উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
কথায় বলে, আগুন যখন নেয় তখন মানুষকে নিঃস্ব করে দেয়। ঝড়বৃষ্টি, বন্যা, ভূমিকম্প, মহামারী প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে নানা ধরনের দুর্ঘটনা এবং যুদ্ধবিগ্রহ মোকাবিলা করেই মানব সভ্যতা এগিয়ে চলেছে। বাকি সবক্ষেত্রে লড়াই করার কিছুটা সময় পাওয়া যায়। কিন্তু আগুন এমন দিশেহারা করে দেয় যে মানুষ অনেক সময় বুঝে উঠতে পারে না, কোন পদক্ষেপটা ঠিক আর কোনটা ভুল। বিপদকালে বুদ্ধিনাশ সবচেয়ে বেশি হয় সম্ভবত আগুনের গোলার মধ্যে পড়লে। বীর্যবান, অতিশয় বুদ্ধিমান, এমনকী বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মানুষও নিজেকে চক্রব্যূহের মধ্যে আবিষ্কার করে বসে। অর্থাৎ এমন ভয়ংকর এক পরিবেশ, যেখানে শুধু প্রবেশ করা যায়, বেরনো যায় না কোনওমতে। অথচ সেখান থেকেই বেরিয়ে আসার নামই হল আগুনের মোকাবিলা। দমকল কর্মীদের সেই কাজটাই করতে হয়। দুর্গত অসহায় মানুষকে উদ্ধার করাই তাঁদের কাছে অগ্রাধিকার। একইসঙ্গে নিজেকেও বেঁচে ফিরতে হয়। কিন্তু দুর্গত মানুষকে উদ্ধার করাই যখন পাখির চোখ, তখন অনেক সময় দমকল কর্মীরা নিজেদের বেঁচে ফেরার কথাটা ভুলেই যান। অগ্নিকাণ্ড এমন এক চক্রব্যূহ রচনা করে তার মধ্যে একবার পড়লে তাঁরা এমনটাই ‘পরের তরে’ হয়ে যান।
পুলিস এবং দমকলের প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, উদ্ধারের কাজ দ্রুত হাসিল করার উদ্দেশ্যে দমকল কর্মীরা লিফটে চড়েছিলেন। এরপর লিফটের মধ্যেই তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েন অথবা লিফট থেকে বেরিয়েই আগুনের গোলার মধ্যে পড়ে যান। যার অনিবার্য পরিণাম ছিল শুধুই মৃত্যু। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, দমকল কর্মীরা লিফটে চড়তে গেলেন কেন? অগ্নিনির্বাপণ বিদ্যার প্রাথমিক পাঠেই তো আছে এমন বিপৎকালে কোনওভাবেই লিফটে চড়া যাবে না। তবু তাঁরা এই বোকামি করলেন! যাই হোক, দমকল কর্মীরা এই দুর্ভাগ্য মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন কি না, তা তদন্ত সাপেক্ষ। পুলিস, দমকল এবং রেলমন্ত্রক নিশ্চয় তা তদন্ত করে দেখবে। কিন্তু তার আগে গুরুত্বপূর্ণ হল ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর অনুযোগ, সন্ধ্যায় যে ঘটনার শুরু সেখানে রেলের পদস্থ কর্তাদের দেখা মেলেনি। রেলের তরফে কোনও সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। রেল ভবনের নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকা জরুরি। আগুন মোকাবিলার প্রাথমিক কাজটা তাদেরই করার কথা। কারণ দমকলের গাড়ি এবং কর্মীদের পৌঁছতে কিছু সময় তো লাগেই। তাহলে রেল ভবনের ফায়ার ফাইটিং সিস্টেমের কী ভূমিকা ছিল? ওই বহুতলের ম্যাপ বা নকশা দমকল কর্মীদের সময়মতো দেওয়া হয়নি কেন? অত্যন্ত জরুরি ওই তথ্যের অভাবেই হয়তো দমকল কর্মীদের বড় সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। এসব যদি হয়ে থাকে সেটা শুধু দুর্ভাগ্য নয়, ক্ষমার অযোগ্য অপরাধও বটে। রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল অবশ্য রেলের কোনও দোষ দেখছেন না। তদন্ত কমিটি গড়ে এই ঘটনায় রেলের তরফে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে, মৃতদের পরিবারের জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ এবং সরকারি চাকরির ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর এই মানবিক মুখের প্রশংসা প্রাপ্য। তবে, এখানেই থেমে গেলে চলবে না। এই ঘটনায় কেউ দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ করতে হবে। বিশেষভাবে গ্রহণ করতে হবে ভবিষ্যৎ অগ্নিকাণ্ডের মোকাবিলায় এই ঘটনার পাঠ।