একটি শিশুকে ঘিরে কত আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন দেখা। তারা নিষ্পাপ। বাগাড়ম্বরসর্বস্ব মোদি রাজত্বে সেই নিষ্পাপ শিশুরও রেহাই নেই। পৃথিবীর আলো দেখার সঙ্গে সঙ্গে অবোধ শিশুর উপরও চেপে বসছে বিরাট অঙ্কের ঋণের বোঝা! শুধু সে নয়, তার বাবা-মাও এর থেকে মুক্ত নন। প্রত্যেক দেশবাসীর মাথার উপর ঋণের খাঁড়া ঝুলছে। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষে ভারতবাসীর মাথায় গড় ঋণের বোঝা ছিল ৪৬ হাজার ৬৯৭ টাকা। স্বপ্নের ফেরিওয়ালার জমানায় অর্থাৎ বিজেপি আমলে তা বেড়ে ২০২১ সালে হয়েছে ৮৯ হাজার ১৩২ টাকা। এই না হলে মোদি জমানার আচ্ছে দিন, সবকা বিকাশ! আরও আশঙ্কা, একবছর পর এই বোঝা বেড়ে দাঁড়াবে ৯৯ হাজার ৯০৪ টাকা। অর্থাৎ শিশু থেকে বৃদ্ধ—প্রত্যেক ভারতবাসীর মাথার উপর প্রায় এক লক্ষ টাকা ঋণের ভার চাপবে। এর জন্য দায়ী কে? অবশ্যই দেশের সরকার এবং তার ব্যর্থ অর্থনীতি। দেশের মানুষ ঋণভারে নুইয়ে পড়ছে, তবু এতটুকু লাজলজ্জার বালাই নেই দেশ শাসকের। অভাবের সংসারে ঘটিবাটি বেচে যেমন মানুষ ক্ষুণ্ণিবৃত্তির চেষ্টা করে আমাদের দেশের সরকারের হাল অনেকটা তেমনই। একগুচ্ছ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা অর্থাৎ দেশের সম্পদ বিক্রির মাধ্যমে ভাঁড়াবে পর্যাপ্ত অর্থ আনার চেষ্টায় মগ্ন মোদি বাহিনী। তাদের সৌজন্যে খাদের কিনারে দেশের অর্থনীতি। শিখরে বেকারত্ব। শাক দিয়ে আর মাছ ঢাকা যাচ্ছে না। বিরোধীকণ্ঠ রোধ করে বা রাষ্ট্রযন্ত্রকে কাজে লাগিয়েও নয়। লজ্জা নিবারণের বস্ত্রটুকু হারিয়ে উলঙ্গ রাজার অবশ্য স্বপ্নফেরিতে খামতি নেই। অনেকটা ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখার মতোই। প্রধানমন্ত্রী এপর্যন্ত যা যা স্বপ্ন দেখিয়েছেন তার অধিকাংশই বাস্তবে হয়নি। ছিল ভাঁওতা। তবু অসত্য ভাষণ আর ফাঁপা প্রতিশ্রুতি দিয়ে অলীক স্বপ্ন দেখানোর চেষ্টা অব্যাহত। এবার প্রয়োজন তার বিরতির। কারণ এই সরকারের ব্যর্থতার দায় বহন করতে হচ্ছে প্রতিটি দেশবাসীকে। অজান্তেই তাঁদের উপর ঋণের বোঝা দ্বিগুণ হয়েছে। আর উল্টো দিকে? গরিব ধনীর বৈষম্য প্রকট। করোনাকালেও ধনীদের সম্পদ বেড়েছে ১৩ লক্ষ কোটি টাকা। ব্যাঙ্কে অনাদায়ী সম্পদের পরিমাণ এবং ইচ্ছাকৃতভাবে ধনীদের ঋণ না মেটানোর প্রবণতাও বেড়েছে এই আমলেই। একদম খুল্লামখুল্লা! অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানিয়ে দিয়েছেন, সম্পদ বিক্রি এবং বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়িয়েই মেটানো হবে দেশের ঋণের বোঝা। এবার রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদের দিকে নজর কেন্দ্রের। আম জনতার জীবনযাপনে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে এমন বিষয়গুলিতে (যেমন গ্যাস, কেরোসিন, পেট্রল, ডিজেল) ছোবল বসিয়েও ক্ষান্ত নন তাঁরা। এবার সোনার সম্পদ বিক্রির উদ্যোগ! মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে গেরুয়া শাসনে। এই অনাচারের মাশুল সরকারকেই দিতে হবে।
মানুষকে অসহনীয় পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়ে গেরুয়া বাহিনীর স্তাবকদের কেউ কেউ নিজেকে বিষধর সাপ বলে গর্ব অনুভব করছেন! এতে আসল চেহারাটাই সামনে আসছে। স্বৈরাচারী শাসকের কখনও ছলের অভাব হয় না। কর্পোরেট তোষণকারী শাসক ভোটের ময়দানে ‘গরিবের দোস্ত’ সেজে আর কেন্দ্রের হাঁড়ি হালকে আড়াল করে বাংলায় ‘আসল পরিবর্তনের’ কথা বলছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কি ভুলে গেছেন, এরাজ্যে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে এসে ১৬ মে কী কী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন? দেশের প্রত্যেকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার আর বছরে ২ কোটি বেকারের চাকরির প্রতিশ্রুতি খোয়াব দেখিয়ে তো ক্ষমতায় এসেছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণেরই-বা কী হল? উত্তর নেই। উল্টে নয়া প্রতিশ্রুতির ফানুস উড়ল। সেই এক ভঙ্গিমা। অথচ আগের দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা ভোলেনি বাংলার মানুষ। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব অবশ্যই করবে আম জনতা। যিনি সোনার বাংলা গড়ার তাগিদে ‘আসল পরিবর্তনের’ যৌক্তিকতা বোঝাচ্ছেন, তাঁর জমানাতেই দেশের মানুষ ঋণভারে জর্জরিত! দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির হার নেতিবাচক। নাভিশ্বাস উঠেছে সংসদীয় গণতন্ত্রে। বেকারত্ব শিখরে। বেড়েছে নারী নির্যাতন। এমনকী নারী নির্যাতনে অভিযুক্ত হচ্ছেন বিজেপি শাসিত রাজ্যের মন্ত্রীও। কেন্দ্রের গভর্নমেন্ট ডেট স্ট্যাটাস পেপার ২০১৪-র তথ্য হল, ইউপিএ জমানার শেষে দেশের মোট ঋণ ছিল ৫৮ লক্ষ ৮৩ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা। মোদি সরকারের গত ফেব্রুয়ারিতে সংসদে পেশ করা বাজেট নথি থেকে জানা যাচ্ছে ২০২১-এ ৩১ মার্চ তা গিয়ে দাঁড়াবে ১২১ লক্ষ ২১ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা। সুশাসনের এ কেমন করুণ পরিণতি যে ঋণের দায়ে মানুষ মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারছে না?
ঋণভার থেকে মুক্তি চায় দেশবাসী। তাই প্রচারসর্বস্ব প্রতিশ্রুতি
ছেড়ে আগে দেশের উন্নয়নে মনোনিবেশ করুক সরকার। মানুষ ঠকেও শেখে, ঠেকেও শেখে। বাংলার মানুষ শুধু মুখের প্রতিশ্রুতি শুনে আর ঠকতে নারাজ। তাঁরা চান শাসকের ব্যর্থতায় তাঁদের উপর চেপে বসা দেনার দায় থেকে মুক্তি।