সন্তানের কর্ম সাফল্যে মানসিক প্রফুল্লতা ও সাংসারিক সুখ বৃদ্ধি। আয়ের ক্ষেত্রটি শুভ। সামাজিক কর্মে সাফল্য ... বিশদ
মঙ্গলবার সন্ন্যাসীকে চট্টগ্রাম মহানগর আদালতে পেশ করা হয়। কয়েক হাজার ক্ষুব্ধ মানুষও জড়ো হন সেখানে। ধৃতের মুক্তির দাবিতে এজলাসেই স্লোগান দেন একদল আইনজীবী। ধৃতকে হেফাজতে নিতে চায়নি পুলিস। কিন্তু তাঁর অবশ্যপ্রাপ্য জামিন নাকচ করে সন্ন্যাসীকে সটান জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন ‘নব্য স্বাধীন’ বাংলাদেশের এক বিচারক। তবে ওই ‘অতিশয় নিরপেক্ষ’ বিচারক তাঁর নির্দেশের সঙ্গে ফুটনোটও দিতে ভোলেননি যে, চিন্ময়কৃষ্ণের ধর্মীয় অধিকার সুরক্ষিত রাখতে হবে! বিচারকের পবিত্র আসন থেকে এমন প্রহসন-মশকরা মেনে নিতে পারেননি নোবেলজয়ী ইউনুস সাহেবের বাংলাদেশ জুড়ে নির্যাতনের শিকার হিন্দুরা। আদালত চত্বরে উপস্থিত জনতার ক্ষোভের আগুনে ঘৃতাহুতির কাজ করে বিচারকের এই ভূমিকা। পরিস্থিতি এমন জটিল হয়ে ওঠে যে, প্রিজন ভ্যান ঘিরেই শুরু হয় বিক্ষোভ। মুহুর্মুহু স্লোগান ওঠে ‘চেয়েছিলাম অধিকার, পেয়ে গেলাম কারাগার’! তিনঘণ্টার বিক্ষোভ দমাতে ভয়াবহ বলপ্রয়োগ করে পুলিস। সংঘর্ষ চলাকালে এক সরকারি আইনজীবীকে কুপিয়ে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। ২০ জনের মতো আইনজীবী জখমও হন প্রশাসনের মদতে সংঘটিত এই অবাঞ্ছিত কাণ্ডে। সেদিনই রাতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে হিন্দুদের উপর মৌলবাদীদের ফের নির্মম হামলার দুঃসংবাদ মেলে।
ধর্মের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে ভাগ হয়েছিল ভারত। কিন্তু বছরকয়েকের মধ্যেই জিন্নাদের দ্বিজাতি তত্ত্বের অসারতার প্রমাণ মেলে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (পূর্ববঙ্গ) মাথাচাড়া দেয় বাঙালি জাতিসত্তার আন্দোলন। সেই আন্দোলন সমাপ্ত হয় ১৯৭১-এ স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের মাধ্যমে। বাংলাদেশ নির্মাণে রক্ত দিয়েছিল আপামর বাঙালি। ওইসঙ্গে কূটনৈতিক সহযোগিতার অভূতপূর্ব নিদর্শন রেখেছিল ভারত। তাই স্বাধীন বাংলাদেশের জননায়ক শেখ মুজিবুর রহমান কলকাতায় ব্রিগেড ময়দানে এক ঐতিহাসিক সমাবেশে যোগ দিয়ে মুক্তকণ্ঠে বলেন, ‘ভারতের এই ঋণ বাংলাদেশ কোনোদিনই শোধ করতে পারবে না।’ ওইসঙ্গে তিনি ঘোষণা করেন, বাংলাদেশ এখন প্রকৃত অর্থেই স্বাধীন ও সার্বভৌম এবং সেখানে সবাই বসবাস করবেন ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমতার ভিত্তিতে। অমনি পাকিস্তানের দালাল বাহিনীর বিষনজরে পড়ে যান বঙ্গবন্ধু। তারাই ১৯৭৫-এ ভারতের স্বাধীনতা দিবসে মুজিবকে সপরিবারে (কন্যা হাসিনাসহ দু’জন বেঁচে যান দৈবক্রমে) হত্যা করে। দীর্ঘদিন পর হাসিনা রাষ্ট্রক্ষমতা হাতে পেতেই তাঁকেও উৎখাত প্ল্যান করা হয়। অতএব, সত্যি-মিথ্যের গল্প ফেঁদে প্রথমে তাঁকে জনসমাজে হেয় করা হয়, অতঃপর ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন’-এর ধুয়ো তুলে ক্ষমতাচ্যুত, এমনকী দেশান্তরীও করা হয় প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে। দেশভাগের পর পাকিস্তান প্রায় হিন্দুশূন্য করে ফেলা হয়েছে। বাংলাদেশও যে ওই পথেই হাঁটছে, তার প্রমাণ ১৯৪৭-১৯৭১ এবং ১৯৭১-২০২৪ পর্বের সরকারি পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট: ২৮-২২ শতাংশ এবং ২২-৭ শতাংশ। এই সামান্য সংখ্যক হিন্দুও অনেকের কাছে অসহ্য। এই নিরীহ মানুষগুলিকে সমূলে উৎখাত করাই ক্ষমতার নব্য কারবারিদের ধ্যানজ্ঞান। রাষ্ট্রীয় মদতে এই পরিষ্কার ‘এথনিক ক্লিনসিং’ নীতির বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু সমাজে শুরু হয়েছে জনগর্জন। ২২ নভেম্বর সনাতনী জাগরণ মঞ্চের এক সমাবেশ থেকে সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ হুঁশিয়ারি দেন, কেউ যদি হিন্দুদের উৎখাত করে ‘শান্তিতে’ থাকার চেষ্টা করে তাহলে বাংলাদেশের ভূমি আফগানিস্তান বা সিরিয়ায় পরিণত হবে। ইউনুস জমানায় ক্রমবর্ধমান অত্যাচার বন্ধসহ আটদফা দাবিও রাখেন তাঁরা। অমনি শুরু হয়েছে চিন্ময়কৃষ্ণকে সামনে রেখে হিন্দুদের শায়েস্তা করার পালা। রাষ্ট্রের এই অমানবিক ও একচক্ষু ভূমিকা অত্যন্ত নিন্দনীয়। সন্ন্যাসীর নিঃশর্ত মুক্তি তো দিতেই হবে, ওইসঙ্গে দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে সকলকে সমানাধিকারের ভিত্তিতে বাঁচার দিকটি। তারপরও বাংলাদেশ ‘ব্যর্থ’ রাষ্ট্রের নজির রাখলে আন্তর্জাতিক মহলের উচিত হবে তাদের উপর সবরকমে চাপ সৃষ্টি করা।