গুরুজনের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা ও মানসিক উদ্বেগ। কাজকর্মে বড় কোনও পরিবর্তন নেই। বয়স্কদের স্বাস্থ্য সমস্যা ... বিশদ
শুধু মেরুকরণের কথাই নয়, মোদির বিরুদ্ধে মনগড়া তথ্য দিয়ে অসত্য প্রচারের অভিযোগও তুলেছে বিরোধীরা। যেমন মোদি বলছেন, দেশের শিশুরা তাঁর উত্তরসূরি। অথচ ঘটনা হল, বিশ্বের মধ্যে ভারতেই সবচেয়ে বেশি শিশু অভুক্ত থাকে। সংখ্যাটা প্রতিদিন ৬৭ লক্ষ। তৃণমূল মোদির দেওয়া নানা তথ্য খণ্ডন করেছে। যেমন মোদির দাবি, তাঁর দশ বছরের শাসনে দেশের ২৫ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমা থেকে বেরিয়ে এসেছেন। প্রকৃত সত্য হল, দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা এখনও ভারতেই সবচেয়ে বেশি। ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, ১৮ কোটি মানুষ দিনে ১৮০ টাকারও কম উপার্জন করেন। মোদির প্রচার, পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়ন নিয়ে তৃণমূলের কোনও দিশা নেই। বাস্তব ছবিটা হল, শেষ বারো বছরে বাংলার জিডিপি ৫ লক্ষ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৯ লক্ষ কোটি টাকা। মাথাপিছু বাৎসরিক আয় ৫১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১ লক্ষ ৪১ হাজার টাকা। মোদি বলছেন, পিএম কিষান সম্মাননিধি প্রকল্পে ৫০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। তথ্য বলছে, এই প্রকল্পে দেশের ৪২ লক্ষ কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মাত্র ৩ হাজার কোটি টাকা জমা পড়েছে। কিন্তু মমতার সরকার রাজ্যের এক কোটির বেশি কৃষককে ১০ হাজার টাকা করে দিয়েছে। বাংলায় কৃষকের আয় এখন তিনগুণ হয়েছে। মোদির দাবি, বাংলায় পিছিয়ে পড়া মানুষের অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে তৃণমূল। ঘটনা হল, কেন্দ্রের বিভিন্ন মন্ত্রকে এসটি, এসসি, ওবিসিদের জন্য সংরক্ষিত ৪২ হাজার পদ খালি পড়ে রয়েছে। ১০ হাজার খালি পদ রয়েছে একলব্য স্কুলগুলিতে। এই মোদি জমানায় এসটি, এসসি সম্প্রদায়ের মানুষের উপর অপরাধের ঘটনা বেড়েছে ১৩ শতাংশ। এসটির ক্ষেত্রে তা ১৪ শতাংশ। মোদির ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’-এর প্রচারকে কটাক্ষ করে বিরোধীরা বলছে, মাথাপিছু আয়ে ২০১৪তে ভারত ছিল ৫৫ নম্বরে। এখন দেশ নেমে দাঁড়িয়েছে ১১১ নম্বরে। মাত্র ১ শতাংশ মানুষের হাতে দেশের ৪০ শতাংশ সম্পদ গচ্ছিত। অন্যদিকে, নীচের তলার ৫৫ শতাংশের হাতে রয়েছে মাত্র ৩ শতাংশ সম্পদ।
এসব তথ্য মোদি জানেন না তা নয়। আসলে এই বাস্তব ছবিটা সামনে থাকায় তিনি ‘অসত্য’ সব তথ্যের আশ্রয় নিচ্ছেন বলে অভিযোগ। তার চেয়েও বেশি, মেরুকরণের রাজনীতিতে ভর করে ভোট বৈতরণী পার হতে চাইছেন। সন্দেহ নেই, বাকি পাঁচ দফা ভোটে মোদির এই আগ্রাসী বিদ্বেষ প্রচার ও অসত্য তথ্য পরিবেশনের প্রবণতা বাড়বে। এতে কিছু মানুষ হয়তো বিভ্রান্তও হবেন, কিন্তু তাতে ক্ষমতায় ফেরার লক্ষ্যপূরণ হবে— এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। বরং ভারতের মতো বহু ভাষাভাষী দেশের ভোটাররা ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র ধরে রাখতে মোদিবাহিনীকে সমুচিত জবাব দেবেন—এই আশা অমূলক নয়। সবটাই নির্ভর করছে জনতার রায়ের উপর। দেশ শাসক তাঁদের বোকা ঠাওরে যদি অসত্য তথ্য দিয়ে মন জয়ের চেষ্টা করেন তাহলে তা অবিবেচকের মূর্খামি বলে গণ্য হতে পারে।