গুরুজনের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা ও মানসিক উদ্বেগ। কাজকর্মে বড় কোনও পরিবর্তন নেই। বয়স্কদের স্বাস্থ্য সমস্যা ... বিশদ
সেবকঃ মহারাজ, আপনি কি ছোটো থেকেই কবিতা লিখতেন?
মহারাজঃ না। বড় হয়ে যুবক অবস্থায়। ‘কৃত্যং করোতি কলুষং।’ কবিতার নেশা তো ঠাকুরের দিকেই চলে গেল! শরীর তো unfit। যে-পরিবেশে জন্মেছিলাম, কেউ পড়তে বলত না, নিজের ইচ্ছায় স্কুলে যাই, টোলে যাই। স্কুলে প্রথমে প্রণাম করতাম না। গুরুবংশ বলে মাস্টার পড়াতে চায়নি। আমি তো অনেক দিন পরে শ্রীরামকৃষ্ণের পাল্লায় পড়ে নমস্কার করতে লাগলাম—অব্রাহ্মণকেও।
সেবকঃ কী করে প্রথমে ঠাকুরের কথা জানলেন?
মহারাজঃ সে আশ্চর্য ব্যাপার! কী করে যে কী হলো কিছুই বুঝতে পারিনি। ‘বসুমতী’ প্রভৃতি স্বাধীনতা সংগ্রামের কাগজে বিবেকানন্দের নাম পড়তাম। তখন ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দ। অরবিন্দের লেখাতে শ্রীরামকৃষ্ণের কথা জানলাম। শুনে আরো জানতে ইচ্ছা হলো। আমার এক বন্ধু বলল, কথামৃত বলে একটা বইতে শ্রীরামকৃষ্ণের কথা আছে। পড়ে তো মেতে গেলাম! entrance পাস করেছিলাম, বাড়ির ও পড়শির চাপে Law পড়তে গেলাম। জীবনটাকে কীভাবে কাটাব তা ভাবার সুযোগ পেলাম। দেখলাম, সাধন ছাড়া তো জীবন ভয়াবহ। আরো পরে মঠের সাধুদের কথা জানলাম। তিন পয়সার পোস্টকার্ড লিখে হাজির হলাম মাস্টারমশায়ের কাছে। তিনি পাঠিয়ে দিলেন উদ্বোধনে মায়ের কাছে। মাকে প্রণাম করলাম, খুব সম্ভবত চরণে মাথা রেখেছিলাম। আর কোনো কথা বলিনি, নিচে এক সাধু মিষ্টিপ্রসাদ দিলেন।
গিয়েছিলাম দুই বন্ধুর সঙ্গে। তারা মা সম্বন্ধে বলল, ‘বোধ হয় শেষজন্ম, তাই রামকৃষ্ণের স্ত্রী হয়ে জন্মেছেন।’ তখন তো আর অত বুঝিনি। ভাবলাম, হয়তো তা-ই হবে। এরপর একবার জয়রামবাটীতে গিয়ে হাজির। সঙ্গে মোক্ষদাবাবু। বললাম, ‘মা, তোমার কাছে দীক্ষা নেব।’ মা বললেন, ‘বাবা, তোমাদের তো কুলগুরু আছেন, তাঁর কাছ থেকে দীক্ষা নিয়েছ তো।’ আমি অত্যন্ত কাতরভাবে বললাম, ‘না মা, তোমার কাছে না এলে কোথায় যাব?’ এই কথাটা ঠিক consciously বলিনি, হঠাৎ যেন বেরিয়ে গিয়েছিল। মা বললেন, ‘আচ্ছা, আগামী কাল দশটার সময়।’
পরদিন দীক্ষা হলো। কিছুই নয়, কেবল দু-বার করগুণে দেখিয়ে দিলেন। আমার কুলগুরু যা মন্ত্র দিয়েছিলেন তা-ই একটু উলটেপালটে। তখন কী আর জানতাম তিনি সবই জানেন!
সেবকঃ স্বামী ব্রহ্মানন্দ মহারাজকে কেমন দেখেছেন?
মহারাজঃ তাঁদের কী আর বুঝতে পেরেছি? গিয়ে হাঁ করে চুপ করে বসে থাকতাম। একবার শিলেট থেকে দু-জন বন্ধু নিয়ে গিয়েছি। মহারাজ তখন বলরাম মন্দিরে। সাধুরা বললেন, ‘এখন দেখা হবে না।’ বড়ই দুঃখ পেলাম। একটু দেখাও হবে না? নিতান্ত দুঃখিতমনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ওপরদিকে তাকিয়ে দেখি—এক আশ্চর্য ঘটনা! ব্রহ্মানন্দ মহারাজ ওপর থেকে আমাদের দিকে মুখ করে দেখছেন, ঠিক আমাদের দিকে চোখ। তাঁরা তো অন্তর্যামী।