মাঝেমধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। গবেষণায় আগ্রহ বাড়বে। কর্মপ্রার্থীদের নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
সব মেয়েরই ইচ্ছে থাকে বিয়ের দিনে রানির মতো সাজতে। তাই বিয়ের দিনগুলোর সাজ হবে সবকিছুর থেকে আলাদা ও উজ্জ্বল, যাতে অনুষ্ঠানে আসা প্রত্যেকটি মানুষই দু’বার ঘুরে কনেকে দেখেন এবং মুগ্ধ হয়ে যান। সেই একঘেয়ে সাজ থেকে বেরিয়ে নতুন রকমের সাজে কনেকে সবার কাছে আকর্ষণীয় করে তোলার পরামর্শ দিলেন রুবি বিশ্বাস।
ওঁর কথায় বিয়ের সাজের একঘেয়েমি কাটিয়ে নতুন ট্রেন্ড আনা খুব দরকার। তাই বিয়ের আগে তিন মাসের ‘প্রি ব্রাইডাল গ্রুমিং’ প্রয়োজন। এখানে থাকে যোগা, অ্যারোবিকস, জিম, ডায়েট চার্ট থেকে শুরু করে বডি পলিশিং, স্কিন ও হেয়ার ট্রিটমেন্ট, পেডিকিওর, ম্যানিকিওর ও আরও অনেক কিছু। এই প্যাকেজে বিয়ের কনে হয়ে ওঠে ‘ডিভা অফ দ্য ডে’।
সাজ-বদলের তালিকায় প্রথমেই থাকছে কনের ন্যাচরাল লুক। অর্থাৎ খুব বেশি মেক-আপ করে ধবধবে সাদা করে দেওয়া এখন ব্যাকডেটেড। অল্প মেক-আপ নিয়ে একটা ‘নো মেক-আপ লুক’-এর সাজ। তাই আগে থেকেই স্কিনের যত্ন নেওয়া খুব দরকার।
মেকআপ করার সময় কনের মুখের গঠন দেখে নিতে হবে। মুখের গঠনের উপর নির্ভর করবে মেক-আপ। যেমন— ওভাল আকারের মুখের গঠন হলে কপালের দু’দিকের উঁচু জায়গাতে কনট্যুরিং করতে হবে। চওড়া কপাল হলে কপালের উপরিভাগে শ্যাডো ইন করে কপালের চওড়া ভাব কমাতে হবে।
মেক-আপের আগে মুখ ভালো করে ক্লিনজিং করে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে হবে। তারপর একে একে হবে মেকআপের প্রয়োগ। খুব ভালো কোম্পানির প্রাইমার ব্যবহার করতে হবে যাতে বিয়ের সাজ অনেকক্ষণ পর্যন্ত ঠিকঠাক থাকে। মুখে পিগমেন্টেশন থাকলে সেখানে আঙুলের ডগায় অরেঞ্জ পিগমেন্টেশন নিয়ে আস্তে আস্তে চেপে দিতে হবে। তারপর সাজের ধরন বুঝে গাল কেটে বা নাক চোখালো করে বা চোখ বড় করে দিতে হবে কনট্যুর করে। তারপর ফাউন্ডেশনের সঙ্গে আগের মেকআপ মিশিয়ে নেবে হালকা করে। ব্রণর দাগ বা পক্সের দাগ থাকলে ফাউন্ডেশনের পর কনসিলার লাগাতে হবে। ব্লাশার লাগানোর সময় মাথায় রাখতে হবে কনের সাজ হবে উজ্জ্বল। ব্যবহার করতে হবে গোল্ডেন শিমার। মেকআপ হবে স্মাজ প্রুফ। মেকআপ শেষে দিতে হবে মেক-আপ ফিক্সার।
কনের সাজের ক্ষেত্রে চোখের মেকআপ খুব গুরুত্বপূর্ণ। সবার আগে আই-ব্রো ঠিক করে প্লাক করতে হবে বা আই-ব্রো ঠিক করতে হবে। কোথাও ফাঁকা থাকলে বা লম্বায় বড় করার প্রয়োজন হলে সেখানে আই-ব্রো পেনসিল বা আই-ব্রো পাউডার দিয়ে ঠিক করতে হবে। তারপর লাগাতে হবে আইশ্যাডো বেস। ঠিক ভ্রূ-র তলায় থাকবে আইশ্যাডো বেস। আই-ব্রো বোনকে হাইলাইট করার জন্য পার্ল হোয়াইট শ্যাডো দেওয়া হবে। তার নীচে ডিপ রঙের শ্যাডো দেওয়া যাবে কনের পোশাকের রঙের সঙ্গে মানানসই করে। তবে অবশ্যই চোখের শেষের দিকের কোনায় থাকবে ডিপ রঙের শ্যাডো। আইলাইনার চোখের বাইরের দিকে টানা হবে স্মাজ ব্রাশ দিয়ে আইলাইনার স্মাজ করে দিলে ভালোই লাগবে। চোখ ছোট হলে চোখের তলার রেখা যাকে বলে ‘ওয়াটার লাইন’ সেখানে সাদা আই পেনসিল দিয়ে চোখ বড় করে নিতে হবে। কালো রঙের আই লাইনার বাদ দিয়ে পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে রঙিন আইলাইনারও লাগানো যাবে। সবশেষে ফলস আইল্যাশ লাগিয়ে সেটাকে কার্ল করে দিলে চোখের সাজ হয়ে যাবে পারফেক্ট।
লিপস্টিক হতে হবে কালার স্টে অর্থাৎ লিপস্টিক কনের ঠোঁটে অনেকক্ষণ থাকতে হবে। তাই বিয়ের আগে লিপ কেয়ার করার খুব দরকার। একটা নরম টিস্যু কাপড় দিয়ে ঠোঁট ঘষে ঠোঁটের ফেটে যাওয়া চামড়া ফেলে দিতে হবে। তারপর লিপ লাইনার দিয়ে ঠোঁট আঁকতে হবে মুখের গঠন অনুযায়ী। লিপ লাইনার দিয়ে ঠোঁট আঁকার পর পুরো ঠোঁটে লিপ লাইনারটি দিতে হবে। তার উপর দিতে হবে কালার স্টে ম্যাট অথবা ক্রিম শেডের লিপস্টিক।
সাজের সময় চুলের সাজটাও খুব সুন্দর করে করতে হবে। চুলের যত্ন নিয়ে চুলকে করতে হবে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। যাদের চুল পাতলা বা কম তাদের জন্য থাকছে হেয়ার এক্সটেনশন। আবার যাদের চুলে হাইলাইট করা বা স্ট্রেটনিং করা বা চুল বড় তাদের কিছুটা চুল বেঁধে কিছুটা খুলেও সাজানো যায়। মুখের গঠনের পাশাপাশি কোন অনুষ্ঠানে সাজ হবে সেটার উপরও চুল বাঁধার স্টাইল নির্ভর করে। আজকাল যেমন খুব বেশি করে ‘কেয়ারফুলি কেয়ারলেস হেয়ার লুক’ কনের ট্রেন্ড। যেমন— মেসি লুক, সামনে পাফ করে সরু সরু করে চুল টেনে বের করা, ব্রেডিং। সিজনাল ফুলের পাশাপাশি আর্টিফিসিয়াল সিন্থেটিক ফুল, হেয়ার ক্লিপ, গাজরা, হেয়ার পিন, ব্যান্ড— এসব অ্যাকসেসরিজের ব্যবহার এখন ট্রেন্ডে ইন।
কনের কপালের চন্দনের কল্কা ছাড়া সাজ একদম অসম্পূর্ণ। তাই আধুনিকতার পাশাপাশি এই সাবেকিয়ানার সাজ অবশ্যই থাকবে। কিন্তু এখন চন্দনের পরিবর্তে ফেব্রিক রং ব্যবহার করা হয়। লাল, সাদা রং বিয়ের দিনে মাস্ট। আর রিসেপশনের দিনে পোশাকের রঙের সঙ্গে ম্যাচ করে ফেব্রিক রং, স্টোন লাগানো যাবে।
কনের হাতের সৌন্দর্যকে আবার একেবারে অগ্রাহ্য করলে চলবে না। ম্যানিকিওর করে সুন্দর করে নখ শেপ করে নেল পলিশ লাগাতে হবে। প্রয়োজনে নেল এক্সটেনশন ও নেল আর্টও করা যেতে পারে। এখন তো অনেক মেয়েই তাদের নখের প্রতি খুব যত্নবান।
কনের বিয়ে আর রিসেপশনের সাজে শাড়ি ও জুয়েলারি বেছে নেওয়াটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। কনেকে তার গায়ের রঙের সঙ্গে পোশাক নির্বাচনের পাশাপাশি মাথায় রাখতে হবে কোন পোশাকে সে বেশি কমফর্টেবল। এখন সেই একঘেয়ে লাল, মেরুন বেনারসির যুগ বদলে গিয়েছে। কনে পরবে গোলাপি, সবুজ-লাল, নীল-লাল রঙের শাড়ি নানারকম ডিজাইনে। সঙ্গে থাকবে ডিজাইনার ব্লাউজ। বিয়ে মানেই যে শাড়ি পরতে হবে সেই ভাবনার বদল ঘটিয়ে এখন বিয়েতে স্বাগত জানাক লেহেঙ্গা শাড়ি। আর রিসেপশনে পরতে পারে লেহেঙ্গা, গাউন। অন্যদিকে পোশাক বুঝে জুয়েলারি পরা এখন স্মার্ট চয়েস। যত জুয়েলারি আছে সব একদিনে পরে নেওয়ার ভাবনা-চিন্তা ছাড়তে হবে। গয়না হতে হবে ছিমছাম, স্লিক ও ডিজাইনার। আজকাল কস্টিউম জুয়েলারির সাজেও কিন্তু কনের সাজ হিট। ছোট হাতার ব্লাউজ পরলে হাতে বাজুবন্ধ পরা যেতে পারে আর কোমরে কোমরবন্ধনী গয়না যেন সকলের চোখ আকর্ষণ না করে, চোখ আকৃষ্ট করবে কনেকে, কনের সাজকে। তাই কনের সাজ হবে অন্যরকম, তবে জৌলুস বজায় থাকবে কনের চোখে-মুখে- হাসিতে- পোশাকে।
যোগাযোগ: সাজো, শ্যামবাজার, ফোন: ২৫৫৫৪২৭৮