সপরিবারে অদূরবর্তী স্থানে ভ্রমণে আনন্দলাভ। কাজকর্মে কমবেশি ভালো। সাহিত্যচর্চায় আনন্দ। ... বিশদ
দীপশিখার ন্যায় মনোবৃত্তি আপাতদৃষ্টিতে একটি মাত্র বোধ হইলেও বস্তুতঃ উহা অসংখ্য মনোবৃত্তির সমষ্টি। বৃত্তিমাত্রই বাসনাত্মক এবং বাসনাত্মক বৃত্তিসমষ্টিই মন। মন বাসনাত্মক বৃত্তিরূপ পরিণাম ত্যাগ করিলেই উহার নাশ হয়। কাজেই মনোনাশে বাসনানাশ এবং বাসনানাশে মনোনাশ অবশ্যম্ভাবী। তত্ত্বজ্ঞান উৎপন্ন না হইলে রূপরসাদি বিষয়ক চিত্তবৃত্তিসমূহ নিবারণ করা সম্ভব নয়। কারণ, বিষয়রূপ ইন্ধনাদি থাকিলে বৃত্তিরূপ দীপশিখা কখনও নির্বাপিত হইবে না। এই জন্য তত্ত্বজ্ঞান বাসনাক্ষয় ও মনোনাশ একটি অপরটির সাপেক্ষ এবং বাসনানাশে বা মনোনাশে তত্ত্বজ্ঞান অবশ্যম্ভাবী।
পতঞ্জলী সমাধিলাভের উপায়-রূপে তত্ত্বজ্ঞানলাভের জন্য মনঃসংযমসহায়ে বাহ্য ও অন্তঃ প্রকৃতিকে বশীভূত করিতে উপদেশ দিয়াছেন। তাঁহার মতে শরীর ও মন ভিন্ন নয়; উহার শুক্তি ও উহার বাহ্য আবরণের ন্যায় একই বস্তুর দুইটি বিভিন্ন অবস্থা। সূক্ষ্ম মনের শক্তিই স্থূল ভূতের সাহায্যে শরীররূপ বাহ্য আবরণ প্রস্তুত করে। স্থূল জগৎ সূক্ষ্ম জগতেরই বহিঃপ্রকাশ মাত্র। কাজেই মনকে সংযত করিয়া সূক্ষ্ম অন্তর্জগৎকে বশীভূত করিলে স্থূল শরীর ও স্থূল জগৎকে অতি সহজেই বশে আনা যায়। মনোজগৎকে বশীভূত করিবার উপায় তত্ত্বজ্ঞান। ইহা দ্বারা মন নিরুদ্ধ ও অজ্ঞানশূন্য হয়। পতঞ্জলী বলেন, “নিরন্তর বিবেকের অভ্যাস অর্থাৎ পুরুষ হইতে প্রকৃতি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র বলিয়া জ্ঞান অর্জনই অজ্ঞান-নাশের উপায়।” তাঁহার মতে অষ্টাঙ্গ যোগ সাধনের ফলে অপবিত্রতা দূর হইলে চিত্ত শুদ্ধ হইয়া বিবেকজ্ঞান জন্মে। এই জ্ঞানের চরম অবস্থার নাম বিবেকখ্যাতি। ইহা লব্ধ হইলে অজ্ঞান নাশ হয়।
রাজযোগে সমাধিলাভের উপায়রূপে আটটি যোগাঙ্গের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হইয়াছে, যথাঃ “যম নিয়ম আসন প্রাণায়াম প্রত্যাহার ধারণা ধ্যান ও সমাধি।” এই যোগাঙ্গগুলির প্রথম পাঁচটি বহিরঙ্গ সাধন এবং শেষের তিনটি অন্তরঙ্গ সাধন।
“অহিংসা সত্য অস্তেয় ব্রহ্মচর্য ও অপরিগ্রহ—এই পাঁচটিকে যম বলে।”