উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। উচ্চতর বিদ্যার ক্ষেত্রে শুভ ফল পাবে। কর্মপ্রার্থীদের ... বিশদ
রেণুকা দাসের কথা: কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে কাটোয়ার নাগবাড়িতে ভোর থেকে সাজো সাজো রব পড়ে যেত। একান্নবর্তী পরিবারের জেঠতুতো, খুড়তুতো, পিসতুতো ভাই মিলিয়ে সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। আর তাদের ফোঁটা দেবে একমাত্র দিদি রেণুকা। সকাল সকাল স্নান সেরে, কাচা জামাকাপড় পরে রেণুকা শিশির তুলতে বাগানে যেতেন। তা দিয়ে বেটে নিতেন শ্বেতচন্দন আর রক্তচন্দন। পরপর বারোটা আসন সাজিয়ে ভাইদের বসাতেন রেণুকা। বারোটা থালায় লুচি, তরকারি আর মিষ্টি সাজিয়ে নিতেন। এরপর একটা থালায় ধান, দূর্বা, চন্দনের বাটি সাজিয়ে, পিলসুজের উপর পিতলের প্রদীপ জ্বালিয়ে নিতেন। তারপর ভাইদের সামনে একটা ঘট বসিয়ে ফুল মালা দিয়ে পুজো দিতেন। ঘটকে যমরাজের সঙ্গে তুলনা করে, সেই ঘটের কাছে অনুমতি নিয়ে তবে তার ভাইদের কপালে ফোঁটা দেওয়া শুরু করতেন রেণুকা।
ভাস্বতী দাসের কথা: মজা শুরু হতো দুর্গাপুজো থেকে। সেই সময় তুতো ভাইবোনেরা একত্রিত হতো ভাস্বতীদের বাড়িতে। দশমীতে বিষাদের বাজনা বাজলেও সেই বিষাদ ভরপুর আনন্দ নিয়ে আসত, যখন ভাইফোঁটার কথা মনে পড়ত। ভাইফোঁটার সময় ভাস্বতীরা সকাল সকাল স্নান সেরে ভাইফোঁটার সরঞ্জাম গোছাত। ফোঁটার সময় চন্দন বেটে, বেলপাতায় কাজল তৈরি করে, ধানদূর্বা সাজিয়ে একটা রেকাবিতে রাখা হতো। আর এরপর বড় থেকে ছোট সব বোনেরা একে একে ভাইফোঁটা দিত। ভাইফোঁটার দিন সকালে লুচি-তরকারি-মিষ্টি সহযোগে সবাই জলখাবার খেত। কোনওদিন এর অন্যথা হয়নি। দুপুরবেলা সবাই মিলে খাসির মাংস আর ভাত খেয়ে রওনা দিত সিনেমা দেখতে। সেই ভাইফোঁটার স্মৃতি আজ মলিন। সব ভাইবোনেরা এদিক সেদিক ছিটকে গিয়েছে। তখনকার মতো এখন আর কেউ এক জায়গায় জড়ো হতে পারে না। এখন ভাস্বতী ভাইফোঁটার দিন সকালে উঠে ওর ভাইয়ের নাম করে দেওয়ালে চন্দনের ফোঁটা দেয় আর আশীর্বাদ স্বরূপ ধানদূর্বাও দেওয়ালে আটকে দেয়। এরপর ভাইকে ফোন করে কথা বলে।
সংযুক্তা রায়ের কথা: বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান সংযুক্তা স্কুলে পড়াকালীন জামশেদপুর থেকে কলকাতার বালিগঞ্জে জেঠুর বাড়িতে কালিপুজোর সময় আসত। আর ভাইফোঁটা কাটিয়ে ফিরত। ভাইফোঁটার দিন ওর দুই জেঠতুতো দাদা আর পিসতুতো দাদাকে ফোঁটা দিত সংযুক্তা। ফোঁটার দিন দারুণ মজায় কাটত তাদের। সকালবেলায় স্নান করে নতুন জামাকাপড় পরে নিত সংযুক্তা। এরপর দাদাদের বসিয়ে সব বোনে মিলে একে একে ফোঁটা দিত। এরপর খাওয়া দাওয়া, হই হুল্লোড় করে কেটে যেত সারাটা দিন। বহুদিন সামনাসামনি একসঙ্গে সবার দেখা না হলেও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ওরা প্রতিনিয়ত আড্ডা দেয়। এটাই এখন ওদের যোগাযোগের ঠিকানা। অন্যান্য বারের মতো এবারেও সংযুক্তা হোয়াটসঅ্যাপে দাদাদের ভাইফোঁটার শুভেচ্ছা বার্তা পাঠাবে। দাদাদের মোবাইল ভরে উঠবে বোনেদের পাঠানো ‘হ্যাপি ভাইফোঁটা’ বার্তায়।