গুরুজনের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা ও মানসিক উদ্বেগ। কাজকর্মে বড় কোনও পরিবর্তন নেই। বয়স্কদের স্বাস্থ্য সমস্যা ... বিশদ
অর্থাৎ শেষ তিনদফার ভোটের মুখে কেন্দ্রীয় শাসকের বঙ্গ বিগ্রেডের প্রধান সেনাপতির বিরুদ্ধে যথেষ্ট কঠোর অবস্থানই নিয়েছে কমিশন। কোনও সন্দেহ নেই, এতে রীতিমতো মুষড়ে পড়েছেন বঙ্গ বিজেপির নেতা-কর্মীরা। এই ঘটনা যে জোড়াফুল শিবিরকে নির্বাচনী যুদ্ধে বাড়তি অক্সিজেন জোগাচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ৪ মে রাজ্যের কিছু খবরকাগজে তৃণমূলের বিরুদ্ধে একটি বিজ্ঞাপন দেয় বিজেপি। সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে ‘সনাতন বিরোধী তৃণমূল’ আখ্যা দেওয়া হয়। বাংলা ভাষায় প্রকাশিত ওই বিজ্ঞাপনে ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টিকারী একাধিক মন্তব্য এবং দুর্নীতির বিষয়ে কিছু অবান্তর অভিযোগ ছিল বলেও সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি। তার প্রেক্ষিতে ওইদিনই দিল্লিতে তৃণমূল নেতারা লিখিতভাবে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। অতঃপর, রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের (সিইও) দপ্তর থেকে ওই বিজ্ঞাপনের ইংরেজি ও হিন্দি তর্জমা তলব করে দিল্লির নির্বাচন সদন। তার ভিত্তিতেই বঙ্গ বিজেপির সভাপতিকে শো-কজ নোটিস পাঠায় কমিশন। ভোটের বহু আগে থেকেই সবক’টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে কমিশন বৈঠক করে। নির্বাচন চলাকালে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বিজ্ঞাপন প্রচারে রাজনৈতিক দলগুলির তরফে কী ধরনের সতর্কতা গ্রহণ আবশ্যক, তা সেদিনই জানিয়ে দেওয়া হয় সবিস্তারে। কমিশনেরও কোনও কোনও অফিসার মনে করেন, বিজেপি থেকে প্রকাশিত ওই বিজ্ঞাপনগুলি যুগপৎ আপত্তিকর, বিতর্কিত এবং কমিশনের নির্দেশিকার পরিপন্থী।
এই ধারণা বিজেপি নেতৃত্বেরও অজানা ভাবার কোনও কারণ নেই। তাই বিজেপির এই বিজ্ঞাপনী প্রচার পদক্ষেপটি তাদের বিশেষ রাজনৈতিক পরিকল্পনার অংশ ভেবে নেওয়াই সহজ অনুমান। বিশেষত, সব ছেড়ে ‘মেরুকরণ’ এবং বিরোধী শক্তিকে ‘ম্যালাইন’ করাই যাদের শেষ অস্ত্র, তাদের পক্ষে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দেশের শাসক এবং বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বলেই তারা পার পেয়ে যেতে পারে না। দেশে এখনও গণতন্ত্র, সংবিধান, আইনের শাসন এবং নির্বাচন বিধি বহাল রয়েছে। তাই এই ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপটি যথার্থ এবং প্রশংসনীয়। তবে তারা যেন শুধুমাত্র আইন বাঁচিয়েই ক্ষান্ত না-হয়। তাদের দেওয়া ৭২ ঘণ্টার সময়সীমার মধ্যেই যাতে বিজেপি জবাব দেয়, তা নিশ্চিত হওয়া জরুরি। বিজেপির জবাব সন্তোষজনক না-হলে যেন কোনোভাবেই রেয়াত করা না-হয় তাদের। উল্লেখ্য, এই ভোট পর্বেই কমিশনের তরফে রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষকেও শো-কজ করা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই তা করা হয়। এমনকী, একই ধরনের অভিযোগে নির্বাচন কমিশনে অভিযুক্ত স্বয়ং প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। আমরা জানি, তিনি তমলুকের বিজেপি প্রার্থী। তাঁকেও শো-কজ নোটিস ধরানো হয়েছে। এই তিনটি শো-কজেরই যথাযথ জবাব আদায় করা কমিশনের দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনে কমিশনের সাহসী ও নিরপেক্ষ ভূমিকার উপরেই নির্ভর করছে নির্বাচন পরিচালনায় কাঙ্ক্ষিত স্বচ্ছতা রক্ষার বিষয়টি।