উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
বেনারসি ছাড়া বিয়ে হয় না, চোখ বুজে সবাই এই কথাটা জানি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পছন্দও তো বদলায়। সেই বদলের খোঁজ করতে গিয়েই দেখলাম উৎসবে পরার শাড়ি হিসেবে বালুচরি থেকেও এখন চোখ ফেরানো দায়। হয়তো বলবেন, এ শাড়ি তো আগেও ছিল! তা ছিল। তবে এখন বাংলার বালুচরি বেনারসের সুচারু শিল্পীদের হাত ধরে পেয়েছে অপূর্ব রূপ। সেভাবেই এই শাড়ির কদর বেড়েছে আরও। চোখটানা নকশার পাশাপাশি এ শাড়ির অন্যতম প্লাস পয়েন্ট, ওজনে হালকা। কনের সাজে হোক বা অন্য কোনও অকেশনে, এ শাড়ি পরে জড়সড় হয়ে থাকার ব্যাপার নেই।
বালুচরির পুনরুদ্ধারের কাজে যুক্ত লন্ডন নিবাসী রাজেশ্বরী সেনগুপ্ত। তিনি তাঁর মা মধুমিতা সেনগুপ্তর সঙ্গে ‘দ্য ফার ইস্ট আর্ট স্টুডিও’ (কলকাতা-লন্ডন যৌথভাবে) চালান। রাজেশ্বরী জানালেন, টেক্সটাইল রিভাইভাল-এর কাজটা যাঁরা করেন, তাঁরা দেখেছিলেন এ রাজ্যে দুবরাজ দাসের মতো খ্যাতনামা শিল্পীর হাতের বালুচরির কাজ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। বেনারসে যে সব নকশাবন্দ (নকশা ফুটিয়ে তোলেন যাঁরা) আছেন, তাঁরা সব ধরনের পুনরুদ্ধারের কাজে পারদর্শী। তারপর থেকেই বেনারসে বালুচরির যাত্রা শুরু। রাজেশ্বরীর মতে, ঐতিহ্য অটুট রেখে শাড়িতে আধুনিক রঙের ছোঁয়া দিয়ে তাকে করে তোলা হয় নয়নাভিরাম। শাড়ি দেখলেই আপনি বুঝবেন, এমন শিল্পসম্ভার নিজের সংগ্রহে না থাকলেই নয়। দাম স্বভাবতই একটু বেশি। তবু টাকা জমিয়ে হলেও তাকে কাছে টেনে নেওয়াই যায়! আর বিয়ের দিনটির জন্য হলে তো কথাই নেই। এমনিতেই সেই প্রিয় শাড়ির জন্য বাজেট একটু বেশি রাখা থাকে। আর এমন শাড়ি আপনার বিশেষ দিনটি ছাড়াও সারা জীবন দেখানোর মতো সম্পদ হয়ে থাকবে। রাজেশ্বরীর স্টুডিওর লাল বালুচরিটি (ছবিতে দেখা যাচ্ছে) ১৯ শতকে দুবরাজ দাসের করা কাজের পুনরুদ্ধার, এটি এখন ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামে শোভা পাচ্ছে।
কলকাতা শহরের ডিজাইনার জয়িতা সেনগুপ্তও জানালেন রিভাইভাল বালুচরির কথা। জাম, ব্ল্যাকের পাশাপাশি সফট কালারেও সিল্ক সুতোর কাজ হচ্ছে এই সব শাড়িতে, বললেন তিনি। বিয়ের কনে শুধু নয়, তাঁর মা বা অন্য আত্মীয়ের জন্যও নানা রঙে নানা নকশায় অতুলনীয় হয়ে উঠতে পারে নবরূপের বালুচরি।
বালুচরির পাশাপাশি আরও কিছু শাড়ির কথা বললেন জয়িতা। তাঁর মতে, বিয়ে উপলক্ষে নানা সময়ে সকলের পরার জন্য মহারাষ্ট্রের জনপ্রিয় পৈঠানি, দক্ষিণ ভারতের কাঞ্জিভরম কিংবা জমকালো গাদোয়ালও আছে। মহারাষ্ট্রের অজন্তা-ইলোরার গুহাচিত্র উঠে আসে পৈঠানিতে। গোল্ডেন সুতোর বুনটে এই গর্জিয়াস শাড়ি সবসময়ে মানানসই। বিদর্ভ তসরও খুব ক্লাসি লুকের হয়। সকালের জন্য ভালো এই শাড়ি। কাঞ্জিভরমে দক্ষিণের মন্দিরগুলোর ছবি অথবা ওখানকার আন্নাপক্ষীর (ময়ূর) মোটিফ ভাইব্র্যান্ট কালারে খুব খোলে। গাদোয়ালও দক্ষিণ ভারতের শাড়ি। ওড়িশার গোপালপুর তসর বা সাধারণ তসরও বিয়েতে পরে যাওয়ার জন্য অভিজাত সাজ। তসর কোটপাড়, গঞ্জাম বোমকাই, বাংলাদেশি ঢাকাই বিয়ের সকাল বা অন্য রিচুয়ালে আদর্শ। ভালো বাংলাদেশি ঢাকাইয়ের দাম একটু বেশি হয়। দু’জন তাঁতি একটা ভালো শাড়ি দু’মাস ধরে বোনেন এমন নজিরও আছে, বলেন জয়িতা। সাধারণ সিল্কের তুলনায় এখন এই সব অভিজাত শাড়ি বিয়েবাড়িতে ব্যতিক্রমী করে তুলতে পারে আপনাকে।