আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সমাগমে আনন্দ বৃদ্ধি। চারুকলা শিল্পে উপার্জনের শুভ সূচনা। উচ্চশিক্ষায় সুযোগ। কর্মক্ষেত্রে অযথা হয়রানি। ... বিশদ
বাংলা নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে আমরা বেছে নিয়েছিলাম বাংলারই ঐতিহ্যবাহী গামছাকে। গামছাকে পোশাক হিসেবে ব্যবহার করে ফ্যাশন দুনিয়ায় বিপ্লব এনেছিলেন বিবি রাসেল। আজ তাঁর সেই ফ্যাশন ট্রেন্ড বহুধা বিস্তৃত এবং জনপ্রিয়। আর আমাদের মতো গ্রীষ্মপ্রধান দেশে সবসময়েই গামছা দিয়ে ফ্যাশনের কদর ছিল আছে থাকবে। ফ্যাশনের সেই ধারাকেই আপন করে তাতে নিজস্ব ছোঁয়া দিয়েছে ব্র্যান্ড আকাশলীনা। তাদের সম্ভারে রকমারি শাড়ি, ব্লাউজ, ড্রেস, টপ, কুর্তা সবই পাবেন। বাংলার জন্য, বাংলার তাঁতিদের জন্য ভাবেন ব্র্যান্ডের দুই সদস্য মৌমালা বণিক এবং রকি বিশ্বাস। তাই তাঁতে বুনে অর্গ্যানিক পদ্ধতিতে গামছা তৈরি করিয়ে তা শাড়িতে ব্যবহার করেন তাঁরা। সেই গামছা-শাড়ি হয় নরম এবং টেকসই।
গামছা বলতে এমনিতেই আমরা জানি তাতে নানারকম রং থাকবে। সে কারণে সোহিনীর শাড়িটিতে আছে বহু রঙের সমন্বয়। কাপড়টিও নরম। সঙ্গে আঁচলে রাফলস, যেটা এই সময়ের ফ্যাশনে খুব ইন। শাড়িটা হাতে ধরে দেখলেই বুঝবেন, কী নরম আর হাল্কা! মনে হবে এখনই গায়ে জড়িয়ে নিই। পয়লা বৈশাখ শুধু নয়, এই শাড়ি-সাজ আপন করে নিতে পারেন গোটা গরমেই। শাড়ির সঙ্গে রয়েছে হাকোবা (অফ হোয়াইটের ওপর ছোট ছোট ফুটো) কাপড়ের মধ্যে গামছার প্যাচওয়ার্ক। গামছার সঙ্গে হাকোবার মিশেল খুবই নতুনত্ব, জানালেন মৌমালা। ব্লাউজে রয়েছে কলারও। অনেকটা শার্টের লুক দেওয়া ব্লাউজটিকে আধুনিকারা ক্রপ টপের মতোও পরতে পারবেন, বলছেন ডিজাইনার। সঙ্গে পাফ হাতা স্মার্ট লুক এনেছে ব্লাউজে। মৌমালার মতে, ‘সাবেকিয়ানা আর এখনকার ফ্যাশন ট্রেন্ডকে মেলানোর চেষ্টা করেছি আমরা। গামছার প্যাচওয়ার্কের পাশে আছে কটন লেসের বর্ডার। ফলে ব্লাউজের প্রতিটি উপকরণই সুতির। এমনকী ব্লাউজের লাইনিংয়েও রয়েছে মলমলের কাপড়।’ গরমে পরলে তাই এতটুকু কষ্ট হবে না। আর শাড়ি-ব্লাউজের দাম এমন সাধ্যের মধ্যে, কল্পনাও করতে পারবেন না। তাহলে আর দেরি কীসের, ফোন করে এখনই জেনে নিন শাড়ির খবর।
আকাশলীনা-র সামার কালেকশনে হ্যান্ড উইভ গামছায় একঢালা শাড়িও আছে। তাতে নানা রঙের কম্বিনেশন না থাকলেও দেখতে সেগুলো খুব সুন্দর। রাফল ছাড়া সাধারণ পাড়ের মধ্যেও এগুলো পাবেন। বাংলার চিরকালীন যে তাঁতের শাড়ি, তা নিয়েও পরীক্ষানিরীক্ষা করছেন মৌমালা-রকি। তাঁতের শাড়ির সঙ্গে গামছা মিশিয়ে এক ধরনের ব্লাউজ তৈরি করেছেন তাঁরা। গামছার আরও নানা ধরনের ব্লাউজ পাবেন ওঁদের কাছে। গরমকালে পরতে যাতে অসুবিধে না হয়, তার জন্য সফট জামদানিতে মলমলের লাইনিং দিয়ে মেয়েদের ড্রেসও বানাচ্ছেন তাঁরা। সেগুলোও খুব হাল্কা। পরে আরাম পাবেন।
শ্যামনগরের মেয়ে মৌমালা তাঁরই এলাকায় স্টুডিও খুলছেন খুব শিগগির। ফেসবুকে অনলাইনে তো তাঁর পেজ আছেই। কিন্তু শহরের দিকে কেন স্টুডিও নয়? তাঁর বক্তব্য, ‘জেলায় ডিজাইনার স্টুডিও কনসেপ্টটাই নেই। তাই জেলার মানুষ যাতে
হালফ্যাশনের খোঁজ পান সহজে, তার জন্যই আকাশলীনার এই উদ্যোগ।’ তাছাড়া ডিজাইনার আউটফিট মানেই খুব বেশি দামি, এই ধারণাটাও ভাঙতে চান মৌমালা-রকি। সব ধরনের মানুষের কাছে পোশাক পৌঁছতে চান তাঁরা। এমনিতেই যে ধরনের ফ্যাব্রিক তাঁরা ব্যবহার করছেন, সেগুলো খুব ইকো-ফ্রেন্ডলি। গামছা নিয়ে এতরকমের কাজ হচ্ছে, তবু কেন আবার সেটাই বেছে নিলেন ডিজাইন করার জন্য? মৌমালা বললেন, ‘সত্যি কথা বলতে কী, শুরু করার সময় অত তলিয়ে ভাবিনি। পড়াশোনা করতে করতেই মনে হল, এমনটা করা যায়। বিবি রাসেল তো অনুপ্রেরণা বটেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও কিছু মানুষের মধ্যে গামছা নিয়ে এখনও একটু নাক সিঁটকানো ব্যাপার রয়েছে। ভাবটা এমন, এত কিছু থাকতে হঠাৎ গামছার ডিজাইন বেছে নেব কেন? আমি তাই রেগুলার গামছা ব্যবহার করিনি। গামছার প্রিন্ট নিয়ে সেটাকে আলাদা করে উইভ করিয়েছি। গামছা যাঁরা বোনেন, সেই তাঁতিরাই কিন্তু কাজটা করেছেন। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখা হয়, যাতে ফ্যাব্রিকটা সাধারণ গামছার মতো জ্যালজেলে না হয়, বুনটটা মোটা ও মজবুত হয় কিন্তু সেটা পরলে আরাম লাগবে।’ এই সব পোশাক বা শাড়ি প্রথমবার ড্রাই ক্লিন করে নিয়ে তারপর নরম ডিটারজেন্টে কেচে নিতে পারেন। অনেকে ভাবেন একবার কেচে ফেললেই বুঝি এসব জিনিসের রং নষ্ট হয়ে যাবে। তা কিন্তু নয়। প্রথম ওয়াশে যে কোনও কটন কাপড়েই রং ওঠে। তাই প্রথমবার ড্রাই ক্লিন করে নেওয়া ভালো।
গামছায় শুধু আটকে থাকা নয়। গামছার সঙ্গে রাজ্যেরই নানা জিনিস মিলিয়েছে ব্র্যান্ড আকাশলীনা। বাংলার জিনিস নিয়েই এখনও কাজ করছেন তাঁরা। গামছার ওপর কাঁথা স্টিচের কাজও আছে। তাছাড়া আছে খেসের ওপরে কাজ। মোদ্দা কথা, বাংলার তাঁতিদের পাশেই থাকতে চান বাংলায় স্নাতকোত্তর পাঠরতা মৌমালা। আকাশলীনার ফেসবুক পেজ-akashlina। যোগাযোগ: ৯৬৭৪৮৩৯৭১৭।
বৈশাখী ফ্যাশনে পিছিয়ে নেই ছেলেরাও। রণজয়ের পরনে যেমন রয়েছে রেনে-র একটি সামার কুর্তা। এটিও গরমকালে পরার জন্য আদর্শ। গলার কাছে হাল্কা সুতোর কাজ সহ ভারী ছিমছাম ডিজাইনের কটনের এই কুর্তা পরা যেতে পারে যে কোনও জায়গায়। যোগাযোগ: ৯২৩০৫১৮৯৩৬।
এবার চোখ ফেরানো যাক একটু অন্য ধরনের পোশাকের দিকে। মেখলা তো অনেকই দেখেছেন। পার্টিওয়্যারে মেখলা বেশ অভিনব, তাই না? ঘরোয়া বুটিকের জয়িতা মুখোপাধ্যায় সেভাবেই তৈরি করেছেন ফুশিয়া পিঙ্ক, গোল্ডেন ও অফ হোয়াইট রঙের কম্বিনেশনের এই মেখলাটি। এতে আছে চান্দেরি, নয়েল এবং সিল্ক। সঙ্গে গর্জিয়াস লুক দেওয়ার জন্য ব্রাইট জরি এমব্রয়ডারি আছে। তবে এর কালার কম্বিনেশন এমনই যে দিনে-রাতে যে কোনও সময় পরা যেতে পারে, জানালেন জয়িতা। মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ প্যাটার্নে এই মেখলাটিকে বানানো হয়েছে। অসমের ট্র্যাডিশনাল যে মেখলা দেখা যায়, তার থেকে এটা অনেকটাই আলাদা। এতে আছে বাংলার কাঁথা কাজ, সঙ্গে আছে অ্যাপ্লিক আর জরি এমব্রয়ডারি।
ঘরোয়া-র সংগ্রহে আছে আরও নানা ধরনের মেখলা। কটনের মধ্যেও পাবেন এই পোশাকটি। তাতে আছে হ্যান্ড পেন্ট এবং অ্যাপ্লিকের কাজ। কোথাও আবার ব্লক প্রিন্টের সঙ্গে কাঁথা কাজ বা এমব্রয়ডারি। কোথাও মিরর ওয়ার্ক। কোথাও কলমকারি বা খেস। কোথাও নেটও আছে। মেখলাকে একটা নিউ লুক দেওয়ার চেষ্টা থেকেই এগুলো বানানো, জানালেন জয়িতা। মেখলা আছে চান্দেরি, সিল্ক এবং তসরেরও। নানা মেটিরিয়ালের মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ-ও আছে। কিছু মেখলা এমনভাবে তৈরি যাতে ডেলিওয়্যার করে পরা যাবে। গরমের সকালের অনুষ্ঠানে যা আদর্শ। মেখলার রেঞ্জ শুরু ১০৫০ টাকা থেকে। মেটিরিয়াল অনুযায়ী দাম বাড়ে।
সামার কালেকশনে ঘরোয়ায় আছে নানা ধরনের শাড়ি— কটন, হ্যান্ডলুম, চান্দেরি। সেখানেও মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করেছেন তিনি। যোগাযোগ: ১/৫৭ বি ডোভার প্লেস, (গড়িয়াহাটের কাছে) কলকাতা-১৯, ফোন: ৯৮৩০১৯২০৮৭