উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
ভোটের বাজারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে বিজেপির সর্বোচ্চ নেতৃত্ব বাংলা বাজারে ডবল ইঞ্জিন তত্ত্ব আমদানি করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি অপদার্থ সরকারের নেত্রী। তাঁর আমলে বাংলার মানুষের নাকি দুর্দশার অন্ত নেই। পশ্চিমবঙ্গবাসীর কাছে বিজেপিওয়ালাদের দাবি, তাঁরা যেন দু’হাত ভরে বিজেপি প্রার্থীদের আশীর্বাদ করেন। তাহলে বিজেপি নিশ্চিতভাবে ‘সোনার বাংলা’ গড়ে দেবে। এটি বাঙালির অধিকার। কিন্তু স্বাধীনতা লাভের পরবর্তী সাত দশকেও বাঙালিকে তা দিতে পারেননি বিধানচন্দ্র রায় কিংবা জ্যোতি বসু। মমতার কথা তো বলাই বাহুল্য! কথা রাখতে বিজেপি নাকি ব্যর্থ হবে না। কেন? কারণ এখানে বিজেপির সরকার হলে বাংলা এগতে থাকবে ডবল ইঞ্জিনের জোরে। মানে রাজ্য সরকার তো থাকবেই, সঙ্গে বিশেষভাবে পাবে আন্তরিক কেন্দ্রীয় সরকারকেও। যাঁরা এই কথা বলছেন, তাঁরা কি বিস্মৃত হয়েছেন, সংবিধান বলে দেশের প্রতিটি সরকার এমনিতেই ডবল ইঞ্জিনের! ভারতে বহু দলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত। রাষ্ট্র পরিচালিত হচ্ছে ফেডারেল বা যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা মেনে। কেন্দ্রে এবং রাজ্যগুলিতে যে-কোনও দল বা জোটের নির্বাচিত সরকার থাকতে পারে। কেউ কারও কাছে অচ্ছুৎ নয়। বরং তারা সমন্বয়ের নীতিতে রাষ্ট্রকে এগিয়ে যাবে, এটাই ঐক্যবদ্ধ ভারতের কনসেপ্ট। কেন্দ্রীয় সরকারে অধিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বা জোটের বিরোধী যেসব সরকার বিভিন্ন রাজ্যে রয়েছে, তাদের সঙ্গে কোনওভাবেই অসহযোগিতা করা চলে না। কোনওভাবে বঞ্চনাও করা চলে না তাদের। যদি কোনও কেন্দ্রীয় শাসক সেটি করে থাকে তবে তারা নিশ্চিতভাবে সংবিধানকে অমান্য করছে, সেটি সংবিধানের অপমানও। এখানেই নস্যাৎ হয়ে যায় বিজেপির প্রথম সারির নেতাদের মুখনিঃসৃত ‘ডবল ইঞ্জিন’ তত্ত্ব।
আরও একটি প্রশ্ন এই প্রসঙ্গে আসে, তথাকথিত ডবল ইঞ্জিন সত্যিই কি কার্যকরী? পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওড়িশা, অসম, ত্রিপুরায় অতীতে একাধিক বার কংগ্রেসের ডবল ইঞ্জিন চালু ছিল। তাতে এই রাজ্যগুলির কী লাভ হয়েছিল? ত্রিপুরা, অসম, বিহার, ঝাড়খণ্ড, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ প্রভৃতি বিজেপির ডবল ইঞ্জিনে এখন চলছে কিংবা কিছুদিন আগে চলেছে। এই রাজ্যগুলির কোনটিকে দেশবাসীর কাছে স্বর্গরাজ্য মনে হয়েছে? সদ্যপ্রকাশিত কেন্দ্রীয় তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ত্রিপুরাসহ বিজেপির ডবল ইঞ্জিনের বেশিরভাগ রাজ্য বেকারত্ব দূর করার প্রশ্নে ডাহা ফেল। সেই তুলনায় ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট সিঙ্গল ইঞ্জিনের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ, যে-রাজ্যের কাণ্ডারী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এটাই প্রমাণ হয় যে ইঞ্জিনের সংখ্যা মোটেই গুরুত্ব নয়, ইঞ্জিনের কার্যকারিতাই শেষ কথা। একটি মজবুত ও যুগোপযোগী ইঞ্জিন থাকাই যথেষ্ট। দশ বছর যাবৎ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এই পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ। বাংলার সরকারের কাজ ও সাফল্য দেখে এই সার্টিফিকেট মোদি সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকই বারবার দিতে বাধ্য হয়েছে। ডবল ইঞ্জিনের তত্ত্বটির আদর্শ ঠাঁই বাজে কাগজের ঝুড়ি।