সন্তানের কর্ম সাফল্যে মানসিক প্রফুল্লতা ও সাংসারিক সুখ বৃদ্ধি। আয়ের ক্ষেত্রটি শুভ। সামাজিক কর্মে সাফল্য ... বিশদ
কিন্তু তারপর পেনশনের অঙ্ক কত বেড়েছে? মোদিযুগে এনডিএ সরকার, এমনকী বিজেপি সরকারও কিছু করে না। যা-কিছু ভালো হয় তার সবই নাম পায় ‘নরেন্দ্র মোদির গ্যারান্টি’। অবশ্য নিজের গুণকীর্তন মোদিজি নিজেই করতে ভালোবাসেন, লোকে নিন্দে করলে, নিদেন পক্ষে হাসাহাসি করলেও তিনি তা গায়ে মাখেন না। তা এরকমই একটি গ্যারান্টি প্রাপ্তি হয়েছিল পিএফ গ্রাহকদেরও। এই প্রধানমন্ত্রীই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, একজন পিএফ গ্রাহক অবসর নিয়ে ন্যূনতম এক হাজার টাকা পেনশন পাবেন। কিন্তু এই জমানার ভুক্তভোগীরা কী দেখছেন? এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্গানাইজেশন (ইপিএফও) সম্প্রতি প্রকাশ করেছে তাদের ২০২৩-২৪ সালের আর্থিক রিপোর্ট। সেটি পেশ করা হয়েছে কেন্দ্রীয় অছি পরিষদের বৈঠকে। সারা দেশে ২০২৪ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত পিএফের আওতায় পেনশন পেয়েছেন সাড়ে ৭৮ লক্ষাধিক প্রবীণ ব্যক্তি বা পরিবার। ইপিএফও’র রিপোর্ট বলছে, তাঁদের মধ্যে ৩৬ লক্ষ ৭০ হাজারের বেশি ইপিএফও গ্রাহককে এক হাজার টাকার কম পেনশন দেওয়া হচ্ছে। এমনকী, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের তুলনায় এক হাজার টাকার নীচের পেনশনভোগীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৩০ হাজার! বঞ্চিত বয়স্ক বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা বলছেন, বেশিরভাগেরই মাসিক পেনশন ঘোরাফেরা করে ৩০০-৪০০ টাকার মধ্যে! অর্থাৎ পেনশনভোগীদের প্রায় অর্ধেককেই পেনশনের নামে নির্মমভাবে ধোঁকা দিয়ে চলেছে মোদি সরকার। গালভরা ‘গ্যারান্টি’র এর চেয়ে নিকৃষ্ট ‘জুমলা’ ভারতবাসীর আর জানা নেই।
প্রতিটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র নাগরিকদের ভালোভাবে বাঁচার অধিকার দেয়। একজন মানুষ তাঁর যোগ্যতা অনুযায়ী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ লাভের পর কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। কিন্তু জীবজগতের নিয়মে একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর তাঁদের কর্মজীবন থেকে অবসর নিতেই হয়। তখন সমস্যা দু’গুণ—একদিকে বেতন বা অন্য সূত্রে রোজগার শূন্যে নেমে আসে এবং বেড়ে চলে চিকিৎসা খরচ। তার জন্যই সভ্য সমাজ পেনশন প্রদানের ধারণাটি গ্রহণ করেছে। ভারতের মতো দেশে, যেখানে চাকরি কিংবা সমতুল সূত্রে পেনশন পাওয়ার সুযোগ নেই, সেখানে সামাজিক কল্যাণমূলক প্রকল্প রূপায়ণ করতে হয় সরকারকে। একটি বয়স্ক দম্পতি যাতে আমৃত্যু ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারেন, তার আর্থিক দায়িত্ব সরকারকে নিতে হয়। এটাকে রাষ্ট্রর অনুকম্পা নয়, নাগরিকের অধিকার হিসেবেই দেখা উচিত। কেননা, নাগরিক কর্মজীবনে তাঁর উপার্জনের একটা বড় অংশ কর হিসেবে সরকারের কোষাগারে নিয়মিত জমা করেছেন। প্রয়োজনীয় পেনশনের অধিকার জন্মায় তাঁর সেখান থেকেই। এছাড়া নিজের বেতন থেকে এবং নিয়োগকর্তার তরফেও পেনশন ফান্ডে কর্মজীবনের কিছু টাকা জমা করা হয়। তার পরেও অবসরপ্রাপ্ত পিএফ গ্রাহকদের এই ‘ধারাবাহিক বঞ্চনা’ জোটে! এই অন্যায়কে রাষ্ট্রের তরফে ‘প্রতারণা’ বললেও অত্যুক্তি হয় না। অথচ এমএলএ, এমপি এবং মন্ত্রীরা—সারা জীবনে কোনও আর্থিক দায়-দায়িত্ব পালন না করেই মোটা টাকা পেনশন এবং অন্যান্য আর্থিক সুবিধা ভোগ করেন। আপনা হাত জগন্নাথের এর চেয়ে লাগসই উদাহরণ কমই হয়। আইনসভার সদস্যরা নিজেদেরটাই গুছিয়ে নিতে ওস্তাদ, যাঁদের টাকায় এত কাপ্তেনি, তাঁদের দিকে ফিরে তাকাবার কোনও তাগিদ মাতব্বরদের নেই। একদিকে একদল মানুষ নিষ্ঠাসহকারে আজীবন দেশের কাজ করে ধুঁকছেন, অন্যদিকে আর একদল মানুষের ব্যক্তিগত সম্পদে লাগছে ম্যাজিকের স্পর্শ। চলতি বছরে ভারতে বসবাসকারী ধনকুবেরের সংখ্যা ১৮৫ ছুঁয়েছে। তাতে দুনিয়ায় তৃতীয় স্থানে ভারত—যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের পরেই। ইউবিএসের বিলিয়নেয়ার অ্যাম্বিশনস রিপোর্ট অনুসারে, গত একবছরে ভারতের ধনকুবরেদের তালিকায় ৩২ জন যুক্ত হয়েছেন। তাঁদের মোট সম্পদের বৃদ্ধি ঘটেছে ৪১.১ শতাংশ। এরপরও কি আমরা ‘মেরা ভারত মহান’ উচ্চারণে কুণ্ঠিত হব? আমরা কি উপলব্ধি করতে ভুলে যাব যে, সত্যিই পৌঁছে গিয়েছি, ‘আচ্ছে দিনে’ এবং ‘অমৃতকালে’!