মাঝেমধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। গবেষণায় আগ্রহ বাড়বে। কর্মপ্রার্থীদের নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
কোনও সন্দেহ নেই, এক বছর আগে ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ানের শহিদ হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনার নেপথ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড়সড় গাফিলতি ছিল। সেই সংক্রান্ত অভিযোগও বারবার উঠেছে। জম্মু থেকে শ্রীনগরের পথে যাচ্ছিল ৭৮টি ট্রাক। সব মিলিয়ে ছিলেন প্রায় আড়াই হাজার সিআরপিএফ জওয়ান। ৪৪ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় অবন্তিপোরার কাছে লাথেপোরায় আচমকাই একটি বিস্ফোরক ভর্তি গাড়ি এসে ধাক্কা মারে কনভয়ে। প্রবল বিস্ফোরণে প্রাণ হারান ৪০ জওয়ান। যে গাড়িটি চেপে আত্মঘাতী হামলা চালানো হয়েছিল, সেটিও ধূলিসাৎ হয়ে যায়। ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় দেহ। প্রথম প্রশ্নটাই ওঠে, সিআরপিএফ জওয়ানদের ৭৮টি গাড়ি যে ওই এলাকা দিয়ে যাবে, তা তো হঠাৎ সিদ্ধান্ত হয়নি! আগে থেকেই তার পরিকল্পনা ছিল। আর এত বড় কনভয় জম্মু থেকে শ্রীনগর আসার খবর জঙ্গিদের কাছেও থাকাটা স্বাভাবিক। তাহলে কেন সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলিতে যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হল না? যদি হতো, তাহলে কখনওই একটি অসামরিক গাড়ি ইচ্ছে মতো কনভয়ের কাছে চলে আসতে পারত না।
দ্বিতীয়ত, ওই গাড়িতে ছিল প্রায় ৩০০ কেজি বিস্ফোরক। যার মধ্যে প্রায় ৮০ কেজি আরডিএক্স এবং অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট। লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুডা দাবি করেছিলেন, এই বিস্ফোরক চুরির। কোনও নির্মাণকাজের জায়গা থেকে সরানো হয়েছিল। কিন্তু তা কি সম্ভব? এই এত পরিমাণ বিস্ফোরক কোনও নির্মাণক্ষেত্র থেকে সরানো যেতে পারে। চাপে পড়ে তিনি অবশ্য পরে স্বীকার করেন, পাকিস্তানের দিক থেকে নিয়ে আসার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তাহলে প্রশ্ন আসে, এই বিপুল বিস্ফোরক সীমান্ত পার করল, অথচ কেউ জানতেও পারল না? সেই উত্তর কিন্তু আজও মেলেনি। স্থানীয় প্রশাসন তো বটেই, জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা অর্থাৎ এনআইএ’ও এই এক বছরে বিস্ফোরকের সূত্র উদ্ধার করতে পারেননি। আর এই প্রশ্নটাই তুলেছেন রাহুল গান্ধী। তদন্তে কী বেরল? নিরাপত্তার এই চরম গাফিলতির জন্য বিজেপির কার কার সাজা হল?
রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে অবশ্য বিজেপিও নেমে পড়েছে। তারা পাল্টা প্রশ্ন করেছে, ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধীর মৃত্যুতে কার লাভ হয়েছিল? মীনাক্ষী লেখি বলেন, ‘এ ধরনের মানসিকতার মানুষ কীভাবে এখনও ভারতীয় রাজনীতিতে নিজেদের প্রয়োজনীয়তার কথা ভাবতে পারেন! এ ধরনের মানসিকতার জন্যই রাজনীতিবিদদের মানুষ শকুন বলে।’ এই নেত্রী বোধহয় ভুলে গিয়েছেন, সার্জিকাল স্ট্রাইক বা পুলওয়ামা পরবর্তী বালাকোট হামলার মতো ঘটনাকে বিজেপিই রাজনীতির ময়দানে আমদানি করেছিল। নোট বাতিল এবং তারপর জিএসটির নড়বড়ে প্রয়োগে যখন গোটা দেশ ধুঁকছে, তখনই পাকিস্তানে ঢুকে হামলার এই কৌশল ডিভিডেন্ড দিয়েছিল নরেন্দ্র মোদি তথা বিজেপিকে। কাজেই লাভ-লোকসানের অঙ্ক এখানে না কষলেই ভালো। ভারতের নিরাপত্তার এক একটি স্তম্ভ আমাদের জওয়ানরা। তাঁদের মৃত্যু বা বীরত্বকে রাজনীতির কৌশল বানানো কখনওই কাম্য নয়। শাসক হোক বা বিরোধী, কারও সেই অধিকার নেই।