উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
মানুষের বাক্স্বাধীনতা সংবিধান স্বীকৃতি মৌলিক অধিকার। সংবিধান মেনে চলার শপথ নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের কুশীলবরা। অথচ তাঁরাই সংবিধানে থাকা সেই মৌলিক অধিকারকে মান্যতা দেন না। থোড়াই কেয়ার করেন মানুষের ন্যায্য অধিকারগুলিকে। এমন স্বৈরাচারী শাসক অতীতে দেশ দেখেনি। ৪৫ বছর আগে ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থা জারি করে বাক্স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল ইন্দিরা গান্ধী সরকার। জরুরি অবস্থার সময়কালে বিরোধী কণ্ঠরোধ তো বটেই, এমনকী সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় কলমে কী লেখা হবে তার উপরও নেমে এসেছিল রাষ্ট্রযন্ত্রের আঘাত। পরবর্তীকালে দেশের জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছিল ইন্দিরা সরকারকে। এতদিন পর প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীর নাতি কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকেও বলতে হচ্ছে ঠাকুমার জরুরি অবস্থার সিদ্ধান্তে ভুল ছিল। ভাগ্যের এমনই পরিহাস যে রাহুল গান্ধী যেদিন এই মন্তব্য করেছেন সেদিনই মহামান্য শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, কেন্দ্রের বিরোধিতা করলেই তা রাষ্ট্রদ্রোহ হয় না, হতে পারে না। জরুরি অবস্থার সেই ভয়ঙ্কর দিনগুলির কথা দেশের মানুষ এখনও ভোলেনি। দেশের বর্তমান শাসক জরুরি অবস্থা জারি করেনি ঠিকই, কিন্তু তার চেয়েও ভয়ঙ্কর পথে হেঁটে বিরোধী কণ্ঠরোধের আপ্রাণ চেষ্টা করছে। বাক্স্বাধীনতা খর্ব করার সেই ট্র্যাডিশন বজায় রেখে কখনও দমনপীড়ন, কখনও দেশদ্রোহীর তকমা সেঁটে দিয়ে সরকার বিরোধী বক্তব্য প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করছে। যা কার্যত মৌলিক অধিকারেই আঘাত। ইন্দিরা গান্ধীর আমলে জরুরি অবস্থা ছিল ঘোষিত নির্দেশ। আর মোদি সরকার আরও একধাপ এগিয়ে অর্থাৎ জরুরি অবস্থা জারি না করেই রাষ্ট্রযন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে চলেছে! এই জমানায় সরকার বিরোধী কণ্ঠরোধের চেষ্টা চূড়ান্ত আকার নিয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাকে এক বছরেরও বেশি সময় গৃহবন্দি রেখে অমানবিকতারও দৃষ্টান্ত রেখেছে সরকার। বিরোধী মুখ বন্ধ করতে সরকারি সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করার নির্লজ্জ প্রয়াসও এখনকার মতো অতীতে দেখা যায়নি। কখনও আয়কর দপ্তর, কখনও ইডি, কখনও বা সিবিআইকে হাতিয়ার করে ভয় দেখানোর প্রচেষ্টায় এই সরকার যে সিদ্ধহস্ত। অভিযোগ তেমনই। একটি দিশাহীন সরকার সর্বত্রই ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতার গন্ধ খুঁজছে! ছাত্র আন্দোলনের পীঠস্থান একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ থেকে নিস্তার পায়নি। নিস্তার পায়নি নয়া কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে তিন মাসের বেশি সময় ধরে দিল্লির উপকণ্ঠে আন্দোলনকারী কৃষকরাও। সেখানেও রাষ্ট্রদ্রোহিতার বার্তা, তার হাত ধরেই মামলা। অন্নদাতাদের রাষ্ট্রদ্রোহী বলে দেগে দেওয়ার চেষ্টা! রেহাই পাননি সংবাদ মাধ্যমের সাংবাদিকও। মোদি জমানাতেই খুন হতে হয়েছে গৌরী লঙ্কেশের মতো প্রথিতযশা সাংবাদিককে। আসলে সরকার যত বেকায়দায় পড়ছে ততই দমনপীড়নের রাস্তা বেছে নিচ্ছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করতে বেছে নিচ্ছে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগকে।
এমন একটি অসহিষ্ণু সরকার যতই তার সাফল্য প্রচারে নিজের ঢাক নিজে পেটাক, ইতিহাসে কিন্তু এসব নিন্দনীয় কাজ লিপিবদ্ধ হয়েই থাকছে। মানুষ কখনওই তাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ মানবে না। তাই সরকার সংযত হোক। না হলে ক্ষমাহীন এই অপরাধের দায় তাদেরকেই বহন করতে হবে।