মাঝেমধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। গবেষণায় আগ্রহ বাড়বে। কর্মপ্রার্থীদের নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
এরাজ্যে বৃহস্পতিবার এমনিতেই ছুটি ছিল ব্যাঙ্কে। তার পরদিন শুক্রবার ও শনিবার ধর্মঘটের ডাক দেওয়া ছিল। আগামীকাল রবিবার, যথারীতি ছুটি। তাহলে মাসের শেষ থেকে মাসের শুরুতেই টানা চারদিন বন্ধ ব্যাঙ্কের দরজা। ফলে, দেখা যাচ্ছে—দাবিদাওয়া আদায়ের জন্য ডাকা এই ধর্মঘটের জেরে বহু মানুষের অসুবিধা হল। সে কথা কি তাঁরা একবারও ভেবেছেন? ধর্মঘট ডেকে প্রতিবাদের স্লোগানকে উচ্চকিত করাই যদি উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে আগামী সপ্তাহের মাঝখানেও তা ডাকা যেত। মাসের শেষ তারিখ বা প্রথম তারিখে টাকা না তুলতে পারলে কয়েক কোটি মানুষের ভাতের থালায় যে টান পড়ে, সেটাকেই আন্দোলনের মূলধন করাই কি লক্ষ্য এই ধর্মঘটের?
এ কথা ঠিক, ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কর্মচারী ও অফিসার সংগঠনগুলির শেষতম আলোচনাতেও কোনও সমাধানসূত্র না মেলায় ধর্মঘটের পথেই হেঁটেছে নেতৃত্ব। ব্যাঙ্ক কর্মীস্বার্থে বৃহৎ জনস্বার্থ বিসর্জন দেওয়া এবং সর্বোপরি আপাত জয়ের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকাই কি এই ধর্মঘটের স্বরূপ? শুধু তাই নয়, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারি সাধারণ বাজেট পেশ হচ্ছে সংসদে, সেদিনও ব্যাঙ্কে ধর্মঘট থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে।
ব্যাঙ্কের কর্মী ও অফিসারদের ন’টি মূল সংগঠন একযোগে ওই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। মোট ১২ দফা দাবিতে ডাকা হয়েছে ধর্মঘট, যার অন্যতম ইস্যু ব্যাঙ্ককর্মী ও অফিসারদের বেতন বৃদ্ধি। যদি এরপরও ধর্মঘটীদের দাবি না মানা হয়, তাহলে আগামী ১১ মার্চ থেকে ১৩ মার্চ ফের ধর্মঘটের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এখানেও লক্ষণীয়, ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১০ মার্চ, মঙ্গলবার দোল বা হোলি। মাঝের তিনদিন ধর্মঘট সংঘটিত হলে, ১৪ মার্চ, সপ্তাহের দ্বিতীয় শনিবার, পরদিন ১৫ মার্চ, রবিবার—অর্থাৎ টানা ছ’দিন ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকবে। আন্দোলনের ওই দিন নির্বাচনও কি অপরিকল্পিত! বিষয়টি ভেবে দেখার।
যদিও ধর্মঘটী সংগঠন অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক অফিসার্স কনফেডারেশনের রাজ্য শাখার সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় দাস সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, আমরা যে ১২ দফা দাবিতে ধর্মঘট ডেকেছি, তার মধ্যে অন্যতম হল বেতন কাঠামোর সংস্কার। নিয়ম হল, পাঁচ বছর অন্তর ব্যাঙ্ককর্মী ও অফিসারদের বেতন কাঠামোর বদল আনা হয়। সেই হিসেবে আমাদের বেতন চুক্তি শেষ হয়ে গিয়েছে ২০১৭ সালের অক্টোবরে। অর্থাৎ ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে নতুন হারে বেতন চালুর কথা ছিল, যা হয়নি। আমরা তাই ধর্মঘটে অনড় থাকছি। তবে দু’দিনের ধর্মঘটে আমরা বেতন নেব না।
ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী কর্মী সংগঠন অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সর্বভারতীয় সভাপতি রাজেন নগর বলেছেন, আমরা যেমন ব্যাঙ্কের নিজস্ব কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির দাবি জানাচ্ছি, তেমনই চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী ও বিজনেস করেসপনডেন্টদেরও সমকাজে সমবেতনের দাবি জানাচ্ছি। সপ্তাহে পাঁচ দিন ব্যাঙ্ক পরিষেবা চালু রাখা বা বেতনের বেসিকের সঙ্গে স্পেশাল অ্যালাউন্স যুক্ত করার মতো বেশ কিছু দাবিও আমাদের তরফে করা হয়েছিল। কিন্তু ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের অনমনীয় মনোভাবই আমাদের ধর্মঘটে যেতে বাধ্য করল। রাজেনবাবুর দাবি, যেহেতু এটিএমের নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁদের সংগঠনের আওতায় আছেন, তাই এটিএমগুলিতেও এই ধর্মঘটে ভালো সাড়া পড়বে। অর্থাৎ, এর জেরে বহু মানুষ এই ক’দিন যে কপর্দকশূন্য হয়ে পড়তে পারেন তা কি একবারও তাঁরা ভেবেছেন? অথচ, ধর্মঘট চলাকালীন এটিএম এবং ই কাউন্টারগুলিতে টাকার জোগান রাখলেও মানুষের অনেক উপকার হতো, তাঁরা সেই রাস্তাতেও গেলেন না। সরকারের উপর গোঁসা করে তাঁদের এই ধর্মঘট সাধারণ মানুষকে কতটা উদ্বেগ, ভোগান্তি ও হেনস্তার খাদে ঠেলে দিল তা ভেবে দেখার বিষয়।