উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। উচ্চতর বিদ্যার ক্ষেত্রে শুভ ফল পাবে। কর্মপ্রার্থীদের ... বিশদ
সিংহ স্কন্ধ সমারূঢ়াং নানালঙ্কার ভূষিতাং।
চতুর্ভুজাং মহাদেবীং নাগ যজ্ঞোপবীতিধারিণীং...
নারদাদ্যৈ মুনিগণৈঃ সেবিতাং ভবসুন্দরীয়।।
অর্থাৎ দেবী সিংহের কাঁধে বসে আছেন। সর্বাঙ্গে নানা অলঙ্কার ধারণ করে রয়েছেন। তাঁর চারটি হাত। কণ্ঠে নাগরূপ যজ্ঞোপবীত ধারিণী। দেবী তাঁর বামহাত দুটিতে শঙ্খ ও শার্ঙ্গ ধনু এবং ডানহাত দুটিতে যথাক্রমে চক্র এবং পঞ্চবাণ ধারণ করেছেন। দেবী লালবস্ত্র পরিহিতা এবং গায়ের রং প্রাতঃকালীন সূর্যের ন্যায় রক্তবর্ণা। নারদাদি মুনিগণ দ্বারা তিনি নিত্য সেবিতা এবং বন্দিতা।
শাস্ত্র থেকে জানা যায়, জগতের যিনি পালনকারিণী ও শান্তি বিধায়িনী সেই জগদ্ধাত্রী রূপের সাধনা করলে মানুষ অদম্য শক্তি সঞ্চয় করতে পারে। এই কারণে কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের নবমী তিথিতে অবশ্যই জগদ্ধাত্রী দেবীর আরাধনা একান্তভাবে কাম্য। জানা যায় দেবী নাকি এইদিনেই মর্তলোকে আবির্ভূতা হয়েছিলেন এবং স্বয়ং দেবী পরে জয়রামবাটির সারদা মায়ের গর্ভধারিণী শ্যামাসুন্দরী দেবীকে তা স্বপ্নের মধ্যে দিয়ে জানিয়েও দিয়েছিলেন। এ কারণে বঙ্গে জগদ্ধাত্রী পূজার প্রসারের জন্য তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তবে অপর একটি কাহিনীও শোনা যায়। একসময় বাংলার নবাব ছিলেন আলিবর্দি খান। কথিত আছে যে, কোনও কারণে এই নবাব কৃষ্ণনগরের মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রকে কারাগারে নিক্ষেপ করেন। মহারাজ ছিলেন খুবই দেবীভক্ত এবং নিজে বাড়িতে স্বয়ং দুর্গাপুজো করতেন। কিন্তু সে বছর কারাগারে থাকার ফলে তা সম্ভব হয়নি। আবার যেদিন ছাড়া পেলেন সেদিন ছিল বিজয়া দশমী। ঢাকের বাদ্যি বাজছে, সেটা শুনে মহারাজের মনে খুব দুঃখ হল। দেবী দুর্গার অন্তঃকরণেও ভক্তের বেদনা আঘাত করল। ফলে মায়ের পূজা করতে না পেরে বিধ্বস্ত দুঃখিত কৃষ্ণচন্দ্রকে দেবী সেই রাতেই স্বপ্ন দিলেন— কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের নবমী তিথিতে আমার জগদ্ধাত্রী রূপের পূজা করো, তাহলে দুর্গাপুজোর মনোবাসনা পূর্ণ হবে। দেবীর স্বপ্নে বিশ্বাস করে ভক্তিভরে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র প্রথম কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী প্রতিমার পূজা করেন।
তাঁর দেখাদেখি চন্দননগরের ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীও মহাধুমধাম সহযোগে সেখানে জগদ্ধাত্রী পূজা শুরু করে দেন। বর্তমানে কৃষ্ণনগর ও চন্দননগরে দেবীর মহা আড়ম্বরে পূজার প্রচলন রয়েছে। জগদ্ধাত্রীর পূজা খুবই সুপ্রাচীন, ভারতের বিভিন্ন স্থানে এই পূজার প্রচলন আছে। তবে সেই পূজা হয় দেবী সিংহবাহিনী নামে। মনেপ্রাণে এই পূজা করলে মানুষের জীবন হয় সার্থক। দেবীর প্রণাম মন্ত্রে তাঁকে দুর্গা সম্বোধনে আমরা বলি—
জয়দে জগদানন্দে জগদেক প্রপুজিতে।
জয় সর্বগতে দুর্গে জগদ্ধাত্রী নমহস্তুতে।।
দয়ারূপে দয়া দৃষ্টে দয়ার্দ্রে দুঃখমোচনি।
সর্বাপত্তারিকে দুর্গে জগদ্ধাত্রী নমহস্তুতে।।
— হে দুর্গা, তুমি সকলের জয় বিধান করো, জগতের আনন্দ স্বরূপিনী ওগো মা, জগতের বুকে একমাত্র তুমিই প্রকৃত রূপে পূজিতা এবং তোমার সত্তা সর্বব্যাপী— হে মা, তোমার জয় হোক, হে জগদ্ধাত্রী তোমায় নমস্কার করি। ওগো জগদ্ধাত্রী মা তুমি দয়াস্বরূপা, করুণাময়ী, কৃপাদৃষ্টি স্বরূপা এবং দুঃখবিনাশিনী ও সর্ববিঘ্ননাশিনী— হে দুর্গা, তোমাকে নমস্কার করি। কাজেই দেখা যাচ্ছে যে, দুর্গাদেবীরই অপর নাম হল জগদ্ধাত্রী। তিনিই শিবগেহিণী। এই বিশ্বের রক্ষণ, পালন পোষিণী। অথচ নিত্যস্বরূপিণী, চিরন্তনী। তাঁর এই শাশ্বত অনবদ্য রূপের ধ্যান করলেও মানুষ আত্মজ্ঞান লাভে ধন্য হয়।
জগৎধারিণী মা মহামায়া জগদ্ধাত্রী, দূরাকাশে সূর্য যেমন পৃথিবীকে ধরে রয়েছে ঠিক তেমনি মা দুর্গা জগৎকে ধারণ করে রয়েছেন। তাই দুর্গার আর এক অন্য রূপের নাম ‘জগদ্ধাত্রী’।