সপরিবারে অদূরবর্তী স্থানে ভ্রমণে আনন্দলাভ। কাজকর্মে কমবেশি ভালো। সাহিত্যচর্চায় আনন্দ। ... বিশদ
উট কাঁটা ঘাস খেতে ভালবাসে। যত খায়, মুখ দিয়ে রক্ত পড়ে, তবুও ছাড়ে না। বদ্ধজীবও তেমনি, তাদের কিছুতেই হুঁস হয় না। এত শোক, তাপ, দুঃখ দাগা পায়, এত বিপদে পড়ে, তবুও চৈতন্য নাই—যেমন তেমনি। স্ত্রী মরে গেল, কি অসতী হ’লো, আবার বিয়ে করবে। ছেলে মরে গেল, কত শোক কল্লে, সেই ছেলের মা কিছুদিন পরে সব ভুলে গেল, আবার চুল বাঁধলে—গয়না পরলে। একটা মেয়ের বিয়ে দিতে সর্ব্বস্বান্ত হচ্চে, তবুও বছর বছর ছেলে-মেয়ে হচ্চে। যারা জন্মেছে, তাদেরই ভাল খাওয়াতে পরাতে, কি ভাল জায়গায় রাখতে পারে না, তবুও নিবৃত্তি নাই—জন্ম দিচ্চে। মোকর্দ্দমা করে সর্ব্বস্ব যাচ্ছে, তবুও মোকর্দ্দমা করছে।
সংসারী লোকদের যদি সংসার থেকে সরিয়ে এনে ভাল জায়গায় (সাধুসঙ্গে) রাখা যায়, তাহলে হেদিয়ে হেদিয়ে মরে যাবে। বিষ্ঠার পোকার বিষ্ঠাতেই আনন্দ, তাতেই বেশ হৃষ্টপুষ্ট হয়, যদি তাকে এনে ভাতের হাঁড়িতে রাখো, সে মরে যাবে। গোবরের পোকা গোবরের ভিতর থাকতে ভালবাসে, তাকে এনে পদ্মের ভিতর বসিয়ে দিলে ছট্ ফট্ করে মারা যাবে। বিষয়ীও সেইরূপ বিষয়ের কথায় আনন্দ পায়; ধর্ম্মকথায়—ত্যাগের কথায় মারা যাবার মত বোধ করে। বদ্ধজীবকে হাজার শিক্ষা দাও, কিছুই করতে পারবে না। পাথরের উপর পেরেক মারতে গেলে, ভেঙ্গে যাবে, পাথরের কিছুই হবে না। সাধুর সঙ্গে কমণ্ডলু (তুম্বা) চারধাম করে আসে, কিন্তু যেমন তেতো, তেমনি তেতোই থাকে। বদ্ধজীবের সামনে হরি-কথা হলে, সে, সেখান থেকে সরে যায়। বলে—হরিনাম মরবার সময় হবে, এখন কেন?
বদ্ধজীব তীর্থ করতে গেলেও সেখানে গিয়ে ঈশ্বর চিন্তা করে না, কেবল পরিবারের পুঁটলি বয়ে বেড়ায়; আর ঠাকুরের মন্দিরে গিয়ে, ছেলেদের চরণামৃত খাওয়ায় ও গড়াগড়ি দেওয়ায়। এতেই মহা ব্যস্ত থাকে। বদ্ধজীব নিজের ও পরিবারদের পেটের জন্য দাসত্ব করে। যারা ঈশ্বর চিন্তা করে, ঈশ্বরের ধ্যান করে, বদ্ধজীব তাদের পাগল ব’লে উড়িয়ে দেয়। সংসারী লোকগুলোর কোন পদার্থ নাই। তারা তিনটী জিনিসের দাস। টাকার দাস, মাগের দাস, আর মুনিবের দাস।