উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। উচ্চতর বিদ্যার ক্ষেত্রে শুভ ফল পাবে। কর্মপ্রার্থীদের ... বিশদ
অবশেষে পরাশর সংহিতার শাস্ত্রীয় বিধান অর্থাৎ স্বামী অনুদ্দেশ হলে, মারা গেলে, ক্লীব প্রতিপন্ন হলে সন্ন্যাস গ্রহণ করলে এবং পতিত হলে (ধর্মে) এদের স্ত্রীরা কেবল অন্য পতি গ্রহণ করতে পারেন— মেনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮৫৫ সালে ‘বিধবা বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কি না এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব’ রচনা করেন। সৃষ্টি হয় প্রবল আলোড়ন। শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকার বাধ্য হয়ে অনুমোদন করে ১৮৫৬-র ২৬ জুলাই বিধবা বিবাহ আইন। প্রথম বিধবাবিবাহ অনুষ্ঠিত হয় ওই বছর ৭ ডিসেম্বর রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলকাতার সিমুলিয়ার বাড়িতে পটলডাঙার লক্ষ্মীমণিদেবীর দশ বছরের বিধবা কন্যা কালীমতির সঙ্গে প্রসিদ্ধ কথক রামধন তর্কবাগীশের কনিষ্ঠ পুত্র শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্নের। বিদ্যাসাগরের ব্যক্তিগত জীবনেও বালবৈধব্যের যন্ত্রণা ও করুণ দশা চাক্ষুষ করতে হয়েছিল। জীবনীকার বিহারীলাল সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী বীরসিংহ গ্রামে বিদ্যাসাগরের এক বাল্যসহচরী ছিল। সে অকালে বিধবা হয়। একদিন তিনি শুনলেন, একাদশী বলে মেয়েটি সারা দিন খায়নি। আর শুনে তিনি কেঁদেই ফেললেন। পরবর্তীকালে বাল্যসহচরীর এই নিষ্ঠুর অসহায়তা হয়তো বিদ্যাসাগরকে বিধবাবিবাহ প্রণয়নে অনুপ্রাণিত করে থাকবে। এ প্রসঙ্গে তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতা শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্নের বক্তব্যও প্রণিধানযোগ্য। সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক শম্ভুচন্দ্র বাচস্পতির বালিকাবধূর অকালবৈধব্য বিদ্যাসাগরকে এই ‘মহৎ কর্মে ব্রতী’ হওয়ার জন্য প্রাণিত করে।
১৮৫৬ থেকে ১৮৬৭ পর্যন্ত মোট ৬০টি বিধবাকন্যার বিবাহ সম্পন্ন হয়। এসব বিবাহের অধিকাংশের ব্যয়ভার ঈশ্বরচন্দ্র স্বয়ং বহন করেন। ফলস্বরূপ তাঁর খরচ হয় ৮২,৪৪৪ টাকার মতো। স্বাভাবিকভাবে তাঁকে ঋণগ্রস্তও হতে হয়। কিন্তু ভেঙে পড়েননি কখনও। প্রথম বিধবাবিবাহের পর দ্বিতীয়বার বিধবাবিবাহ সম্পন্ন হয় আদি ব্রাহ্ম সমাজের রাজনারায়ণ বসুর সহোদর ভ্রাতা ও জেঠতুতো ভ্রাতা দু’জনের একত্রে। অতঃপর বিদ্যাসাগরের উদ্যোগে ও পরিচালনায় বিধবাবিবাহ চলতে থাকে। ১৮৬৮ সালে বিদ্যাসাগর তাঁর বন্ধু যোগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম পত্নীর মৃত্যুর পর মহালক্ষ্মী নামে এক বিধবার সঙ্গে তাঁর বিবাহ দেন। শিবনাথ শাস্ত্রীও বিদ্যাসাগরের অনুপ্রেরণায় পালিতা ভগ্নী বিধবা মনমোহিনীর সঙ্গে রাধাকান্ত চট্টোপাধ্যায় নামে এক ব্রাহ্মণ সুপাত্রের বিবাহ দেন। শিবনাথের পরিবারে আশ্রিতা বিধবা নৃত্যকালীর সঙ্গেও বিপিনচন্দ্র পালের বিধবাবিবাহ সম্পন্ন হয়। বরিশালের খ্যাতনামা আইনজীবী দুর্গামোহন দাশও কালীনারায়ণ গুপ্তের বাল্যবিধবা কন্যা সরলা রায়কে বিবাহ করেন। এই সরলা রায় ছিলেন আবার অতুলপ্রসাদ সেনের জননী। বিদ্যাসাগরও তাঁর পুত্র ২২ বছর বয়সি নারায়ণের সঙ্গে হুগলির খানাকুলের শম্ভুচরণ মুখোপাধ্যায়ের কন্যা ১৪ বছরের বিধবা ভবসুন্দরীর বিবাহ দেন ১৮৭০ সালে।