপি-র পোড়খাওয়া গোয়েন্দা আধিকারিক ওয়াল্টার ওয়েব জানিয়েছিলেন, ‘আনআইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্ট’ বা ইউএফও-র সঙ্গে মোলাকাতের একটি কথাও বার্নি মিথ্যে বা রং চড়িয়ে বলেননি। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে বার্নির প্রতিটি কথার সত্যাসত্য বিভিন্নভাবে যাচাই করা হয়েছিল। বেটির সেদিনের পরিধেয় সমস্ত জামাকাপড় থেকে ভিনগ্রহীদের ধর্ষণের সত্যতা মেলে। আজও তা সযত্নে রক্ষিত ডারহামে, ইউনিভার্সিটি অব নিউ হ্যাম্পশায়ারে। নিউ হ্যাম্পশায়ারের পোর্টসমাউথের যে জায়গায় ভিনগ্রহীরা বেটি-বার্নিকে দেখা দিয়েছিল, ঠিক সেখানে একটি স্মৃতিফলকে সবিস্তারে খোদিত রয়েছে হিল দম্পতির রুদ্ধশ্বাস ঘটনাটি।
টিক-ট্যাক ইউএফও
১৪ নভেম্বর, ২০০৪। মার্কিন বিমানবাহী রণতরী নিমিটজের নৌবাহিনীর পাইলট চ্যাড আন্ডারউড টিক-ট্যাকের মতো অষ্টভুজাকার বিশালকায় এক ইউএফও-কে প্রত্যক্ষ করেছিলেন। নামকরণও তাঁরই। শুধু প্রত্যক্ষ করাই নয়, তাঁর ‘ফরওয়ার্ড লুকিং ইনফ্রারেড গান পড ক্যামেরা’ (ফ্লির) দিয়ে ইউএফওটির অদ্ভুত বিসদৃশ আচরণকেও ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন। টিক-ট্যাক ইউএফও-র কথা প্রথমবার শোনা যায় ২০০৪ সালের ১০ নভেম্বর। সান ডিয়েগোর পশ্চিম উপকূলে ‘স্যান ক্লেমেন্টে’ দ্বীপে গোটা দশেক বিকটদর্শন বস্তুকে উড়তে দেখেন রেডার অপারেটর কেভিন ডে। ২৮ হাজার ফিট উচ্চতায় ওড়া পাখিদের পক্ষে সম্ভব নয়। আর বিমান এত ধীরগতিতে উড়তে পারে না।
অপর একটি বিমানবাহী রণতরী, ‘প্রিন্সটন’ থেকেও টিক-ট্যাক ইউএফওর উপর বিরামহীন নজরদারি চালাচ্ছিল। কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও টিক-ট্যাকের হদিশ দিতে পারছিল না ‘প্রিন্সটন’-এর রেডার। টিক-ট্যাকের গতিবিধি নির্ধারণ করতে গিয়ে শেষমেশ পুরোপুরি বিকল হয়ে যায় রেডার। প্রথমে অবশ্য মনে করা হয়েছিল, কম্পিউটারের মতো ভাইরাস আক্রমণে বিকল হয়ে পড়েছে রেডার। তন্নতন্ন করে খুঁজেও ভাইরাসের খোঁজ না মেলায়, রেডারের কাজ পুরো বন্ধ রেখে নতুন করে ফরম্যাট করা হয়। ইতিমধ্যে ব্ল্যাক এসেজের কমান্ডিং অফিসার ডেভ ফ্রেভারের উত্তেজিত গলা শোনা গেল। আকাশে উড়তে উড়তেই তিনি জানালেন, মাঝ আকাশে ফাইটার জেট থেকে একটা অদ্ভুত দর্শন বস্তুকে দেখতে পাচ্ছেন। বস্তুটি ৪০ ফিট লম্বা। অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে তা ১৫-২৪ হাজার ফিট উচ্চতায় অনবরত নামা-ওঠা করছে। কোথাও কোনও ইঞ্জিনের শব্দ বা ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে না। প্রশান্ত মহাসাগরে হঠাৎ ৫০ ফিট গভীরে ডুবে গিয়ে, চোখের পলকে জল থেকে লাফিয়ে ২০ হাজার ফিট উচ্চতায় স্থাণু হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছে বস্তুটি। পরক্ষণেই তা আবার উঠে যাচ্ছে ৫০ হাজার ফিট উচ্চতায়। অদ্ভুত দর্শন বস্তুটির কার্যকলাপ দেখে কার্যত হতবুদ্ধি ব্ল্যাক এসেজের কমান্ডিং অফিসার।
ফ্রেভারের ইউএফও দর্শনের ঠিক ১ ঘণ্টা পরে নিজের ‘ফ্লির’ ক্যামেরায় টিক-ট্যাককে ধরতে পারলেন আন্ডারউড। ততক্ষণে প্রিন্সটনের রেডারেও টিক-ট্যাকের আবছা ছবি মিলতে শুরু করেছে। ফ্রেভার পরবর্তীকালে বলেছিলেন, ওরকম অসাধারণ একটি উড়ানযান পেলে একবার অন্তত উড়িয়ে দেখার চেষ্টা করতেন তিনি। নিমিটজের ক্যারিয়ার ভেহিকেল ইন্টেলিজেন্স সেন্টারে প্রথমবার ‘ফ্লির’ ক্যামেরায় তোলা ভিডিওটি চালিয়ে দেখা হয়। ১৭ বছর পর, সেই গোপন ভিডিওটি নিয়ে লেখা প্রকাশিত হয় ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর প্রথম পাতায়। তার পরেই বিশ্বজুড়ে তুমুল আলোড়ন পড়ে যায়।
আন্ডারউডের কথায়, তাঁর ফাইটার জেটের ডানার নীচে লাগানো ছিল ‘ফ্লির’। তাই এত ভালো ছবি মিলেছে। ফ্রেভারের মতো তিনিও টিক-ট্যাক জাদুতে মজে। তাঁরও মাথায় ঢোকেনি, কীভাবে পৃথিবীতে উড়ে বেড়ানো একটি বস্তু অভিকর্ষজ ত্বরণকে উপেক্ষা করে, শব্দের থেকেও দ্রুতগতিতে উড়তে পারে! বহু বছর পর নিউ ইয়র্ক ম্যাগাজিনে এক সাক্ষাৎকারে সেদিনের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়েও বিস্ময়ের ঘোর যেন কাটতেই চাইছিল না আন্ডারউডের।
টিক-ট্যাকের ভিডিওটিতে জেট প্লেনের পিছনের ধোঁয়ার আলপনার মতো একটি দাগের আভাস মিলেছে। আন্ডারউডের বিশ্বাস, টিক-ট্যাক ইউএফও ছাড়া আর কিছু নয়। কোনও পাখি ৫ হাজার ফিটের বেশি উচ্চতায় উড়তে পারে না। কোনও অত্যাধুনিক ফাইটার জেট বা ক্রুজ মিসাইলও সেকেন্ডে সেকেন্ডে গতিবেগ এবং গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে না। মানুষের থেকে বহুগুণ উন্নততর মেধা-মস্তিষ্ক এবং প্রযুক্তির অভাবনীয় মেলবন্ধন ছাড়া এই ধরনের আকাশযান নির্মাণ সম্ভব নয় বলেই আন্ডারউডের বিশ্বাস। একমাত্র ভিনগ্রহীরাই পারে এমন মহাকাশযান বানাতে! পরবর্তী সময়ে পেন্টাগনের ‘অ্যাডভান্সড এরোস্পেস থ্রেট আইডেন্টিফিকেশন প্রোগ্রাম’ স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে টিক-ট্যাক ছিল ইউএফও।
ইউএফও রহস্যের অন্তরালে
ইউএফও কি সত্যিই আছে? এনিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। এখন আর ইউএফও বলা হয় না। বদলেছে নাম—আনআইডেন্টিফায়েড অ্যানোমোলাস বা এরিয়াল ফেনোমেনা। ২০০৪-২১ সালের মধ্যে ১৪৪টি ‘আনআইডেন্টিফায়েড এরিয়াল ফেনোমেনা’র দেখা মিললেও মাত্র একটির কূলকিনারা করে উঠতে পেরেছে মার্কিন প্রশাসনের অফিস অব দি ডাইরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স। বাকি ১৪৩টির অস্বাভাবিক, অচিরাচরিত উড়ানের কোনও ব্যাখ্যা করে উঠতে পারেনি আমেরিকার তাবড় বিজ্ঞান-প্রযুক্তি সংস্থা। মাধ্যাকর্ষণের বাধা টপকে ইউএপি কীভাবে মাত্রাতিরিক্ত গতিতে এরোডায়ানামিক্সের সব সূত্রকে অগ্রাহ্য করে উড়ছে? উত্তর অধরা।
এরিয়া ফিফটি ওয়ান
লাস ভেগাস থেকে ১২০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে, মার্কিন বিমানবাহিনীর নেভাডা টেস্ট অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার। আর সেখানেই রয়েছে বহু বিতর্কিত ও রহস্যময় ‘এরিয়া ফিফটি ওয়ান’। এই জায়গার গোপনীয়তা রক্ষা করতে দীর্ঘদিন পর্যন্ত এরিয়া ফিফটি ওয়ানের অস্তিত্ব স্বীকার করেনি মার্কিন সরকার। ২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রথম এরিয়া ফিফটি ওয়ানের কথা স্বীকার করেন। তবে সেখানে কী আছে, তা নিয়ে কিছু বলেননি।
এরিয়া ফিফটি ওয়ান ঘিরে গুজবের শেষ নেই। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুজব এলিয়েন ও ফ্লাইং সসার নিয়ে। অনেকেই মনে করেন, ভিনগ্রহীদের কোনও মহাকাশযান রসওয়েল অঞ্চলে ভেঙে পড়ে। এরিয়া ফিফটি ওয়ানে মার্কিন সেনাবাহিনী সেই জীবিত বা মৃত এলিয়েনদের নিয়ে গবেষণা করছে। বাস্তব চিত্রটি অবশ্য জল্পনা থেকে বহু দূরের।
জানা যায়, ১৯৫৪ সালে সিআইএকে একটি নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ার। ৭০ হাজার ফিট উপর থেকে রাশিয়ার পারমানবিক অস্ত্রভাণ্ডারে নজরদারি চালাতে বিশেষ ধরনের যুদ্ধবিমান বানানোর। কারণ, রেডার ও বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের হানা এড়ানো। ফিফটি ওয়ানে শুরু হয় ‘প্রজেক্ট অ্যাকুয়াটোন’। আট মাসে লকহিড মার্টিন তৈরি করল ‘ইউ-২’ গুপ্তচর বিমান। যদিও আইজেনহাওয়ার যা ভেবেছিলেন, দেখা গেল তার ধারেকাছেও পৌঁছতে পারেনি সোভিয়েত রাশিয়ার পারমাণবিক কার্যকলাপ। ১৯৬০ সালের ১ মে আবার উড়ল ইউ-টু। কিন্তু এবার পাইলট গ্যারি পাওয়ার সহ ইউ-টুকে ধরাশায়ী করল রাশিয়া। লকহিড মার্টিনকে পুনরায় আদেশ দেওয়া হল নজরদারির জন্য একটি প্লেন বানানোর। তা তৈরির আগেই ছড়িয়ে দেওয়া হয় ভিনগ্রহীদের কথা। শোনা যায়, সিআইএ-র তরফে দায়িত্ব দেওয়া হয় বব লাজার নামে এক ইউএফও তাত্ত্বিককে। লাজারের কাজই ছিল এরিয়া ফিফটি ওয়ানের বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্রের ছবিকে ইউএফও বলে চালানো।
সাম্প্রতিক ঘটনাবলি
শুরুটা হয়েছিল রহস্যময় একটি বেলুন ঘিরে। দক্ষিণ ক্যারোলিনার আকাশে চালকহীন অপরিচিত বস্তুটি নিয়ে শুরু হয় ভিনগ্রহী জল্পনা। পরে জানা যায়, এর নেপথ্যে রয়েছে বেজিং। শেষ পর্যন্ত মিসাইল ছুড়ে ‘রহস্যময়’ চীনা বেলুন ধ্বংস করে দেয় পেন্টাগন। বিষয়টি এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারত। কিন্তু হয়নি। গত ১০, ১১ এবং ১২ ফেব্রুয়ারি, তিনটি ‘ইউএপি’কে মিসাইল হানায় কুপোকাত করা হয়। প্রথমটি আলাস্কা, দ্বিতীয়টি কানাডার ইউকোন ও তৃতীয়টি উত্তর আমেরিকার গ্রেট লেকে। সবক’টিই সামরিক বাহিনীর অতি-স্পর্শকাতর এলাকা বলে চিহ্নিত। প্রথম দু’টি উড়ন্ত অপরিচিত বস্তু আকারে ছিল অনেকটা কোলবালিশের মতো। তৃতীয়টি বৃহদাকৃতির, অনেকটা টিক-ট্যাকের মত অষ্টভুজাকার। হোয়াইট হাউসের সংবাদ সচিব ক্যারন জিন-পিয়েরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এগুলির সঙ্গে ভিনগ্রহী যোগ থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন।
ইউএপি-র নজরদারির কথা শোনা গিয়েছে ভারতেও। ২০১৯ থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসেও দেখা মিলেছে আন্দামান-নিকোবরের কাছে। কৌশলগতভাবে গোটা অঞ্চলটাই ভারতীয় সেনার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন প্রশাসনের দাবি, ওই অঞ্চলে নজরদারি চালাতে রহস্যময় বেলুন উড়িয়েছিল চীন। ভারত অবশ্য তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। সরকার-প্রশাসন নীরব থাকলেও অনেকের মনেই ধন্ধ এখনও কাটেনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁদের অনেকেই প্রশ্ন করেছেন, কেন বারবার ইউএপি-র হদিশ মেলে অতি স্পর্শকাতর সামরিক বাহিনীর ঘাঁটি বা মজুত পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারের চৌহদ্দিতে?
‘আনআইডেন্টিফায়েড এরিয়াল ফেনোমেনা টাস্ক ফোর্স’ গঠন করেও খুব কিছু লাভ হয়নি। তাহলে কি আলোকবর্ষ দূরের ভিনগ্রহীরা জরিপ করে নিতে চাইছে ক্ষমতার দর্পে বলীয়ান মানুষের মেকি আত্মম্ভরিতার বহরকে? কালের গর্ভে লুকিয়ে এই প্রশ্নের জবাব।