গুরুজনের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা ও মানসিক উদ্বেগ। কাজকর্মে বড় কোনও পরিবর্তন নেই। বয়স্কদের স্বাস্থ্য সমস্যা ... বিশদ
সকল শাখাকেন্দ্রে তাঁর নিয়ত পরিভ্রমণ ছিল বলে বেলুড় মঠে তাঁর থাকা কমই হত। কিন্তু সকল স্থানেই তাঁর প্রতি মানুষের আকর্ষণ ছিল অপ্রতিরোধ্য। বহু ধর্মপিপাসু তাঁর কাছে ছুটে গেছেন আন্তরিক টানে। অন্তরে বাঞ্ছিত শান্তি পেয়ে তাঁরা তৃপ্ত হয়েছেন। মঠে বেশি না থাকলেও যখন আসতেন, মঠের প্রতিটি কাজ তাঁর নখদর্পণে থাকত। মঠের বাগান, গোশালা কিছুই বাদ যেত না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতেন কীভাবে তরকারি কোটা হচ্ছে বা কোথায় কী কাজ কীভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। মহারাজের প্রগাঢ় অধ্যাত্মানুভূতি আর তার ফলস্বরূপ সকলের প্রতি আত্যন্তিক ভালোবাসা তাঁকে নেতৃত্বের যোগ্য করে তুলেছিল। এসম্পর্কে স্বামী সারদানন্দ মহারাজ বলেছেন, “মহারাজ ছিলেন আমাদের পরিচালক। মঠের অধ্যক্ষপদের কর্তৃত্বের দ্বারা নয়। তিনি আমাদিগকে পরিচালন করতেন তাঁর প্রেমের বশীকরণ শক্তি দ্বারা।”
কোনও জটিল সমস্যার মূলে প্রবিষ্ট হয়ে তার কারণ উদ্ধার করে সমাধানের উপায় নির্ধারণ করা মহারাজের সহজাত ছিল। কাশীর ঘটনা তা প্রমাণ করে। ওই কেন্দ্রে সাধুদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়ে এক জটিল পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। মহারাজ সেখানে উপস্থিত হয়ে কোনও রাগারাগি বা যুক্তিবিচারের প্রচলিত পথে হাঁটলেন না। শুধু জপধ্যান করে যেতে থাকলেন। দেখা গেল এমন এক পরিবেশের সৃষ্টি হল যে মহারাজকে কেন্দ্র করে সকলে জপধ্যানে, সাধনভজনে মেতে উঠলেন। এক আধ্যাত্মিক আবর্তের সৃষ্টি হল। এমনকি কেউ কেউ বাইরে তপস্যায় যেতেও উৎসাহী হয়ে উঠলেন। এভাবেই ওই কেন্দ্রের একটি বড়ো সমস্যার সুমীমাংসা হয়ে গেল। মহারাজ বুঝেছিলেন সমস্যার মূল কোথায়। তাই তাঁর অনন্যসাধারণ ব্যক্তিত্বের প্রভাবে পরিস্থিতিই পরিবর্তিত হল। মহারাজের মুখে বহুবার শোনা গেছে, মঠ ও মিশনের কোনও কেন্দ্রে আধ্যাত্মিকক্ষেত্রে কোনও ত্রুটি হলেই তার প্রভাবে পারস্পরিক ভুল বোঝাবুঝির সূত্রপাত হয় ও পরিবেশ তার স্বাচ্ছন্দ্য হারায়। মহারাজের মানুষ চেনার ক্ষমতা ছিল অপরিসীম। কাকে দিয়ে কীভাবে কতটা কাজ করানো যাবে, মহারাজ খুব ভালোভাবে বুঝতে পারতেন ও সেইভাবে তাকে পরিচালিত করতেন। এসবের মূলে ছিল সকলের প্রতি তাঁর অগাধ ভালোবাসা ও সপ্রেম ব্যবহার।