উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
চোখে পড়ার মতো তালিকা পেশ করলেন মমতা। প্রায় এক তৃতীয়াংশ আসনে হয় গতবারের বিধায়ককে বাদ দিয়েছেন, অথবা প্রার্থী বদল করেছেন। ৫১ জন মহিলা, ৪২ জন সংখ্যালঘু, তফসিলি জাতি উপজাতির ৯৬ জন নিয়ে তাঁর এবারের টিম জাত, ধর্ম, শ্রেণি, বর্ণ নির্বিশেষে পাহাড় থেকে সাগর ছুঁয়ে গেছে। আবার শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি থেকে চিকিৎসা, ক্রীড়া জগৎ—তাঁর প্রার্থী তালিকায় ভিন্ন স্বাদের ছড়াছড়ি। এ রাজ্যে বাম কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বরাবরের অভিযোগ হল দলের বৃদ্ধতন্ত্রের বিরুদ্ধে। নতুন প্রজন্মকে কার্যত দূরে ঠেলে দিয়ে সেই বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, প্রদীপ ভট্টাচার্য, আব্দুল মান্নানরা রাজ করে যাচ্ছেন দশকের পর দশক ধরে। অথচ মমতা তাঁর দলের মতোই ‘তরুণ’। বছর কুড়ি পেরিয়েছে তৃণমূলের বয়স। মমতা যেন তাঁর দলের নেতৃত্বে এমন তরুণ রক্তেরই প্রবাহ দেখতে চান। তাই ঘোষণা করেই ৮০ বছরের ঊর্ধ্বে থাকা ‘যোগ্য’ নেতাদেরও এবার টিকিট দেননি। বরং নতুন মুখের ভিড়ে এবার সবুজের অভিযান চালিয়েছেন নেত্রী। সন্দেহ নেই, নবীন প্রবীণের ভারসাম্য রক্ষা করে তিনি যে তালিকা তৈরি করেছেন তা বিরোধীদের রাতের ঘুম কাড়ার উপযুক্ত। আর তিনি নিজে? একেবারে সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে লড়াই করা সেনাপতির মতো কথা রেখেছেন। এ রাজ্যের রাজনীতিতে মোড় ঘোরানো নন্দীগ্রাম আন্দোলন মমতার জীবনে এক মাইলস্টোন। তবু কলকাতায় বসবাসরত মেয়ের কেন্দ্র ছিল ভবানীপুর। সেই শহুরে আসনটি এবার দলেরই এক প্রবীণ মন্ত্রীকে ছেড়ে তিনি পাড়ি দিয়েছেন নন্দীগ্রাম। কথা দিয়ে এসেছিলেন বামফ্রন্টকে উৎখাত করার এই আঁতুড়ঘরে, তিনি এখান থেকেই লড়বেন। শুক্রবার সেই কেন্দ্রে নিজের নাম ঘোষণা করে বলেছেন, ‘কথা রাখার’ কথা।
মমতা আর চ্যালেঞ্জ—এই শব্দ দুটি যেন একে অপরের পরিপূরক। জমি আন্দোলনের পীঠস্থান নন্দীগ্রাম থেকে দাঁড়ানোর ইচ্ছাপ্রকাশ করতেই বিজেপি নেতারা বলেছিলেন, পারলে শুধুমাত্র একটি কেন্দ্র থেকে দাঁড়িয়ে দেখান মমতা। সেই চ্যালেঞ্জের যোগ্য জবাব দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন যেকোনও চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় তিনি প্রস্তুত। বললেন, খেলা হবে, দেখা হবে, জেতা হবে। রাজনীতির এই খেলায় জেতার জন্য দরকার সমাজের সব স্তরের মানুষের সমর্থন সহযোগিতা। সর্বস্তরের মানুষের প্রতিনিধিদের নিয়ে তৈরি প্রার্থী তালিকা থেকে বুঝিয়ে দিলেন তিনি সকলের সঙ্গে আছেন। তালিকায় আছেন দলিত সাহিত্যিক, এমনকী ক্রীড়া জগৎ-এর মানুষও। লক্ষণীয় মহিলা প্রার্থীর উপস্থিতি। মহিলাদের উপর সংঘটিত অপরাধ বিজেপি শাসিত বেশ কয়েকটি রাজ্যেই বেশি। সেখানে নারীরা সম্মান পান না। মমতার বাংলায় অবশ্য তা হয় না। এত বেশি সংখ্যক মহিলাকে প্রার্থী করে মমতা বার্তা দিলেন, এ রাজ্যে মহিলারা শুধু সুরক্ষিতই নন, রাজনীতির আঙিনাতেও তাঁদের যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ আছে। এভাবেই সম্মান জানানো হল নারীশক্তিকে। দুঁদে রাজনীতিবিদ প্রবীণ ও ঝকঝকে মুখ তরুণদের প্রার্থী তালিকায় স্থান দিয়ে তিনি যেমন ভারসাম্য বজায় রাখলেন তেমনই গতানুগতিকতার ছকের বাইরে গিয়ে প্রার্থী তালিকার খোলনলচেও বদলে দিলেন। যা দৃষ্টান্ত হয়ে রইল। উল্টোদিকে পদ্মশিবির? প্রার্থী তালিকা প্রকাশের দৌড়ে পিছিয়ে গিয়েও তারা এখনও দিল্লিমুখী! মোদি-শাহকে খুশি করতে ব্যস্ত ব্রিগেডে লোক আনার কাজে। বিজেপি’র কোনও কোনও নেতার আবার নজর অন্যের উচ্ছিষ্টের দিকে। তৃণমূলের তালিকায় ঠাঁই না পাওয়া বিক্ষুব্ধ যদি ভিড়ে যায় পদ্মশিবিরে। এছাড়াও পুরনো আর দলবদলুদের নিয়ে গোষ্ঠীকোন্দলে এখন জেরবার গেরুয়া শিবির। তাই বলতেই হয়, প্রথম রাউন্ডের খেলায় তারা পিছিয়েই পড়ল। বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে স্টার্টিং পয়েন্টে দৌড় শুরুটা ভালো না হলে শেষটা কী হয় বলা যায় না। তবে তৃণমূল সুপ্রিমো এবং তাঁর দল যে এই দৌড়ে প্রতিপক্ষকে পিছনে ফেলে অনেকটাই এগিয়ে গেল তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।