গুরুজনের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা ও মানসিক উদ্বেগ। কাজকর্মে বড় কোনও পরিবর্তন নেই। বয়স্কদের স্বাস্থ্য সমস্যা ... বিশদ
ভোটের মুখে তেল-গ্যাসের সামান্য দাম কমিয়ে হাততালি কুড়োনোর চেষ্টা করছে মোদি সরকার। কিন্তু ঘটনা হল, তেল-গ্যাসের দাম বাবদ মানুষের থেকে আদায় করা টাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত তিন তেল সংস্থা পাহাড়প্রমাণ মুনাফা করেছে। শুধু ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষেই ইন্ডিয়ান অয়েল, ভারত পেট্রলিয়াম ও হিন্দুস্তান পেট্রলিয়ামের মিলিত মুনাফার পরিমাণ ৮২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেক মুনাফা করেছে একা ইন্ডিয়ান অয়েল। এই তিন সংস্থা আগে কখনও এত লাভ করেনি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, লাভের অঙ্ক বেশি হওয়ায় ছাড়ের অঙ্ক বেশি হল না কেন? কেউ কেউ বলছেন, সেই পথে হাঁটাই যেত। কিন্তু লোকদেখানো ছাড় দিয়ে বিরোধীদের মুখ বন্ধের চেষ্টা করেছে সরকার। সাধারণ নিয়মে আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রপণ্যের দাম ওঠানামার ভিত্তিতে তেল-গ্যাসের দাম নির্ধারিত হয়। দেখা গিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যারেল প্রতি অপরিশোধিত তেলের দাম অনেকটা নীচে নেমেছিল। আবার ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়া থেকে অনেক কম দামে অপরিশোধিত তেল কিনেছে ভারত। তাই ভারতীয় তেল কোম্পানিগুলি মুনাফার পাহাড়ে বসেছে। কিন্তু মোদি তার সুফল পেতে দিলেন না আম আদমিকে। বরং বলা ভালো, যেহেতু তিন তেল সংস্থার মালিকানার সিংহভাগ কেন্দ্রেরই হাতে তাই ওই মুনাফার ভাগে আসলে কেন্দ্রেরই রাজকোষ ভরছে। সাধারণ মানুষকে সুরাহা দেওয়ার ভাবনাই নেই মোদি সরকারের। মুখেই কেবল ‘আচ্ছে দিনের’ স্বপ্ন ফেরি!
সন্দেহাতীতভাবে এই নির্বাচনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু মূল্যবৃদ্ধি ও বেকারি। বেকারি অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ যে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের চড়া দাম—ভুক্তভোগী সকলেই জানেন। তাই পাইকারি ও খুচরো দুই বাজারেই পণ্যের দাম কমার কোনও লক্ষণ নেই। মুখে না বললেও জনদরদি সেজে মূল্যবৃদ্ধির আঁচ ঠেকাতে আগামী পাঁচ বছর দেশের ৮০ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার ঘোষণা করেছেন মোদি। মানুষকে অবাক করে তাঁর দাবি, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে এসেছে এবং এই কৃতিত্ব রিজার্ভ ব্যাঙ্কের। যদিও প্রধানমন্ত্রীকে ‘ভুল’ প্রমাণ করে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর জানিয়েছেন, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ হয়নি। তা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা ৪ শতাংশের উপরেই রয়েছে। চলতি অর্থবর্ষে খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির গড় হার ৪.৫ শতাংশ থাকার সম্ভাবনা। তীব্র দাবদাহের কারণে জিনিসপত্রের দাম আরও বেড়ে যেতে পারে। সব মিলিয়ে তাই এখনই কোনও আশার সম্ভাবনা দেখছে না রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এই অশনি সঙ্কেতের মধ্যেই আম জনতার আশঙ্কা হল, ভোট মিটলেই তেল-গ্যাসের দাম আবার বাড়বে। এবং তা আগের চেয়ে বেশি হবে। কারণ মোদি জমানায় একাধিকবার ঘটা তাদের অতীত অভিজ্ঞতা সে কথাই বলছে। আশঙ্কা সত্যি হলে গরিব-মধ্যবিত্তের বেঁচে থাকাটাই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। তাই এই ভোট বাজারে প্রশ্ন উঠেছে, মন্দির তো হল, কিন্তু এতে তো পেটের জ্বালা মিটবে না!