মাঝেমধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। গবেষণায় আগ্রহ বাড়বে। কর্মপ্রার্থীদের নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
এহেন দশার মধ্যে গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো গ্যাসের দামবৃদ্ধিতে বাঙালির তো হেঁশেলে আগুন লেগে যাবে। গ্যাস বাঁচানোর জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তা ঘরণীরাও ঠাহর করতে পারছেন না। এই গ্যাস নামক মহার্ঘ্য বস্তুটি সাশ্রয় করার পাশাপাশি পরিশ্রম বাঁচানোর জন্য অধিকাংশ বাড়িতেই এখন রুটি করার পাট প্রায় চুকে গিয়েছে, সেখানে এবার ৩০ তারিখ পর্যন্ত সংসার চালাতে কতটা হিমশিম খেতে হবে তা ভাবনার বিষয়।
সেই কারণেই একটি মূল প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। তাহলে কি রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি ধীরে ধীরে তুলে দেওয়ার পথে এগচ্ছে সরকার? শুধু এবারই হঠাৎ করে নয়, গত কয়েক মাস ধরে কম ভর্তুকি আসছে, তাতে এই প্রশ্নই মাথাচাড়া দিচ্ছে। গত ছ’মাস ধরেই ন্যায্য ভর্তুকির চেয়ে কম টাকা মিলছে। সেই অঙ্ক যোগ হতে হতে তা প্রায় ৬০ টাকায় পৌঁছেছে। শুধু সাধারণ গ্রাহকরাই নন, মোদি সরকারের ভর্তুকির কোপে পড়েছেন গরিবের জন্য বরাদ্দ উজ্জ্বলা যোজনার গ্রাহকরাও।
কীভাবে কমছে ভর্তুকি? ধরা যাক, জানুয়ারি মাসে কলকাতায় গ্যাসের দাম ছিল ৭৪৭ টাকা। ডিসেম্বরের তুলনায় দাম বাড়ে ২১.৫০ টাকা। ডিসেম্বরে গ্রাহক ভর্তুকি পেয়েছিলেন ১৭০.৯০ টাকা। সেই মতো জানুয়ারিতে আরও ২১.৫০ টাকা বেশি ভর্তুকি পাওয়ার কথা ছিল গ্রাহকের। কিন্তু, ভর্তুকি এসেছে মাত্র ১৮৭.৩৮ টাকা। অর্থাৎ ২১.৫০ টাকার জায়গায় বাড়তি ১৬.৪৮ টাকা ঢুকেছে অ্যাকাউন্টে। ফেব্রুয়ারিতে গ্যাসের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও ভর্তুকি বাবদ মিলেছে ১৮৩.৩৮ টাকা। উজ্জ্বলাতেও যেখানে জানুয়ারিতে ২০৮.৩৮ টাকা ভর্তুকি পাওয়ার কথা ছিল, বাস্তবে তা হয়েছে ২০৪.৩৮ টাকা। অর্থাৎ সবক্ষেত্রেই এক আশ্চর্য গোপনীয়তা অবলম্বন করে দেশের মানুষের পকেট কাটা চলছে অলক্ষ্যে।
প্রশ্ন হচ্ছে—এই রাখঢাক গুড়গুড় কেন? প্রকৃতপক্ষে কেন্দ্রীয় সরকারের এখন ‘জলসাঘর’ সিনেমার পড়ন্ত জমিদারির মতো দশা হয়েছে। নামে তালপুকুরে ঘটি ডুবছে না। সরকার চালানোর খরচ সামলাতে গিয়ে রাজকোষ থেকে মোহর চলে যাচ্ছে। ফলে, এই ডুবন্ত জাহাজকে আরও কিছুক্ষণ ভাসিয়ে রাখার প্রয়োজনে আমআদমির রক্ত চুষে খাওয়ার নীতি নিচ্ছে কেন্দ্র। আর তারই একটি অঙ্গ হল গ্যাসের ভর্তুকিকে কাটছাঁট ও দাম বাড়িয়ে দেওয়া। হ্যাঁ, অর্থনীতির ভাষায় একথা ঠিক যে, ভর্তুকি দিয়ে সরকার চলতে পারে না। কিন্তু, এটাও তো ঠিক যে, দিল্লির ভোট মিটতেই এই দাম বাড়ানো হল। হতে পারে এটা কাকতালীয় ঘটনা! কিন্তু, আমাদের কি বিশ্বাস করতে মন চাইবে! ফেব্রুয়ারির গোড়ায় অর্থাৎ দিল্লির নির্বাচনের মুখে দাম বাড়ল না, আর ফলপ্রকাশের পর বিজেপি ধূলিসাৎ হয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা বেড়ে গেল, এবং তা লাফ মেরে ১৪৯ টাকা! এটাও কি পোড়ো জমিদারতন্ত্রের সেই ঘোড়াকে চাবুক মেরে দৌড় করানোর চেষ্টা! যার উপসংহারটিও অনেকেরই জানা। উচ্চতা থেকে পতন হয়ে মৃত্যু। বিজেপি সরকারও এখন যে সংখ্যার সুউচ্চ মিনারে দাঁড়িয়ে, অহঙ্কারের ভিত নড়ে গেলে সেখান থেকে সমূহ পতনেও তাই হবে। আম আদমির ঝাড়ু দিয়ে পদ্মফুল সাফাই কি তারই ইঙ্গিতবাহী! বিজেপি নেতৃত্ব কি সেই অশনি সঙ্কেত দেখতে পাচ্ছে না?