আবেগের বশে কোনও কাজ না করাই ভালো। দাম্পত্য জীবনে বনিবনার অভাবে সংসারে অশান্তি বাড়বে। কর্মে ... বিশদ
আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়াতে জগন্নাথের রথযাত্রা উৎসব আরম্ভ হয়। রথোপরি ডানে প্রভু জগন্নাথ, মাঝখানে তাঁর বোন সুভদ্রা এবং বামে বলভদ্র। অর্থাৎ কৃষ্ণ, সুভদ্রা ও বলরাম রথে আসীন থাকেন। অসংখ্য ভক্ত ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সুসজ্জিত রথ টেনে নিয়ে যান। খুব শক্ত, মোটা রশি দৃঢ়ভাবে রথের সাথে সংযুক্ত থাকে যাতে ভক্তদের কোন অসুবিধা না হয়। ভক্তদের বিশ্বাস রথোপরি আসীন দেবমূর্তি দর্শন ও রথ টেনে নেওয়ার সুযোগ তাঁদের জন্য দেবতার আশীর্বাদ লাভের সহায়ক।
উল্লেখ্য কাঠোপনিষদে আছে—
আত্মানং রথিনং বিদ্ধি শরীরং রথমেব তু।
বুদ্ধিং তু সারথিং বিদ্ধি মনঃ প্রগ্রহমেব চ।।
—অর্থাৎ আত্মা হলেন রথী বা রথের মধ্যে অবস্থানকারী। রথ হলো শরীর বা দেহ যন্ত্র। বুদ্ধি হল সারথি বা চালক। মনকে লাগাম-এর সাথে তুলনা করা হয়েছে। ইন্দ্রিয়গুলো অর্থাৎ অশ্ব বা ঘোড়ার সাথে তুলনা করা যায়। পৃথিবীর যত রকম ভোগ করার বিষয় আছে—সেই বিষয়গুলি হলো রথের গমন পথ বা সড়ক। অশ্ব বা ঘোড়াগুলো ভাল হলে অর্থাৎ সুনিয়ন্ত্রিত হলে রথটাকে সারথি সঠিকভাবে লক্ষ্যপথে পৌঁছে দিতে পারবে। আর যদি দুষ্ট হয় অর্থাৎ অসংযত হয় তাহলে রথকে তারা কোথায় নিয়ে ফেলবে কে জানে?
প্রকৃতপক্ষে, মানবের জীবনে রথের প্রতীকমাত্র। ভোগের পথ ছেড়ে মুক্তির পথে যে যেতে চায় তার জীবন সুনিয়ন্ত্রিত হতে হবে; শান্ত হতে হবে, সমাহিত হতে হবে। রথের রথী অর্থাৎ অন্তর্যামী, তিনি নির্লিপ্ত। তাঁর যথার্থ স্বরূপ এই নির্লিপ্ততা। সেই স্বরূপকে এই দেহরথের মধ্যে উপলব্ধি করতে হবে। অতি সূক্ষ সেই অন্তরাত্মা পুরুষ মানুষের হৃদয়ে সর্বদা অবস্থান করেন। তিনিই রথী। এই রথীর দর্শন বা সাক্ষাৎকার হলেই মুক্তি।
জ্যোতির্বিদ্যায় উল্লেখ আছে বিষুবরেখা থেকে সূর্য একবার উত্তরে এবং একবার দক্ষিণে বাৎসরিক পরিক্রমণ করে। সূর্য সপ্ত অশ্বচালিত রথে আষাঢ় মাসে উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়ন পরিক্রমণ করে। সূর্যের এই বিষুবরেখা উত্তর ও দক্ষিণে পরিক্রমণের সাথে এই রথযাত্রার ও ফিরতিযাত্রার মিল রয়েছে। এই দুটো যাত্রা হয়ে থাকে আষাঢ় মাসে যখন পুরোপুরি বর্ষা নামে এবং পূর্ণোদ্যমে কৃষিকাজ আরম্ভ হয়। বর্ষাকালে অষ্ট্রিক জাতীয় লোকেরা একটি উৎসবের আয়োজন করতো যাতে তাদের ভাল শস্য হয় এবং তাদের আর্থিক ও সার্বিক উন্নতি হয়। পুরাণে পাওয়া যায় অনার্য শিকারী সম্প্রদায়ের দলপতি বিশ্ববসু নামে এক সবর নীলমাধব নামে জগন্নাথের পূজা করতেন। এতে বোঝা যায় জগন্নাথ অনার্যদেরও দেবতা ছিলেন।
স্বামী অক্ষরানন্দের ‘মহাশক্তির বিচিত্র প্রকাশ’ থেকে