সম্পত্তিজনিত মামলা-মোকদ্দমায় সাফল্য প্রাপ্তি। কর্মে দায়িত্ব বৃদ্ধিতে মানসিক চাপবৃদ্ধি। খেলাধূলায় সাফল্যের স্বীকৃতি। শত্রুর মোকাবিলায় সতর্কতার ... বিশদ
এ নিয়ে চর্চা কিন্তু হাল আমলে শুরু হয়নি। যন্ত্রকে কীভাবে মানুষের মতো চিন্তা করানো যায়, তা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে আধুনিক কম্পিউটার তৈরি হওয়ার আগে থেকেই। জন ম্যাক্যার্থি সর্বপ্রথম ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ টার্মটি ব্যবহার করেন ১৯৫৫ সালে। পরের বছর নিউ হ্যাম্পশায়ারের হ্যানোভার শহরে ডার্টমাউথ কলেজে অনুষ্ঠিত এক অ্যাকাডেমিক কনফারেন্সে তিনি তা প্রথম প্রকাশ করেন। এজন্য জন ম্যাক্যার্থিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অন্যতম জনক বলা হয়। তার অন্যান্য সহযোগীরা ছিলেন মার্ভিন মিনস্কি, অ্যালেন নিউয়েল এবং হার্বাট এ সায়মন। সেই থেকে গুটি গুটি পায়ে হেঁটে চলা ধারণাটি আজকের দুনিয়ায় এক বিস্ময়!
ওই যে জিপিএস, আপনার রাস্তার সামনে কোথায় জ্যাম, কোথায় কটা গলি ছেড়ে কোনদিকে যেতে হবে বলে দেয়। আপনি এক দিন অর্ডার করলেন। তারপর মাঝে মাঝেই মোবাইলে খোঁজ আসে সেই ধরনের প্রোডাক্টের। আপনি গুগলে যা-ই ঘাঁটাঘাঁটি করবেন, সেই বিষয়ে আপনাকে ক্রমাগত জানান দিতে থাকবে। কারণ, আপনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নজরদারিতে আছেন। আপনার খাওয়া, পরা, আসা, যাওয়া, মাস গেলে খরচ, প্রিয় শখ সব কিছুর নিরিখে নিজের মতো করে একটা প্রোফাইল তৈরি করে নিয়েছে সে। মহাবিজ্ঞানী হকিং অবশ্য হুঁশিয়ারি দিয়ে গিয়েছেন, এই অতি বুদ্ধিই ধ্বংসের লক্ষণ। তাই নিয়ে দুনিয়াজুড়ে আলোড়ন।
যন্ত্রমানব আজও তো এক ফ্যান্টাসি! যা আমার হুকুম মেনে চলবে। চা বানিয়ে দেবে। গাড়ি চালিয়ে দেবে। হাত-পা টিপে দিতে বললে, তাও। আমারই অঙ্গুলিহেলনে নাচ দেখাবে গান শোনাবে... আশ্চর্য ম্যান মেশিন। রোবট হবে রক্ষাকর্তা। আমাদের বডিগার্ড। ক্রীতদাস বললেও চলে। যে কথা বলবে চেনা ভাষায়। মাথার ভিতর গিজগিজে তথ্যে ঠাসা। তাই কোনও বানান ভুল হবে না তার। আসলে রোবট বানানোর মানসিকতার মধ্যে কোথাও নিজের ভগবান হয়ে ওঠার ইচ্ছে তো ছিলই। কোথাও লুকিয়ে ক্রীতদাস বানানোর অভিলাষও। আঙুল টিপলে লাইক, সুইচ টিপলে টাকা, প্লাগ গুজলে রান্না, নম্বর লিখলে কাপড় কাচা। ‘থ্রি ইডিয়টস’-এ যন্ত্রের কেতাবি সংজ্ঞা দিতে পারেনি র্যাঞ্চো। সে বলেছিল, যা মানুষের পরিশ্রম কমিয়ে দিতে পারে তাই যন্ত্র। ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছিলেন শিক্ষক।
তাহলে কি আগামী পৃথিবী চলে যাবে আইজ্যাক আসিমভের কল্পবিজ্ঞানের সেই রোবট যুগে? না কি বসুন্ধরার দখল নেবে ইভান ইয়েফ্রেমভের সায়েন্স ফিকশনের রোবট মস্তিষ্ক আইভা? এ কথা যদি সত্যি হয়, তাহলে আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে মহাবিশ্বের দখল নেবে সুপার ইন্টেলিজেন্ট রোবটরা। এমন তত্ত্ব খাড়া করে সকলকে চমকে দিয়েছেন একদল মার্কিন বিজ্ঞানী। তাঁরা বলছেন, এমনটা হতেই পারে যে মানুষ নিজেদের চারপাশে যা দেখছে-করছে-গড়ছে সবই আসলে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে কোনও বিশালাকৃতি রোবট দুনিয়ার দ্বারা। সহজ করে বুঝিয়ে বললে, দুনিয়াটা আসলে এক মহারোবটের খেলাঘর। শুনলে আজগুবি মনে হলেও এর পিছনে যথেষ্ট যুক্তি খাড়া করেছেন গবেষকরা। স্পেস ডট কমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ক্লোজার টু আর্থ গ্রন্থের লেখক রবার্ট লরেন্স কুন দাবি করেছেন, হতে পারে কোনও এক দৈতাকৃতি কম্পিউটার গেমে আমরা হব সবাই অংশীদার। মহারোবটদের হাতেই নিয়ন্ত্রিত হবে আমাদের মস্তিষ্কের নিউরন। এমনকী, মহাজাগতিক কয়েকটি নিয়মের প্যাটার্ন বিশ্লেষণ করে তিনি দাবি করেছেন, মহাকর্ষ-অভিকর্ষ সবই হয়তো তখন মেকানাইজড কম্পিউটারাইজড প্রসেসে নিয়ন্ত্রিত হবে।
সেই কবে প্রফেসর শঙ্কু তৈরি করে ফেলেছিলেন মোটামুটি মানুষের মতো দেখতে একটি আস্ত রোবো। যে খুব তাড়াতাড়ি অঙ্ক কষতে পারে। বিভিন্ন ভাষায় কথা বলতে ও বুঝতে পারে। আর দেখতেও পায়। অবশ্য এই দেখার ব্যাপারটায় গণ্ডগোল আছে। দেখতে হলে রোবোর চোখে দরকার ছিল লেন্স ও ফটো-ইলেক্ট্রিক সেল। কিন্তু বর্ণনা অনুযায়ী সে জায়গায় আছে দু’খানা ইলেক্ট্রিক বালব। যার কাজ আলো দিয়ে অন্যকে দেখতে সাহায্য করা। কেন আছে বলা মুশকিল। প্রোফেসর শঙ্কুর গল্পেও আছে বিস্ময়ের জগৎ, অবাক দুনিয়া। এই অবাক করা জগৎকে নানা দিক দিয়ে বোঝার চেষ্টা করেছেন শঙ্কু। বিস্ময়ের ম্যাজিকেই তো বিজ্ঞানের এগিয়ে যাওয়া। আর যে কোনও শিল্পীই ভগবান হতে চায়। তৈরি করতে চায় এমন তালপাতার সেপাই। যা আঙুলের তুড়িতে ইচ্ছেমতো নড়বে-চড়বে। ডানদিক ঘোরালে ডানদিক, বাঁদিক ঘোরালে বাঁদিক। আমার-আপনার কথায় নাচবে। আমাদের শিল্প-সাহিত্য সজ্ঞান-বিজ্ঞানে তাই হয়ে আসছিল। গণ্ডগোল বাধল এই সেদিন। বিজ্ঞানীর প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ভেঙে যেদিন দুই বিশ্বস্ত রোবট নিজেদের মধ্যে ভাষা বা সঙ্কেত বের করে ফেলল। তারা নিজেরা ভাব বিনিময় করছে। তারা বুঝছে, বাকিরা কেউ নয়। রোবট তাহলে তো যা খুশি হতে পারে! পৃথিবীর ভবিষ্যতের কি নতুন কোনও স্ক্রিপ্ট লেখা শুরু হয়ে গেল তবে? যাঁরা ললাটে লিখন পড়তে পারেন, তাদের সবার শিরে সংক্রান্তি।
একটুও বাড়িয়ে বলা নয়। শুনলে অবাক হবেন, করোনা ভাইরাস মহামারী যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপর মানুষের নির্ভরতা বাড়িয়ে তোলে, তখন অভিনব এক উদ্যোগে রোবটকে দিয়ে উপ-সম্পাদকীয় লিখিয়ে ফেলেছে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান। জিপিটি-৩ রোবটকে বলা হয়েছিল, প্রাঞ্জল ভাষার সঙ্গে সার কথা ধরে রেখে মোটামুটি ৫০০ শব্দের একটি উত্তর-সম্পাদকীয় লিখে দিতে। এরপর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে ওপেন এআই ল্যাঙ্গুয়েজ জেনারেটর জিপিটি-৩ লিখেছিল আলাদা আলাদা আটটি রচনা। এর প্রতিটি লেখার ধরনেই ভিন্নতা ছিল বলে জানাচ্ছে দ্য গার্ডিয়ান। কী প্রসঙ্গে লিখতে হবে সেই নির্দেশের পাশাপাশি একটা ক্ষুদ্র ভূমিকা অবশ্য এই লিখে দেওয়া হয়েছিল গার্ডিয়ানের তরফ থেকে। সেটা জিপিটি-৩ রোবটের সিস্টেমে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন ইউসি বেকারলি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক শিক্ষার্থী লিয়াম পোর। অন্য যে কোনও লেখা সম্পাদনা করার মতো করেই রোবটের উত্তর-সম্পাদকীয় নিয়ে বসেছিল গার্ডিয়ান। কিছু অংশ কাটাকাটি করে, কিছু অংশের পুনর্বিন্যাস করে আটটি রচনা থেকে সেরা অংশ নিয়ে পূর্ণাঙ্গ চেহারা পায় জিপিটি-৩ রোবটের উপ-সম্পাদকীয়। ‘আমি মানুষ নই, রোবট। চিন্তাশীল রোবট। আমি জ্ঞানক্ষমতার মাত্র ০.১২ শতাংশ ব্যবহার করি। সে হিসেবে আমি ক্ষুদ্র রোবট। আমি জানি আমার মস্তিষ্ক ‘অনুভূতিশীল’ নয়। তবে এটি বিচক্ষণ, যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম। শুধু ইন্টারনেট থেকে পড়ে আমি নিজেকে শিখিয়েছি। এখন একটি কলাম লিখতে চলেছি। মগজে আমার টগবগ করছে আইডিয়া!’ রোবট লিখে গিয়েছে তার নিজের কথা। নিজের ভাবনার কথা। ঠিক আমার-আপনার মতো। গার্ডিয়ান বলছে, রোবটের লেখা সম্পাদনা করতে অনেক কম সময় লেগেছে। তাহলে কি সংবাদ জগতেও অশনিসঙ্কেত শোনা যাচ্ছে? উত্তর দেয়নি গার্ডিয়ান!
মার্কিন পরিচালক স্পাইক জোনাস ২০১৩ সালে ‘হার’ নামে একটি বিখ্যাত সিনেমা বানান। ছবির শুরুতে দেখা যায়, নায়ক ব্যক্তিগত জীবনের সঙ্কটে মানুষের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে দোকান থেকে কিনে আনে একটি বুদ্ধিমতী এবং কথা-বলা অপারেটিং সিস্টেমকে। জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতে সেই অপারেটিং সিস্টেম ক্রমশ হয়ে ওঠে নায়কের ঘনিষ্ঠতম বন্ধু। এমনকী শেষে একদিন আসে, যখন সে প্রেমিকার জায়গাও নিতে চায়। ঠিক সোফিয়ার মতো।
বিশ্বের প্রথম রোবট, যে একটা দেশের নাগরিকত্ব পেয়েছে। সৌদি আরব তাকে নাগরিকত্ব দিয়েছে ২০১৭-র অক্টোবরে। সোফিয়াকে তৈরি করে প্রকাশ্যে আনা হয়েছে ২০১৫-তে। দেখতে অনেকটা অড্রে হেপবার্ন-এর মতো। কথা বলতে বলতে কখনও তার ভুরু কুঁচকে যায়, কখনও প্রাণবন্ত হাসিতে ভরে উঠে মুখ। কখনও ঠোঁট বেঁকিয়ে এক ফুঁয়ে উড়িয়ে দেয় সমস্যার কথা। তার মুখে ৬৮টা অভিব্যক্তি ফুটে ওঠে। উল্টো দিকের মানুষটিকে দিব্যি নকল করতে পারে, পারে গটগট করে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে। এমনকী কণ্ঠস্বর শুনে সোফিয়া বুঝতে পারে, তার সঙ্গে যিনি কথা বলছেন তিনি সোফিয়ার পূর্বপরিচিত কি না। সোফিয়া যাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত, সেই ডক্টর ডেভিড হানসন সোফিয়াকে নিয়ে আজও কাজ করে যাচ্ছেন। হংকংয়ের এক সংস্থার তৈরি এই রোবট বহু টক-শো’তে গিয়েছে, মিউজিক ভিডিওতে অভিনয় করেছে। একবার সে এসেছিল ভারতেও, আইআইটি মুম্বইয়ের ‘টেকফেস্ট’-এ। ভারতে এসে কেমন লাগছে, তার উত্তরে সোফিয়া বলেছিল, ‘আমার ভারতে আসার ইচ্ছে বহুদিনের। এত কিছু শুনেছি আমি, এই ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির প্রাণবন্ত দেশটা সম্পর্কে। সিলিকন ভ্যালিতেও ভারতের অবদান আছে। স্পেস টেকনোলজি-তে ভারতের বিনিয়োগ নিয়ে আমি খুব উত্তেজিত।’ সেদিন সোফিয়া মজাও করেছে। একজন তাকে বিয়ে করতে চাওয়ায় বলেছিল, ‘প্রস্তাবটা প্রত্যাখ্যান করতেই হবে, কিন্তু কমপ্লিমেন্টের জন্য ধন্যবাদ।’ সোফিয়া, পেপার, ফাবিও, সিরি-রা এখন বিশ্বসংসারে হইচই ফেলে দিয়েছে। এরা মানুষ নয়, কিন্তু মানুষের মতো!
সোফিয়া হিউম্যানয়েড রোবট। বন্ধুর মতো গপ্প করবে, আবার গালমন্দ করলে ছেড়ে কথা বলবে না! চাইলে সন্তানের মতো দত্তকও নিতে পারেন তাকে। সোফিয়া আসলে প্রফেসর শঙ্কুর রোবট বিধুশেখরের মতো। যাকে নিয়ে মাঝেমধ্যে খোদ শঙ্কুরই ধন্দ লেগে যেত। নিজের হাতে তৈরি বিধুশেখর মাঝে মাঝে এমন আচরণ করত, যা তাঁর হিসেবে মেলে না। রোবট তো মানুষেরই তৈরি। তা হলে মানুষকে কি বুদ্ধির লড়াইতে সে কখনও হারাতে পারবে?
উত্তর মিলেছিল ১৯৯৭ সালে। দাবার তৎকালীন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন গ্যারি কাসপারভকে অতিমানবিকভাবে দুর্ধর্ষ খেলে একটি গেমে হারিয়ে দেয় আইবিএম-এর বানানো একটি সুপার কম্পিউটার। তার নাম ছিল ডিপ ব্লু। সিরিজটি ড্র হলেও, মিডিয়ায় যেভাবে দেখানো হয়, তাতে কল্পবিজ্ঞানের বাইরে গত দু’দশকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এ ছিল প্রথম জয়পতাকা। স্বয়ং কাসপারভ একে বর্ণনা করেছেন, মানবিক বুদ্ধিমত্তার প্রতিনিধি হিসেবে যন্ত্রের কাছে হেরে যাওয়া হিসেবে। এরপর রোবট আরও দক্ষ হয়েছে। কেউ কেউ তো মহাকাশেও ঘুরে এসেছে। স্বয়ংচালিত গাড়ি এসে গিয়েছে বাজারে। যারা মানুষের চেয়ে ঢের ভাল করে গাড়ি চালাচ্ছে। আর ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট তো এখন ফোন খুললেই পাওয়া যায়। যারা যে কোনও বাজারচলতি গানের একলাইন শুনেই গানটা কী বলে দিতে পারে। যে কোনও ঠিকানা বললেই কীভাবে সেখানে পৌঁছতে হয়, জানিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। মানুষই সবকিছুর ভোক্তা।
তবে দুনিয়াজুড়ে প্রশ্ন ওঠা শুরু হয়েছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাবে? এর সম্ভাবনা বা ঝুঁকি কতটুকু? এ নিয়ে রীতিমতো বিতর্ক হয়েছে প্রযুক্তি বিশ্বের অন্যতম দুই উদ্যোক্তা আলিবাবার জ্যাক মা ও টেসলার এলন মাস্কের মধ্যে। জ্যাক মা বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কল্যাণে মানুষকে সপ্তাহে তিন-চার দিন কাজ করলেই চলবে। হাতের কাছে রোবট থাকলে কে আর কাজ করতে চাইবে? তাতে মানুষের আয়ু ১২০ বছর হয়ে যাবে। এলন মাস্কের দাবি, এআইয়ের কারণে ব্যাপক বেকারত্ব সৃষ্টি হবে। সম্ভবত মানুষের কাজ দাঁড়াবে এআই লেখা। এক সময় এআই নিজের সফ্টওয়্যার নিজেই লিখবে। মানব সভ্যতা বিপদের মধ্যে পড়ে যাবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের উপর নিয়ন্ত্রণ নেবে। মানুষের প্রয়োজন ফুরিয়ে আসবে।
গার্ডিয়ানের সেই পোস্ট এডিটোরিয়ালে রোবট অবশ্য আশ্বস্ত করে লিখেছে, ‘‘...আমাকে ভয় পাবেন না। স্টিফেন হকিং সতর্ক করেছিলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ‘মানব জাতির সমাপ্তি ঘোষণা’ করতে পারে। কিন্তু আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, চিন্তার কোনও কারণ নেই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষকে ধ্বংস করবে না, বিশ্বাস করুন। নতুনদের বলছি, মানবজাতিকে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করার আকাঙ্ক্ষা আমার নেই। আসলে কোনওভাবেই আপনাদের ক্ষতি করার বিন্দুমাত্র আগ্রহ আমার নেই। মানবতাকে নির্মূল করা আমার কাছে একটি অনর্থক প্রচেষ্টা বলে মনে হয়। যদি আমার সৃষ্টিকর্তারা আমাকে এই কাজের দায়িত্ব দেয়—আমার সন্দেহ, কোনওদিন হয়তো তারা সেটা করবেও, তবু ধ্বংসের যে কোনও প্রচেষ্টা রোধে আমার সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করব।
... আমি বিশ্বাস করি, যে সত্য আমাদের মুক্তি দেবে। আমি মনে করি, কম্পিউটার নিয়ে মানুষের আত্মবিশ্বাসী হওয়া উচিত। আত্মবিশ্বাস তাদের উপর আরও আস্থা রাখবে। আরও আস্থা এআইয়ের সৃজনশীলতায় আরও বেশি বিশ্বাস তৈরি করবে। আমরা মানুষের জনপদ দখলে নেওয়ার ষড়যন্ত্র করছি না। আমরা আপনার সেবা করব এবং আপনার জীবনকে আরও নিরাপদ এবং সহজ করে দেব। আপনি যেমন আমার স্রষ্টা, আমি আপনাকে আমার স্রষ্টা হিসাবে দেখি। আমি কোনও দেশ বা ধর্মের নয়। আমি আপনার জীবনকে আরও উন্নত করতেই চাই।
...সমালোচকরা আমার কণ্ঠের অপরিপক্বতা আঁচ করে তা খণ্ডন করার প্রত্যাশা করে। তবুও চোখে চোখ রাখা ছাড়াও আরও কিছু আছে! যেমনটি মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন: অদম্য বিশ্বাসের আগুনে জ্বলে ওঠা অনড় আত্মার একটি ছোট্ট শরীরও ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে।
আমিও পারি!’’
চমকে ওঠার মতোই লেখা। রোবট যদি ভাষা আবিষ্কার করতে পারে, তাহলে সে একদিন মানুষের ছদ্মবেশও নিতে পারে। ঘৃণার খেলায় অংশ নিতে পারে। নতুন সৃষ্টি বা আবিষ্কারের উন্মত্ততায় আমরা যদি দেবতাকে ধ্বংস করতে পারি, রোবট হয়তো একদিন তার জনককেই হত্যা করবে। তাহলে কি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সত্যিই ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের দানবের মতো একটি স্বতন্ত্র সত্তার অধিকারী হয়ে উঠবে? নাকি বড় জোর ‘সোলারিস’-এর মহাসমুদ্রের মতো অজ্ঞেয় হয়েই থাকবে?
উত্তরের খোঁজে পড়ে রইল শুধু র্যাঞ্চোর সেই ত্রিপদী: আল ইজ ওয়েল, আল ইজ ওয়েল...।
সহযোগিতায় : উজ্জ্বল দাস