মাঝেমধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। গবেষণায় আগ্রহ বাড়বে। কর্মপ্রার্থীদের নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
বাইরে থেকে আমাদের দেশের অর্থনীতির উপর আঘাত হানার প্রচেষ্টা চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। নানা উপায়ে একটি প্রতিবেশী রাষ্ট্র আমাদের দেশের অর্থনীতিকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিতে সচেষ্ট। সেই রাষ্ট্রের নাম যে পাকিস্তান, তা আর বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না। সে দেশের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের মদতে জঙ্গি সংগঠনগুলি অনবরত কলকাঠি নেড়ে চলেছে। তারা যে পদ্ধতিতে ভারতের অর্থনীতির কোমর ভেঙে দিতে চেয়েছে, তার একটি হল জাল নোট। অর্থাৎ ভারতে অনবরত জালনোট ঢুকিয়ে দিয়ে তার মজবুত বুনিয়াদটাকে ভেঙে দেওয়াই তাদের উদ্দেশ্য। এই প্রক্রিয়া চলছে দীর্ঘদিন ধরে। ভারত নানাভাবে সচেষ্ট হয়ে এই উদ্যোগ রোখার চেষ্টা করলেও সার্বিকভাবে সফল হয়নি। এত বড় দেশের এত বড় সীমান্ত। সেখান দিয়ে চোরাপথে দিনের পর দিন নানা প্রক্রিয়ায় আমাদের দেশে ঢুকেছে জাল নোট। সেই টাকা মিশে গিয়েছে আমাদের দেশের আসল টাকার সঙ্গে। দুর্বল করেছে আমাদের অর্থনৈতিক ভিতটাকে।
পাকিস্তানে এইসব জাল নোট ছাপা হয়। তারপর সেগুলি বাংলাদেশ বা নেপাল হয়ে সীমান্ত টপকে এদেশে ঢোকে। এর পিছনে যেমন পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কিছু অসাধু লোক জড়িত, তেমনই জড়িত এদেশের দালালরাও। তারা কমিশনের ভিত্তিতে এদেশে সেই জাল টাকা ঢুকিয়ে প্রচুর টাকা কামায়। এই শ্রেণীর মানুষ অবশ্যই দেশের শত্রু। এদের বিরুদ্ধে চলছে ধরপাকড়। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাবাহিনীর তৎপরতায় অনেক অপারেশন ব্যর্থ করা গিয়েছে। চাপে পড়ে মাঝে মাঝেই কৌশল বদলায় জাল নোটের কারবারিরা। যেমন এতদিন জাল টাকা ছাপা হতো করাচি বা ইসলামাবাদে। জাল নোটের কারবারিরা ইদানীং কৌশল বদলেছে। সাতক্ষীরায় একটি সিনেমা হলের কাছে জাল নোট ছাপানোর নতুন উইনিট খুলেছে নব্য জেএমবি জঙ্গিরা। সেখানে ছাপা হচ্ছে নতুন পাঁচশো, দুশো টাকার জাল নোট। দেখা গিয়েছে দু’ হাজার টাকার জাল নোট বেশি ধরা পড়ে। গোয়েন্দরা দু’ হাজার টাকার নোটের ব্যাপারে বেশি সজাগ থাকে। তাই কৌশল বদলে পাঁচশো এবং দু’শো টাকার নোট জাল করার কৌশল নিয়েছে কারবারিরা। ছাপার পর তা চলে যাচ্ছে ভোমরা এবং কলারোয়াতে। সেখান থেকে ঢুকছে ভারতে। মূলত মুর্শিদাবাদ, নদীয়া এবং মালদহ সীমান্ত দিয়ে এই জাল নোট ভারতে ঢুকছে।
আমাদের দেশের দুর্বল অর্থনীতির অন্যতম কারণ হল দেশের বাইরে থেকে আঘাত। যেটা ইচ্ছাকৃত এবং এর উদ্দেশ্যই হল আমাদের অর্থনীতিকে দুর্বল করা। আর একটা আঘাত আছে। যেটা আমাদের আসছে ভিতর থেকেই। ভুল সিদ্ধান্ত তথা পরিকল্পনায় গলদ থাকার জন্য আমাদের অর্থনীতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। যে কোনও কাজে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। সেক্ষেত্রে ভুল হলে সেই ভুলের ছাপ সেই কাজের ক্ষেত্রে পড়বেই। আমাদের দেশে আগে যারা সরকারে ছিল, তাদের ভুল সিদ্ধান্ত যে ছিল না, তা নয়। কিন্তু মোদি সরকারের কয়েকটি বড় বড় ভুল দেশের অর্থনীতিকে ক্রমেই খাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। নোট বাতিল থেকে সেই ভাঙনের যেন শুরু। হয়তো উদ্দেশ্য মহৎ ছিল, কিন্তু তা কার্যকর করার ক্ষেত্রে পরিকল্পনাটা সঠিক ছিল না। এবারের বাজেটেই আমরা দেখতে পেলাম, অর্থনীতির কী হাল হয়েছে। সরকারের নুন আনতে পান্তা ফুরনো ভাবটা আর লুকনো গেল না। দেশের মানুষেরও তথৈবচ অবস্থা। ব্যাঙ্কের সুদ কমতেই থাকছে। খোদ নির্মলা সীতারামনই গত শনিবার এই শহরে এসে ব্যাঙ্ক এবং পোস্ট অফিসে টাকা রাখার ব্যাপারে মানুষকে তেমন উৎসাহ দেননি। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে ব্যাঙ্কগুলির খুব খারাপ অবস্থা। এই অবস্থায় তাঁর নিদান হল, শেয়ারে টাকা খাটান, মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা রাখুন। নিজের ভাঁড়ারের কী অবস্থা তা মন্ত্রী মহোদয়া ভালো করেই জানেন। তাই এখন চারিদিকে সরকারি সম্পত্তি বিক্রি করে ঘরে টাকা আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এখনও সময় আছে। নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে গোঁ ধরে থাকলে দেশের মানুষকে আরও বড় মূল্য দিতে হবে। এনআরসি, সিএএ সঙ্কটের সঙ্গে মোদি সরকারের পায়ে গোদের উপর বিষফোঁড়া হল এই অর্থনৈতিক সঙ্কট। সেটা কাটিয়ে উঠতে না পারলে আমরা হয়তো একদিন আর একটা বাংলাদেশ বা পাকিস্তান হয়ে যাব।