ছবির গল্প প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিচালক অভিরূপ বলেন, ‘গল্পটি সম্পূর্ণ কল্পনাপ্রসূত। ২০৩০-এর একটি কাল্পনিক ঘটনা, বর্তমান যে রাজনৈতিক, সামাজিক প্রেক্ষাপটে আমরা দাঁড়িয়ে আছি একজন মানুষ হিসেবে এটা আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধি। আমার ধারণা মানুষ যেন অস্তিত্বের সংকটে দাঁড়িয়ে আছে। মানুষ কিছু না ভেবেই কিছুকে আঁকড়ে ধরতে চাইছে। সেটার ফল ভালো নাকি মন্দ হবে তা ভেবে দেখছে না। তা থেকেই কল্পনা করা হয়েছে যে ২০৩০এ একটি বায়োকেমিকেল বোমা সমগ্র পৃথিবীকে গ্রাস করেছে। এর ফলে পঁচানব্বই শতাংশ মানুষ একটি অজানা ব্যাধিতে আক্রান্ত। সেই রোগের নাম জম্বি। যদিও জম্বি বলে বাস্তবে কিছু নেই। যে পাঁচ শতাংশ মানুষ বেঁচে আছেন তাঁদের খাদ্য, বস্ত্র, অন্নের কোনও সংস্থান নেই। এরকমই একজন বেঁচে থাকা মানুষ আকিরা যে বেঙ্গালুরুতে থাকে। তার গোটা পরিবারে এখন আর কেউ নেই। সে একা।
আকিরা খুব সাহসী এবং সংগ্রামী মেয়ে। আকিরার ধারণা এই একটা বায়োকেমিকেল বোমা বিস্ফোরণে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেল এবং যে পাঁচ শতাংশ মানুষ এখনও বেঁচে আছেন তারা কোথায় কীভাবে আছেন। তাঁরা সবাই কি সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। তাঁদের বর্তমান অবস্থান কোথায় এবং কীভাবে তাঁরা বেঁচে আছেন তার সলুক সন্ধানে একটি গাড়ি নিয়ে বেঙ্গালুরু থেকে রওনা হয়। গ্রামের পথ ধরে ঘুরতে ঘুরতে সবশেষে আকিরা পশ্চিমবঙ্গে এসে পড়ে। তার এই যাত্রাপথে কী কী ঘটে তাই নিয়েই কাহিনী বিন্যাস। অন্যদিকে আবার জম্বিতে আক্রান্ত মানুষ তারা একে অপরের মাংস খায়। আকিরাকে যাত্রাপথে তাদের মুখোমুখি হতে হয় কিনা তা ছবি দেখলে বোঝা যাবে।
অন্যদিকে অনিল নামে এক ব্যক্তি যিনি জম্বি দ্বারা সংক্রামিত নন, তিনি সুস্থ, তিনি মনে করেন ভগবানের সৃষ্ট প্রকৃতিকে মানুষ যেভাবে ধ্বংস করছে এটা তারই প্রভাব। এর ফলেই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আবার অপরদিকে দেখা যায় যে আগামী পৃথিবীর হরিদাসনগরের রাজা হরিদাসের রাজত্বে গিয়ে আকিরা হাজির হয়। রাজা হরিদাস অত্যন্ত খারাপ অত্যাচারী একজন মানুষ। যাঁর রাজত্বে মেয়েদের সে মুঠোর মধ্যে করে রেখেছে। এরকম একটা রূপক চরিত্র ছবিতে আছে যা দেখলে বোঝা যাবে। এই তিনটি চরিত্রের মধ্যে কীভাবে যোগসূত্র স্থাপন হয়, তা জানতে ছবি মুক্তি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’
ছবিতে অভিনীত শিল্পীরা হলেন তনুশ্রী চক্রবর্তী (আকিরা), রুদ্রনীল ঘোষ (অনিল), রজতাভ দত্ত (হরিদাস)। অন্য শিল্পীরা হলেন দেবলীনা বিশ্বাস, অন্বেষা তরফদার, সৌরভ সাহা প্রমুখ।
তনুশ্রী অর্থাৎ আকিরার সাজপোশাক সম্পর্কে বলতে গিয়ে পরিচালক জানান যে পুরো ছবিটাই যেহেতু ভবিষ্যতে ধ্বংস হয়ে যাওয়া পৃথিবী তাই একটু রাস্টিক কালার টোন রাখা হয়েছে। একটু অলিভ, ইয়োলিশ টোন ব্যবহার করা হয়েছে। তনুশ্রীকে একটা রাফ লুক দেওয়া হয়েছে। জিনস, টিশার্টে দেখা যাবে। ব্ল্যাক টিশার্টের সঙ্গে ব্লু কালারের জিনসের সঙ্গে একটু ব্রেডেড হেয়ার স্টাইল রাখা হয়েছে। মেকআপহীন তাঁর লুক। তিনি সঙ্গে সবসময় তলোয়ার, বন্দুক, পিস্তল রাখেন। কারণ যদি কোনও জম্বি দ্বারা আক্রান্ত হন। তাই নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে এই অস্ত্র সঙ্গে রেখেছেন। কোমরে কটন কাপড়ের ব্ল্যাক কালারের বেল্ট, কাঁধে অলিভ কালারের শোল্ডার ব্যাগ, পায়ে ব্রাউন কালারের রাস্টিক লুকের বুটস তিনি ব্যবহার করেছেন।
তবে ঘটনাচক্রে পরে তিনি যখন হরিদাসনগরে যান তখন ব্রাউন টপ ও অলিভ কালারের ট্রাউজার্সে দেখা যাবে। কারণ হরিদাস নগরের রাজার মুঠোয় থাকা মহিলারা সব ওই কালারের এবং এই ধরনের পোশাক পরেন।
অনিল অর্থাৎ রুদ্রনীলকে হোয়াইট স্নিকার্সের সঙ্গে ব্লু ডেনিম, সঙ্গে রেড শার্টে ঘরের দৃশ্যে দেখা যাবে। এছাড়া ঘর ছেড়ে যখন তিনি বাইরে যান তখন হোয়াইট কালারের ওয়ান পিস স্যুটে তাঁকে দেখা যায়। এই ধরনের পোশাক পরে বেরনোর উদ্দেশ্য হল নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে যদি বাতাসে কোনও দূষিত কেমিকেল ভেসে বেড়ায় তা যেন কোনও ভাবে মানুষের শরীরকে আক্রান্ত করতে পারে না। তবে রুদ্রনীলের হেয়ার স্টাইল সাধারণ হলেও গোঁফ ও গোটিতে দেখা যাবে।
হরিদাস অর্থাৎ রজতাভ দত্ত ছবিতে উনি একটু ফেমিনিন একটু মেয়েলি ভঙ্গিমায় কথা বলেন। তাই জন্য উনি চোখে আইশ্যাডো, মাসকারা বড় আইল্যাশ ব্যবহার করেন। আর্মিরা যে ধরনের পোশাক পরেন সে ধরনের পোশাকে তাঁকে দেখা যাবে। কার্গো অলিভ কালারের প্যান্ট, পায়ে ব্রাউন বুটস, টি শার্টের ওপর কার্গো শার্ট পরেছেন। এছাড়া বিশেষ এক ধরনের সানগ্লাস পরেছেন হরিদাস। সবসময় উনি আবার মাথায় মেরুনিশ ব্রাউন কালারের টুপি পরে থাকেন এমন কথা শোনা গেল পরিচালকের কাছ থেকে।
ক্যামেরায় রয়েছেন অঙ্কিত সেনগুপ্ত, ছবিটি সম্পাদনা করেছেন মিঠুন অধিকারী। সুর দিয়েছেন মেঘ বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিরাজ সেন। গান গেয়েছেন রাজ বর্মন, তিমির বিশ্বাস প্রমুখ।
প্রযোজনা করেছে কৃষ্ণা মোশান পিকচার্স।
প্রযোজক রাজেশ কুমার পাণ্ডে।
ছবি: সংস্থার সৌজন্যে