উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
কিন্তু এটা মুদ্রার একপিঠ। অন্যপিঠে লুকিয়ে রয়েছে আরও এক ভয়ঙ্কর সত্য। কুকথার প্রয়োগ, আপত্তিকর মন্তব্য, যৌন আবেদন, অন্য ধর্মের প্রতি অসম্মান, ধর্মীয় বিদ্বেষ তৈরি, অপরাধমূলক কাজ, এমনকী সন্ত্রাসবাদী নিয়োগের জন্য সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করা—ভূরি ভূরি অভিযোগ উঠছে প্রতিদিন। ওটিটি প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধেও সিনেমা ও সিরিয়ালের মাধ্যমে অনৈতিক কিছু পরিবেশনের অভিযোগও রয়েছে। প্রতিদিনের এমন হাজারো অভিযোগের সুরাহা করতেই নাকি সোশ্যাল মিডিয়া, ডিজিটাল মিডিয়া, ওটিটি প্ল্যাটফর্মের পায়ে বেড়ি পরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদি সরকার। সত্যিই কি তাই? কে না জানে, যে কোনও মিডিয়াই হল মত প্রকাশের স্বাধীনতার অন্যতম বড় উদ্যাপন ক্ষেত্র। ভারতীয় সংবিধানও তার নাগরিকদের বাক্স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে, মৌলিক অধিকার হিসেবে। এখানেই প্রশ্ন তুলেছে কেন্দ্রীয় সরকার! তাদের সাফ কথা—বাক্স্বাধীনতার নামে অপপ্রচার, স্বেচ্ছাচার চলতে পারে না। তাই এই সংক্রান্ত অভিযোগের সুষ্ঠু সমাধানের উদ্দেশ্যেই নিয়মবিধি আনা হচ্ছে, যা আগামী তিনমাসের মধ্যে কার্যকর হবে। বিরোধীরা অবশ্য এক্ষেত্রে মোদি সরকারের খবরদারির গন্ধ পাচ্ছে। তাদের পাল্টা বক্তব্য, নজরদারির নামে আসলে মিডিয়ার উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে চাইছেন মোদি অমিত শাহরা। আশঙ্কা অমূলক নয়। কারণ মোদি সরকারের কার্যক্রমের মধ্যেই বিরোধী কণ্ঠরোধের প্রচেষ্টা বারবার লক্ষ করা গিয়েছে। সরকার বিরোধী বক্তব্য রাখার মাশুল দিতে হয়েছে অনেককে। হয়েছে হাজতবাস। সরকার-বিরোধী বক্তব্য রাখার ‘অপরাধে’ রাষ্ট্রদ্রোহী বা দেশদ্রোহী বলে দেগে দেওয়ার ঘটনাও কম হয়নি। সরকারি রোষানল থেকে বাদ পড়েনি আন্দোলনকারী পড়ুয়ারাও। জেএনইউ তার সাক্ষী।
সম্প্রতি নয়া তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কৃষকদের প্রতিবাদের সমর্থনে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার কারণে কেন্দ্রের চাপেই নাকি প্রায় ১৫০০ অ্যাকাউন্ট বন্ধ করতে বা পোস্ট মুছে দিতে বাধ্য হয়েছিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এটা বিরোধী কণ্ঠস্বর দমনের চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই সোশ্যাল মিডিয়ার প্ল্যাটফর্মকে নিয়মের জালে বেঁধে ফেলার জন্য মোদি সরকারের এই উদ্যোগের পিছনে আসল উদ্দেশ্যটি ঠিক কী তা নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপের এই প্রচেষ্টায় সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছেন অনেকেই। এও কি তাদের আরও এক স্বৈরাচারী পদক্ষেপ? প্রশ্ন উঠছে। জলের মতো পরিষ্কার যে, মোদি সরকার সবকিছুই কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইছে। এবার তাদের নজর পড়ল সোশ্যাল মিডিয়ার উপর। পরিস্থিতি যা দাঁড়াচ্ছে তাতে সরকার কোনও পোস্টে আপত্তি করলেই দ্রুত সরিয়ে দিতে হবে সেই কনটেন্ট। একে সরকার-বিরোধী কণ্ঠ রোধের চেষ্টা ছাড়া আর কীই-বা বলা যায়। একথা ঠিক, সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যা খবর বা গুজব ছড়ানোটা অন্যায়। কিন্তু প্রচারের ‘অপব্যবহার’ রুখতে সরকার এমন একটি উদ্যোগ নিল যাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করা হলে অসঙ্গত হবে না। কারণ নতুন নিয়মের আওতায় আনা হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলিকেও। এমনকী, নিয়মকে হাতিয়ার করে সরকার সামাজিক মাধ্যমে বিতর্কিত বিষয়ের উৎসে যেভাবে পৌঁছতে চাইছে তাতে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়। সরকারি দৃষ্টিভঙ্গির নিরপেক্ষতার বিষয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। সরকারের মর্জির উপর নির্ভর করবে সোশ্যাল মিডিয়ায় কোন কোন পোস্ট তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে অথবা হবে না! কিন্তু মোদি সরকার ভুলে যাচ্ছে বিজেপির আইটি সেল তাদের ক্ষমতায় আনার জন্য এমন কিছু প্রচার করেছিল যাকে বিতর্কিত বিষয় বলেই গণ্য করছেন অনেকে। তাই নতুন বিধি এনে সোশ্যাল মিডিয়াকে কব্জা করা বা তাদের উপর নজরদারি বাড়ানোর পিছনে যদি রাজনৈতিক অভিসন্ধি থাকে তাহলে তা বর্জনীয়। কারণ মিডিয়ার কণ্ঠস্বর রোধ করার ফল ভালো হয় না কখনওই।