সম্পত্তিজনিত মামলা-মোকদ্দমায় সাফল্য প্রাপ্তি। কর্মে দায়িত্ব বৃদ্ধিতে মানসিক চাপবৃদ্ধি। খেলাধূলায় সাফল্যের স্বীকৃতি। শত্রুর মোকাবিলায় সতর্কতার ... বিশদ
আজ মাস পয়লা। ১ কার্তিক, ১৪২৭। ক্যালেন্ডার থেকে আশ্বিনের পাতা ঝরে গিয়েছে। শরৎ নেই। আকাশের দিকে চোখ রাখা যায় না। মাটিতে রোদ্দুরের ছায়া। হেলে পড়া আলো আর বিষাদ। ঋতুর কি কোনও ভাবনা থাকে? মানুষ কি সৃষ্টি করে তাকে? দিয়েছে তো একটা করে নাম মাত্র। সে তো বিন্দু! তার ভিতর দিয়ে নিমেষে ফুরিয়ে যায় সময়। সেই পথেই চলে এসেছে হেমন্ত। ঋতুচক্রের কাব্যিক উপাখ্যান! সোনালি ধানের শিষ আর শরতের রেখে যাওয়া কাশফুলের উপর দিয়ে বইছে হাওয়া। অকালবোধনের। দোলায় দুলতে দুলতে বাপের বাড়ি আসছেন উমা। এলোমেলো হাওয়ায় মড়কের দুর্গন্ধ। এবারের মহালয়ায় রেডিও বেজে উঠেই থেমে গিয়েছে ৩৫ দিনের জন্য। থেমে থাকেনি জীবন। থেমে থাকেনি প্রার্থনা।
১৯ বছর পর... হেমন্তের আগমনি কখনও সুখবর বয়ে আনে, কখনও বিষ।
এর আগে এমনটা হয়েছিল ২০০১ সালে। সে বছর দেবী এসেছিলেন ঘোটকে। ফিরেছিলেন দোলায়। পরের বছরটা আমাদের মতো ধর্মনিরপেক্ষ দেশের ইতিহাসটা স্বস্তিদায়ক হয়নি। হিংসার আগুনে জ্বলেছিল গুজরাত। তার আগের বছর উমা স্বামীর ঘরে ফিরেছিলেন ঘোটকে। আর ২০০১ সাল চিহ্নিত হয়ে আছে পৃথিবীর ভয়ঙ্করতম জঙ্গি হামলার বছর হিসেবে। আর আমাদের দেশ? কেঁপেছিল ভয়াবহ ভূমিকম্পে। গুজরাতের ভুজ। আজ বিশ বিশ। পরিস্থিতি আরও জটিল। দেশ নয়, বিশ্বজুড়েই।
অথচ জানা ছিল না যে, তেমন তো নয়! প্রায় সব কিছুই লেখা মায়ের আগমন-গমনের নির্দিষ্ট শাস্ত্রের পাতায়। জ্যোতিষের অঙ্ক নয়, এই নিয়ম অমোঘ। সূত্র মেনে দেখা যাচ্ছিল একটু একটু করে এগিয়ে আসছে কালো দিনগুলি। তবু বিজ্ঞানের কাছে নতজানু আমরা... পাত্তা দিইনি। শাস্ত্র-ধর্মকে মগজ দখল ও হানাহানির অস্ত্রের বাইরে ভাবতেই পারা যায়নি। মেলানো সম্ভব হয়নি ১৯ বছরের অঙ্কটা। ইতিহাস এবং শাস্ত্র হাত ধরাধরি করে ফিরে আসছে। এবছরও। সবই দেখা যাচ্ছে, কিন্তু বিশ্বাস এখনও করতে পারছি কই!
কেন এই ১৯ বছরের অন্তর?
ঠিক এই সময়ের ব্যবধানে আশ্বিন হয় মল মাস। পুজো আসে কার্তিকে। হেমন্তের হাল্কা কুয়াশা ঢেকে দেয় শরতের আনন্দঘন আকাশ। সবই তিথি-নক্ষত্রের জটিলতা মাত্র। সূর্য ও চন্দ্র মাসের হিসেবে বঙ্গাব্দ চলে। বাঙালির উৎসব অনুষ্ঠান হয় দুই তিথি মেনেই। সেখানে এসে পড়ে দিনের সমস্যা। সূর্যের মাস গড়ে ৩০ দিনের। চাঁদের সেখানে ৩০টি তিথি শেষ হয় ২৭ থেকে সাড়ে ২৯ দিনে। প্রতি বছর গড়ে ১১ দিনের ফারাক। অঙ্কের হিসেব দেখলে আড়াই থেকে তিন বছরে ৩০ দিন বা এক মাস অতিরিক্ত থাকে। তা হলে তো পুজো সহ সব কিছুই এগিয়ে যেতে বাধ্য। এখানেই আসে অত্যন্ত জটিল এক হিসেব। আড়াই-তিন বছর অন্তর একটি মাসকে চিহ্নিত করে অতিরিক্ত দিনের হিসেব মুছে দেন শাস্ত্রজ্ঞরা। তাকেই বলে মল মাস।
পৌষ ছাড়া সব মাসই মল মাস হতে পারে। পরের বছর ফের নতুন করে তিথির হিসেব শুরু করা যায়। পঞ্জিকা অবশ্য আরেকটি হিসেবের কথা বলে। যে মাসে দু’টি অমাবস্যা বা পূর্ণিমা, সেটিই মল মাস। এই দুই অঙ্কেই ১৯ বছর অন্তর শারদোৎসব পিছিয়ে যায় কার্তিক মাসে। এবারেও আশ্বিনে অমাবস্যার সংখ্যা ছিল দুই।
১৯৮২ সালেও হেমন্তেই হয়েছিল পুজো। সেবার মায়ের আগমন ছিল গজে। গমন নৌকায়। আশঙ্কার পূর্বাভাস না থাকলেও এটি বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অন্যতম কালো বছর। কলকাতার বিজন সেতুতে ১৭ জন আনন্দমার্গীকে জীবন্ত জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনা ওই বছরই। কিংবা ভোপালে ইউনিয়ন কার্বাইডের গ্যাস কেলেঙ্কারির সূত্রপাত।
উনিশের হিসেব কষতে গেলে আসে যে মন্বন্তরের বছরও। ১৯৪৪। দুর্গাপুজো ছিল হেমন্তে। বাংলা সালের হিসেবে পঞ্চাশের মন্বন্তর। যে জ্বালার ছবি আমরা দেখতে পাই বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অশনিসংকেত’, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মন্বন্তর’, সুবোধ ঘোষের ‘তিলাঞ্জলী’তে।
থামেনি জীবন। সেবার... এবারও। দিন গড়িয়েছে, জীবনকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে স্বাভাবিকতার পথ ধরে হাঁটতে শুরু করেছে মানুষ। আতঙ্ক সঙ্গী করেই নেমেছে রাস্তায়।
আজকের প্রজন্ম না দেখলেও বাংলায় মহামারী তো নতুন ঘটনা নয়। আঠারো শতকের গোড়ায় কলকাতা সহ নিম্ন গাঙ্গেয় অববাহিকা উজাড় হয়ে গিয়েছিল ‘এশিয়াটিক কলেরা’য়। গোটা দেশে মৃত্যু হয়েছিল প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের। সংক্রমণ ছাপিয়ে যায় দেশের গণ্ডি। ঐতিহাসিকদের একাংশের ধারণা, কুম্ভমেলার ভিড় থেকে ছড়িয়ে ছিল সেই কলেরা। আজ দেবী দুর্গার বোধনের ঠিক চারদিন আগে। যা সতর্ক করে মানুষকে। আর মহামারীর সঙ্গে দেবদেবীর সম্পর্ক কিন্তু আজকের নয়। গুটিবসন্তের দেবী মা শীতলা, কলেরার ওলাইচণ্ডী। রোগকে ‘মায়ের দয়া’ বলতে অভ্যস্ত বাঙালি ভয় পায় শুধু দেবীকেই। রোগকে নয়। দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের দখলদারিও এই বিশ্বাস টলাতে পারেনি। করোনা কিন্তু পেরেছে। ডাক্তার ছাড়া গতি নেই সকলেই জানেন। তবু মনের মধ্যে জিতে যায় পুজোয় আনন্দ করার ইচ্ছা। ঢাকে কাঠি পড়লেই, ঘরে বসতে জানে না বাঙালি।
অথচ আমাদের তো আগেই সতর্ক হওয়ার কথা ছিল। এমন দিন যে আসবে গত বছর জেনে গিয়েছে আম বাঙালি। গতবার উমার আগমনেই যে শোনানো হয়েছে অনাগত শোকগাথা। উন্মাদনার আড়ালে সে সব নিয়ে ভাবার সময় কতটুকু। পঞ্জিকা মতে, গতবার দেবী এসেছিলেন ঘোটকে। বিদায়ও ছিল চপলমতি অশ্বেই। শাস্ত্র বলছে, একই যানে দেবীর আগমন ও গমনের ফল আগামী বছরের জন্য অশুভ সঙ্কেত। তার মধ্যে ঘোড়া ছটফটে প্রাণী। সে যখন যায়, সব কিছু ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ফলে ফসল নষ্ট, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারী ও রাজনৈতিক অস্থিরতা অনিবার্য। ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল এখানেই। করোনা মহামারী, উম-পুন, সীমান্তে যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক হানাহানি—একে একে হাজির তারা।
শাস্ত্র বলছে এই সব বিপদ থেকেও রক্ষা করবেন মা দুর্গাই।
দৈত্যনাশার্থবচনো দকারঃ পরিকীর্তিতঃ।
উকারো বিঘ্ননাশস্য বাচকো বেদসম্মত।।
রেফো রোগঘ্নবচনো গশ্চ পাপঘ্নবাচকঃ।
ভয়শত্রুঘ্নবচনশ্চাকারঃ পরিকীর্তিত।।
‘দ’ অক্ষর দৈত্যনাশক, ‘উ’-কার বিঘ্ননাশক, ‘রেফ’ রোগনাশক, ‘গ’ অক্ষর পাপনাশক ও ‘আ’-কার ভয়-শত্রুনাশক। দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ ও ভয়-শত্রুর হাত থেকে যিনি রক্ষা করেন, তিনিই দুর্গা। সিংহবাহিনী। পশুরাজের পিঠে চড়েই মহিষাসুরের বধ্যভূমিতে তাঁর প্রবেশ। কিন্তু সে তো যুদ্ধং দেহি রণসাজ। সে সাজ স্বেচ্ছায় বেছে নেননি তিনি। দেবতারাই তাঁকে সাজিয়ে তুলেছিলেন অসুর বধের অস্ত্রে, ভূষণে। কালিকা পুরাণ অনুসারে, দুষ্ট অসুরকে দমন করতে মা দুর্গাকে সাহায্য করেছিলেন সিংহরূপী বিষ্ণু। তাই বাহন হলেও তাঁর পিঠে চেপে মর্ত্যে আসেন না দেবী। মার্কণ্ডেয় পুরাণ বলছে, দুর্গাকে এই সিংহ দেন হিমালয়। শাস্ত্রমতে পশুরাজ সর্বশক্তির অধিকারী হলেও দুর্গার পদতলে তাঁর স্থান। দেবীর ডান পা থাকে সিংহের পিঠে এবং বাঁ পায়ের শুধুমাত্র বৃদ্ধাঙ্গুল মহিষরূপী অসুরের পিঠে। দেবীর এই ভঙ্গিমার অর্থও আলাদা আলাদা। বাহন সিংহের পিঠে পা রাখার অর্থ স্নেহ। অন্যদিকে দেবীর শক্তির কাছে তুচ্ছ অসুর। তাই তাকে আটকানোর জন্য বাঁ পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠই যথেষ্ট। মহাষষ্ঠীর রাতে মণ্ডপে দেবী প্রতিমার প্রাণ প্রতিষ্ঠার আগে বাহন সিংহকে পৈতে পরানোর রীতি রয়েছে। প্রথমে ধ্যানমন্ত্রের মাধ্যমে ফল-মিষ্টি দিয়ে নৈবেদ্য দেওয়া হয়। এরপর আরতি শেষে সিংহকে পরানো হয় পৈতে। এই উপাচারের পরই সপ্তমীতে হয় নবপত্রিকার স্নান।
কিন্তু এ তো মহামায়ার আরাধনা। বাপের বাড়ি আসার সময় উমা আসেন সাধারণের মতোই। গজ (হাতি), নৌকা, দোলা এবং ঘোড়ায়। প্রধান শাক্ত ধর্মগ্রন্থ দেবীভাগবত পুরাণেও এই কথা আছে। কিন্তু কেন দেবী প্রতি বছর ঘরে ফেরার জন্য এই চারটি মাধ্যম বেছে নেন, এ ব্যাখ্যা সেখানে সঠিকভাবে মেলে না। পুরাণ আসলে যুদ্ধং দেহি মহামায়ার শক্তির জয়গাথা। তিনি দুর্গা, তাঁর মধ্যেই সৃষ্টির আদি এবং অন্ত। এখানে দেবী স্পষ্ট ঘোষণা করেছেন – ‘আমিই প্রত্যক্ষ দৈবসত্ত্বা, অপ্রত্যক্ষ দৈবসত্ত্বা, এবং তুরীয় দৈবসত্ত্বা। আমি ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব; আবার আমিই সরস্বতী, লক্ষ্মী ও পার্বতী। আমি সূর্য– নক্ষত্ররাজি, আবার আমিই চন্দ্র। আমিই সকল পশু ও পাখি। আবার আমি জাতিহীন, এমনকী তস্করও। আমি ভয়াল কর্মকারী হীন ব্যক্তি; আবার আমিই মহৎ কার্যকারী মহামানব। আমি নারী, আমি পুরুষ, আমিই জড়।’ ইনি আমাদের ঘরের মেয়ে উমা নন। তাই পিতৃগৃহ, মর্ত্যলোকে যাতায়াতের মাধ্যম তাঁর প্রয়োজন হয় না।
সাধারণভাবে চান্দ্র মাসের শুক্লা সপ্তমী তিথিতে দুর্গাপুজো আরম্ভ এবং শুক্লা দশমীতে বিসর্জন হয়। জ্যোতিষ মতে ওই দিন দু’টিতে তিথি-গ্রহ-নক্ষত্রের সমাবেশ অনুযায়ী বিশেষ গণনার দ্বারা দেশের বাৎসরিক ভাগ্য নির্ণয় করা যায়। অনেকটা রাশিফলের মতোই, একেকটি তিথিতে একেক রকমের দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে হয় আমাদের। সৃষ্টি আর লয়ের ভারসাম্য রক্ষায় দেবীর এই লীলা।
দেবী কোন বাহনে আসছেন, সেই সম্পর্কে সহজ একটি শ্লোক রয়েছে। ‘রবৌ চন্দ্রে গজারূঢ়া, ঘোটকে শনি ভৌময়োঃ,/ গুরৌ শুক্রে চ দোলায়াং নৌকায়াং বুধবাসরে।’ রঘুনন্দন ভট্টাচার্য রচিত ‘দুর্গোৎসব তত্ত্ব’ বলছে, সপ্তমী এবং দশমী যদি রবি এবং সোমবার পড়ে, তাহলে দুর্গার আগমন ও গমন হবে গজে। ঠিক এই রকমই শনি ও মঙ্গলবারে দেবীর মর্ত্যে প্রবেশ-প্রস্থানের মাধ্যম ঘোটক। বুধবারে নৌকায় আসেন উমা। বৃহস্পতি ও শুক্রবারে তাঁর বাহন হয় দোলা। দেবীর এই আসা-যাওয়াতেই লুকিয়ে থাকে শুভ ও অশুভের ইঙ্গিত। এতে অবশ্য বাস্তব একটি সংযোগও রয়েছে। দেবী আসছেন কৈলাস থেকে। পর্বতসঙ্কুল পথে। যেখানে রথ বা অন্য কোনও যান চলা সম্ভব নয়। তাই হাতি, ঘোড়া, দোলা বা পালকি প্রয়োজন। আর রয়েছে নদীপথ। সে পথও বেছে নেন উমা। আবার অনেকের বিশ্বাস, দুর্গাপুজো যেহেতু সামাজিক উৎসব, তাই দেবীর যান হিসেবে হাতি, ঘোড়া, নৌকো বা দোলাকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। সম্ভবত মর্ত্যের তৎকালীন যানবাহনগুলিকে সামাজিক স্বীকৃতি দিতেই। জ্যোতিষশাস্ত্র মতে, গজে চ জলদা দেবী শস্যপূর্ণা বসুন্ধরা। মায়ের গজে আগমন বা গমনে শস্যশ্যামলা হয় বসুন্ধরা। সর্বত্র সুখ বিরাজ করবে। যা মূলত হাতির বৈশিষ্ট্য। ঘোড়া যে স্বভাবেই চঞ্চল। তাই এর প্রভাব ‘ছত্রভঙ্গস্তুরঙ্গমে’। ঘোটকের চপলতাই ধ্বংসের কারণ হয়ে ওঠে অন্যের। সামাজিক, আর্থিক, রাজনৈতিক এবং সংসারে অস্থিরতা দেখা দেয়। রোগজ্বালা-ব্যাধি-অরাজকতা আসে। নৌকায় সেই গতি নেই। কিন্তু তা টলমল পরিস্থিতির প্রতীক। ‘শস্যবৃদ্ধিস্তুথাজলম! বা ‘নৌকায়াং শস্য বৃদ্ধিশ্চ সুজলাশ্র ভবেদ্ভুবম’। শস্য বৃদ্ধির মতো শুভ ফলের পাশাপাশি প্লাবন, অতিবৃষ্টি বয়ে আনে নৌকা। দোলা আনে মড়ক-মহামারি-ব্যাধি। দোলার ভার বইতে হয় বাহকদের। সৃষ্টির ভার দুঃসহ। ‘দোলায়াং মরকং ভবেৎ’। মৃত্যু অনিবার্য।
এবার উমার ‘দোলা’য় আগমন এবং ‘গজে’ গমন। জ্যোতিষ আর পঞ্জিকা মতে মড়ক, অস্থিরতা লেগেই থাকবে। কিন্তু দেশের শস্য ও জল ভাণ্ডার থাকবে পূর্ণ। হয়তো কিছুটা কাটবে আর্থিক সঙ্কট। শাস্ত্র মানুন বা নাই মানুন, সেই আশায় বুক বাঁধতে ক্ষতি নেই। মা কখনও সন্তানদের অমঙ্গল সহ্য করতে পারেন না। শ্রী শ্রী চণ্ডীতে তো দেবী নিজেই বলেছেন, ‘ইত্থং যদা যদা বাধা দানবোত্থা ভবিষ্যতি।/ তদা তদাবতীর্যাহং করিষ্যাম্যরিসংক্ষয়ম্।’ এইভাবে যখনই দানবগণের প্রাদুর্ভাববশত বিঘ্ন উপস্থিত হবে, আমি আবির্ভূতা হয়ে দেবশত্রু বিনাশ করব। দানব কি একটি? না। মানবতার শত্রু প্রত্যেকেই যে দানব... অসুর। মহিষাসুর প্রতীক মাত্র। বছরের পর বছর আমরা সেই প্রতীকী নিধনের সাক্ষী থাকি... উৎসব পালন করি। কিন্তু তারপরই যে ভুলে যাই! মানবদেহের প্রবৃত্তি যখন প্রকৃতির নিয়ম-বিধি এবং স্নেহকে ধূলিসাৎ করে সমাজের দিকে তার দাঁত-নখ বের করে, তখনই জন্ম হয় অসুরের। যুগে যুগে। কখনও জাতপাতের নামে, কখনও ধর্ম, কখনও সীমান্ত সন্ত্রাসের নামে। চেহারা বদলে যায় তাদের, বদলায় না চরিত্র।
তাই অপেক্ষা... মায়ের। প্রার্থনা একটাই—অসুর বিনাশ। দুর্গাপুজো মহামারী কাটাবে... আশায় বুক বেঁধেছে তামাম বাঙালি। প্রবল পরাক্রান্ত মহিষাসুর যে নানা রূপে প্রকট। তাকে বধ করার জন্য বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সম্মিলিত শক্তির উন্মেষ। যেমন সকল দেবতার প্রয়োজনে আবির্ভাব হয়েছিল দুর্গার। আজও সেই প্রয়োজন মেটেনি। হোক না বাঙালির ঘরের মেয়ে, অসুর নিধনে দুর্গার কোনও বিকল্প নেই...
‘প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমন-বার্তা’
জাগো, জাগো... উমা। প্রার্থনা এই একটিই।
ছবি : ইন্দ্রজিৎ রায়
গ্রাফিক্স : সোমনাথ পাল
সহযোগিতায় : স্বাগত মুখোপাধ্যায়