গুরুজনের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা ও মানসিক উদ্বেগ। কাজকর্মে বড় কোনও পরিবর্তন নেই। বয়স্কদের স্বাস্থ্য সমস্যা ... বিশদ
বিরোধীদের মুখ বন্ধ করতে কুখ্যাত ইউএপিএ আইনে মামলা ও ধরপাকড় মোদি জমানায় কয়েকগুণ বেড়েছে। এই আইনে গ্রেপ্তারে সুবিধা হল, অভিযুক্তকে বিনা বিচারে যতদিন খুশি জেলে আটকে রাখা যায়। সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্তদের এই আইনে মামলা বা গ্রেপ্তারের একটা যুক্তি থাকতে পারে। কিন্তু মোদি সরকার এই আইনে ছাত্র, সাংবাদিক, সমাজকর্মী, মানবাধিকার কর্মীদেরও গ্রেপ্তার করেছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। তথ্য বলছে, ২০১৫ থেকে ’২০ সালের মধ্যে এই আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮ হাজার ৩৭১ জনকে। কিন্তু এই পাঁচ বছরে দোষী প্রমাণিত হয়ে সাজা পেয়েছেন মাত্র ২৩৫ জন। তার মানে, বাকিরা বিনা বিচারে বন্দি থেকেছেন। দমনপীড়ন আরও জোরদার করতে ২০১৯ সালে এই আইনকে সংশোধন করে আরও দানবীয় করা হয়েছে। এর ফলে সরকার যে কোনও ব্যক্তি বা সংগঠনকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ হিসেবে ঘোষণা করতে পারে। শুধু নিউজক্লিকের প্রধান সম্পাদকই নন, এই মুহূর্তে অন্তত ১৬ জন সাংবাদিকের ঘাড়ে ইউএপিএ আইনের খাঁড়া ঝুলছে। এই আইনে গ্রেপ্তার হয়েছেন, ছাত্র নেতা ওমর খালিদ, কবি ভারবারা রাও, দলিত আন্দোলনের কর্মী সুবীর ধাওয়ানে, সমাজকর্মী সুধা ভরদ্বাজ, অধ্যাপিকা সোমা সেন, আইনজীবী সুরেন্দ্র গ্যাডলিং, সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পান সহ আরও অনেকে। মোদি সরকারের চোখে, এঁরা সব নাকি ‘সন্ত্রাসবাদী’!
ইউএপিএ-র মতোই প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট বা পিএমএলএ আইনকেও বিরোধী দমনের হাতিয়ার করেছে মোদি সরকার। তথ্য বলছে, ইউপিএ সরকারের আমলে ২০০৪ থেকে ’১৪ সাল পর্যন্ত এই আইনে ইডির অধীনে মামলা হয়েছে ১৭৯৭টি। মোদি জমানার দশ বছরে এই মামলার তদন্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১৫৫। ইউপিএ আমলে ইডি চার্জশিট দিয়েছিল ১০২টি। মোদি জমানায় ১২৮১টি। আর এই আমলে গ্রেপ্তারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ২৫০০ শতাংশ। আরও তথ্য হল, মোদি জমানায় যেসব রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ইডি-সিবিআইয়ের তদন্তের মুখে পড়েছেন তার ৯৫ শতাংশই বিরোধী দলের সঙ্গে যুক্ত। অথচ অন্তত ২৫ জন রাজনৈতিক নেতা এই সময়কালে বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে হয় তদন্ত বন্ধ হয়ে গিয়েছে, অথবা মামলা স্থগিত রাখা হয়েছে। এখানেই মোদি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির নিরপেক্ষতা নিয়ে সঙ্গত প্রশ্ন তোলে বিরোধীরা। আসে প্রতিহিংসা পরায়ণ মানসিকতার প্রসঙ্গ। তাই, পিএমএলএ আইনে ইডির যথেচ্ছ গ্রেপ্তার নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা জারির পর প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি এবার থেকে সরকার সতর্ক হয়ে পা ফেলবে? বন্ধ হবে কি লাগামছাড়া ধরপাকড় অথবা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা? অনেকের মতে, বিজেপি ফের ক্ষমতায় ফিরলে আইন পাল্টে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। যেমন অতীতে দেখা গিয়েছে।