সন্তানের কর্ম সাফল্যে মানসিক প্রফুল্লতা ও সাংসারিক সুখ বৃদ্ধি। আয়ের ক্ষেত্রটি শুভ। সামাজিক কর্মে সাফল্য ... বিশদ
এই ‘সবাই রাজা’ মানেতেই প্রজাতন্ত্র বা সাধারণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার গূঢ় অর্থ ছিল। স্বাধীন দেশের সংবিধানের চোখে সকলের সমান অধিকার থাকবে, বলবৎ হবে সাধারণের তন্ত্র। উদ্দেশ্য ছিল সংবিধানের মধ্য দিয়েই ভারতীয় গণতন্ত্রের মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হবে। সাত দশক পরেও সেই মূর্তি বিরাজমান। কিন্তু প্রাণশক্তির কতটা অবশিষ্ট আছে সেই অনিবার্য প্রশ্নটি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে এখন। একথা ঠিক, সংবিধান মেনে দেশে নির্বাচন হচ্ছে, রাজনৈতিক দল বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি ও জুমলা বিতরণ করছে। ভোটে জিতে একদল ক্ষমতায় বসছে, তারা দেশও শাসন করছে। কিন্তু ‘সাধারণের তন্ত্র’ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে কই! সংবিধান অনুযায়ী, সাধারণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রধান শর্তই হল, শাসক জনগণের কথা শুনবে, বিরুদ্ধ মতকে স্বীকৃতি দিয়ে রাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করবে। এই স্বীকৃতির উপরেই কিন্তু যথার্থ সাধারণতন্ত্র দাঁড়িয়ে আছে। যে শাসক এটা মানে না, সে সাধারণতন্ত্রের ধারক নয়, ঘাতক। ভারতের বর্তমান শাসকপক্ষ বিরোধী মত দূরের কথা, প্রশ্ন শুনতেও নারাজ। এই অবজ্ঞা প্রদর্শনে প্রধান পুরোহিতের নাম নরেন্দ্র মোদি। গত দশ বছরের শাসনকালে তাঁকে কোনও প্রশ্নোত্তরে সেভাবে দেখা যায়নি! বরং শাসকের চোখে বিরোধী স্বর মানেই রাষ্ট্রদ্রোহী, যার প্রাপ্য হুমকি, কারাবাস, এমনকী মৃত্যুও। একমাত্র বিনা প্রশ্নে একাধিপত্য স্বীকার করে নেবে—এমন ‘প্রজা’ চায় দেশের বর্তমান শাসকেরা। প্রকৃত গণতন্ত্র নয়, তার মোড়কে নির্ভেজাল সংখ্যাগুরুবাদই এই রাষ্ট্রনায়কদের ধর্ম। সাধারণকে দাবিয়ে রাখার অনুশীলনের মধ্যেই সাধারণতন্ত্র দিবসের ডাক দেওয়াটা আসলে আত্মপ্রবঞ্চনা।
বর্ষপূর্তি উদযাপনে আনন্দ নয়, দেশবাসীর কাছে মোদিবাহিনীর ক্ষমা চাওয়া উচিত। কারণ সংবিধান হাতে মন্ত্রগুপ্তির শপথ নিয়ে দেশটাকে তারা ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করতে চায়। স্বাধীনতার ৭৭ বছর পরও সংবিধান বর্ণিত নাগরিকের খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের মৌলিক অধিকার চূড়ান্ত মাত্রায় অবহেলিত। বহির্বিশ্বের কাছে দারিদ্র্য-অশিক্ষা-বেকারত্ব এদেশের সবচেয়ে বড় পরিচয় হয়ে উঠেছে। দেশের সংবিধান প্রণেতারা আর্থিক অসাম্য দূর করে সামাজিক সাম্যের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর মোদি জমানায় অসাম্য অতীতের সব রেকর্ডকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। এখানেই থেমে নেই শাসকদল। তারা মনেপ্রাণে চাইছে, সংবিধানটাই পাল্টে দিতে। সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা, সাধারণতন্ত্রের মতো যে শব্দগুলি বহু ভাষাভাষী এই দেশের মূল ভাবনাকে তুলে ধরেছে, উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা তা সমূলে উৎপাটিত করতে চাইছে। স্বৈরাচারী শক্তির সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন আম্বেদকর। দেখা যাচ্ছে, তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাচ্ছে। তাই স্বাধীনতার ৭৫ বছরের মতো সংবিধানের ৭৫ বছর উদযাপনও যে আসলে মোদি ‘সাধু’ সাজার চেষ্টা, তা বলাই বাহুল্য।