আবেগের বশে কোনও কাজ না করাই ভালো। দাম্পত্য জীবনে বনিবনার অভাবে সংসারে অশান্তি বাড়বে। কর্মে ... বিশদ
শ্রীকৃষ্ণ সব কাজই করেছিলেন, কিন্তু আসক্তি বর্জিত হ’য়ে। তিনি সংসারে ছিলেন বটে, কিন্তু কখনই সংসারের হ’য়ে যাননি। সকল কাজ কর, কিন্তু অনাসক্ত হয়ে কর; কাজের জন্যই কাজ কর, কখনও নিজের জন্য করো না।
নামরূপাত্মক কোন কিছু কখনই মুক্তস্বভাব হতে পারে না। মৃত্তিকা-রূপ আত্মা থেকে ঘটাদির মতো আমরা হয়েছি; এ অবস্থায় আত্মা সীমাবদ্ধ—আর মুক্ত নন; আপেক্ষিক সত্তাকে কখনও মুক্ত বলা যেতে পারে না। ঘট যতক্ষণ ঘট থাকে, ততক্ষণ সে কখনই বলতে পারে না, ‘আমি মুক্ত’; যখনই সে নাম-রূপ ভুলে যায়, তখনই মুক্ত হয়। সমুদয় জগৎটাই আত্মস্বরূপ—বহুভাবে অভিব্যক্ত, যেন এক সুরের মধ্যেই নানা রূপরং তোলা হয়েছে তা না হলে একঘেয়ে হয়ে পড়ত। সময়ে সময়ে বেসুরো বাজে বটে, তাতে বরং পরবর্তী সুরের ঐকতান আরও মিষ্ট লাগে। মহান বিশ্বসঙ্গীতে তিনটি ভাবের বিশেষ প্রকাশ দেখা যায়—সাম্য, শক্তি ও মুক্তি।
যদি তোমার স্বাধীনতা অপরকে ক্ষুণ্ণ করে, তা হলে বুঝতে হবে তুমি স্বাধীন নও; অপরের কোন প্রকার ক্ষতি কখনও করো না।
মিল্টন বলেছেন, ‘দুর্বলতাই দুঃখ।’ কর্ম ও ফলভোগ—এই দুটির অবিচ্ছিন্ন সম্বন্ধ। অনেক সময়েই দেখা যায়, যে বেশী হাসে, তাকে কাঁদতোও হয় বেশি—যত হাসি তত কান্না। ‘কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন’—কর্মেই তোমার অধিকার, ফলে নয়। জড়বাদের দৃষ্টিতে দেখলে কুচিন্তাগুলিকে রোগবীজানু বলা যেতে পারে। আমাদের দেহ মন যেন লৌহপিণ্ডের মতো আর আমাদের প্রত্যেক চিন্তা যেন তার উপর আস্তে আস্তে হাতুড়ির ঘা মারা—তাই দিয়ে আমরা দেহটাকে যেভাবে ইচ্ছা গঠন করি।
আমরা জগতের সমুদয় শুভচিন্তারাশির উত্তরাধিকারী, অবশ্য যদি সেগুলিকে আমাদের মধ্যে অবাধে আসতে দিই। শাস্ত্র তো সব আমাদের মধ্যেই রয়েছে। মূর্খ শুনতে পাচ্ছ না কি, তোমার নিজ হৃদয়ে দিবারাত্র সেই অনন্ত সঙ্গীত ধ্বনিত হচ্ছে—‘সচ্চিদানন্দ: সচ্চিদানন্দ, সোহহং সোহহম্।’
আমাদের প্রত্যেকের ভিতর কি ক্ষুদ্র পিপীলিকা, কি স্বর্গের দেবতা—সকলেরই ভিতর অনন্ত জ্ঞানের প্রস্রবণ রয়েছে। প্রকৃত ধর্ম একটিই। আমরা তার বিভিন্ন রূপ নিয়ে, বিভিন্ন প্রতীক নিয়ে—তার বিভিন্ন প্রকাশ নিয়ে ঝগড়া করে মরি। যারা খুঁজতে জানে, তাদের কাছে সত্যযুগ তো এখনই রয়েছে। আমরা নিজেরাই নষ্ট হয়েছি, আর মনে করছি—জগৎ সংসার গোল্লায় গেছে। এ জগতে পূর্ণশক্তির কোন কার্য থাকে না। তাকে কেবল ‘অস্তি’ বা ‘সৎ’ মাত্র বলা যায়, তার দ্বারা কোন কাজ হয় না।
যথার্থ সিদ্ধিলাভ এক বটে, তবে আপেক্ষিক সিদ্ধি নানাবিধ হতে পারে।