মাঝেমধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। গবেষণায় আগ্রহ বাড়বে। কর্মপ্রার্থীদের নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
মোদি সরকারের এই এক-পা এগিয়ে দু-পা পিছিয়ে আসার আরও রহস্য হল—তীব্র আর্থিক মন্দার প্রতিক্রিয়া সামলাতে গিয়ে লেজেগোবরে অবস্থা। বঙ্গদেশে একটি কথা আছে—কলকাতায় না-এলে বাঙালির ছেলে কুলীন হয় না। ভারতীয় রাজনীতিতেও তেমনি, বাংলা-শাসনের অধিকার না-পাওয়া পর্যন্ত একটি রাজনৈতিক দলের কৌলীন্য নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন থেকে যায়। তাই বিজেপি বাংলা দখলে ভয়ানক মরিয়া। আরও মরিয়া এই কারণে যে, বাংলা হল শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের রাজ্য। বিজেপির পক্ষে সবচেয়ে শ্লাঘার বিষয় হল, শ্যামাপ্রসাদই পশ্চিমবঙ্গ নামক রাজ্যটির স্রষ্টা। কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদার বিরুদ্ধে লড়াইতে নেমে শ্যামাপ্রসাদ আত্মবলিদান করেছিলেন। সব মিলিয়ে বাংলাকেই পাখির চোখ করেছেন মোদি-অমিত শাহরা। কিন্তু, বাঙালির মন জয় না-করে বাংলাজয় যে অসম্ভব! বিজেপি ভেবেছিল সিএএ-কে সামনে রেখে হিন্দু বাঙালির, বিশেষত উদ্বাস্তু বাঙালির মন কেড়ে নেবে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সার্বিক আন্দোলন দেখে বিজেপি নিশ্চয় প্রমাদ গুনছে। এনআরসি, এনপিআর নিয়ে বিজেপি সরকারের হঠাৎ এই ভোল বদল অন্তত সেই সাক্ষ্যই দিচ্ছে।
সরকার জানিয়েছে, এনআরসি নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত কিছু হয়নি। এনপিআর নিয়েও আশঙ্কা বা বিভ্রান্তির অবকাশ নেই। এনপিআর চলাকালে দেশবাসীকে কোনও নথি দেখাতে হবে না। শুধু আপডেট করা হবে—দেশবাসীর ধর্মীয় পরিচয় কিংবা পরিবার অথবা ব্যক্তির পরিচিতি, তাঁর বসবাসের ঠিকানা, জনপদের ভৌগোলিক অবস্থান প্রভৃতি। জনগণনার প্রাথমিক পর্বের পরিভাষায় এটিকে গৃহ-নথিভুক্তিকরণ বলে। সরকার আরও আশ্বস্ত করেছে—এমনকী কোনও ব্যক্তির পরিচিতি অথবা নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দেহ দেখা দিলেও এনপিআর প্রক্রিয়ায় তা যাচাই করা হবে না। এনপিআর-এ দেশবাসী নিজেদের বিশ্বাস ও জ্ঞাতসারে যেটুকু তথ্য দেবেন, সেটাই নিঃশর্তে নথিবদ্ধ করবেন সমীক্ষকরা। এমনকী, আধার সংক্রান্ত তথ্যাবলি দেওয়া-না-দেওয়াটাও দেশবাসীর জন্য ঐচ্ছিক। এটুকু জানার পর দেশবাসী নিশ্চয় স্বস্তি বোধ করছেন। কিন্তু, চোরা অস্বস্তি যে থেকেই যাচ্ছে! কারণ, সরকার একবারও বলেনি যে, গোটা দেশে এনআরসি কখনোই হবে না। আসল ভয় সেখানেই। সরকারের উচিত, এই বিষয়ে তাদের মনোভাবটি স্পষ্ট করা। তা না-হলে এই প্রশ্নে দেশবাসীর ক্ষোভ নির্মূল হওয়া অসম্ভব। সামান্য সময়ের ভিতরে নাগরিকত্ব নিয়ে যে কাণ্ড হয়েছে তা ঢের! সরকারের উচিত, এই কীর্তন ছেড়ে দিয়ে অর্থনীতির হাল ফেরানোর দিকেই মন দেওয়া। গরিবের হাতে পয়সা, জিনিসপত্রের চাহিদা এবং কর্মসংস্থান—এই তিনের বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হলে নাগরিকত্ব কৌশল ব্যুমেরাং হতে বাধ্য। তখন ঘুরপথে বাংলা দখলের স্বপ্নই শুধু চুরমার হবে না, দেশটাও নিশ্চিত হাতছাড়া হতে পারে বিজেপির।