উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
সে তারা হতেই পারে। সেটা তাদের স্বাধীনতা। ভারতের সংবিধান তাদের সেই অধিকার দিয়েছে। তবে একই সঙ্গে মনে রাখা দরকার যে, এই অধিকার শুধু কেন্দ্রীয় শাসকের একার নয়, সব রাজনৈতিক দলেরও। ভারত হল পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র। বহু দলীয় গণতন্ত্র ভারত রাষ্ট্রের ভিত্তি। এখানে রাষ্ট্র পরিচালিত হয় ফেডারেল ব্যবস্থায়। একদিকে অনেকগুলি রাজ্য সরকার, অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সরকার। এই সরকারগুলির মধ্যে কেউ প্রভু বা ভৃত্য নয়। কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলির মধ্যে সুসমন্বয়ই হল ভারত রাষ্ট্রের আসল শক্তি। এ তো গেল রাজনীতির কথা। বহু নাগরিক প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়। তাদের একটি অংশ নানা ধরনের অরাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। অসংখ্য মানুষ একেবারে ব্যক্তিগতভাবেই বেঁচে থাকতে স্বচ্ছন্দ বোধ করে। আমাদের সংবিধান এই সব ধরনের মানুষকেই সমান অধিকার দিয়ে রেখেছে। সেখানে জাতি ধর্ম বর্ণ ভাষার মধ্যেও কোনও বৈষম্য স্বীকার করা হয়নি। মোদি সরকারের পদক্ষেপগুলির ভিতরে বিজেপি বা গেরুয়া শিবিরের একবগ্গা অ্যাজেন্ডারই প্রতিফলন রয়েছে। ভোটে জেতার পর কোনও প্রধানমন্ত্রী বা সরকার আর নিছক কোনও দল বা মতের থাকতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সরকার সারা দেশের এবং সব মানুষের। নরেন্দ্র মোদি এবং তাঁর সরকার তা মনে রাখেনি। তবুও অনেকে এর মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকতা দেখছে না। বেশ। কিন্তু সরকারের সব পদক্ষেপ এবং কাজকে দেশের সবাই ভালো মনে করবে, সবাই উদ্বাহু হয়ে সমর্থন জানাবে, তাও নয়। কিছু মানুষ সমালোচনা, বিরোধিতা এবং প্রতিবাদ করবে—এটাই স্বাভাবিক। এটাই গণতন্ত্রের মাহাত্ম্য।
মানুষের সমালোচনা, বিরোধিতা এবং প্রতিবাদের মধ্যে সরকারের জন্য শিক্ষণীয় অনেক কিছু থাকে। ইগো সরিয়ে রেখে সরকার সেসব খোলা মনে গ্রহণ করলে সংশোধনের সুযোগও পায়। সরকারের পদক্ষেপ যদি দেশের স্বার্থে হয়ে থাকে, তবে সম্ভাব্য সংশোধনে দেশেরই উপকার হওয়ার কথা। মোদি সরকার এই কথা মাথায় রাখার পরিবর্তে সমালোচক ও প্রতিবাদীদের শত্রুজ্ঞান করছে। শত্রুদমনের জন্য স্বৈর-রাষ্ট্র যে ধরনের কঠোর পদক্ষেপ করে থাকে বহু ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে সেই আচরণই করা হচ্ছে বলে বার বার অভিযোগ উঠছে। সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হল, বিরোধীদের একাংশের উপর নির্বিচারে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ছাত্রনেতা থেকে পরিচিত রাজনীতিক এবং সমাজকর্মী, সংস্কৃতিকর্মী—প্রায় কাউকেই রেয়াত করা হচ্ছে না। এই ব্যাপারে সরকার যে ঠিক কাজ করছে না সুপ্রিম কোর্ট তা দ্বিতীয়বার মনে করিয়ে দিল। পরিষ্কার বলে দিল, কেন্দ্রের বিরোধিতা করলেই তা রাষ্ট্রদ্রোহ গণ্য করা ঠিক নয়। সুপ্রিম কোর্ট দ্বিতীয়বার সতর্ক করার পরদিনই, বৃহস্পতিবার মার্কিন মূল্যায়ন সংস্থা ফ্রিডম হাউস মোদি জমানায় ভারতে গণতন্ত্রের বিপন্নতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এই ঘটনায় ভারতবাসীমাত্রই লজ্জাবোধ করবে। কারণ ‘উন্নয়নশীল’ ভারতের আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গর্বের ধন বলতে অবাধ গণতন্ত্রটুকুই। ভারতের আজকের সামান্য উত্থানের নেপথ্য শক্তিও এই অবাধ গণতন্ত্র। মোদি সরকারের সৌজন্যে সেটুকুও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এর কুফল আর্থিক বিকাশের উপরেও পড়তে পারে। এতে একদিন ভেঙে যেতে পারে নিরীহ শান্তিকামী দেশবাসীর ধৈর্যের বাঁধ। দেশবাসী ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতার সংগ্রামে’ নামার আগে সাবধান হয়ে যাক মোদি সরকার।