মাঝেমধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। গবেষণায় আগ্রহ বাড়বে। কর্মপ্রার্থীদের নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
সেইদিক থেকে ব্যবহৃত জল ফেলে না দিয়ে, তাকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলার উদ্যোগ বিশ্বময় শুরু হয়েছে। এই কাজে পিছিয়ে থাকতে চাইছে না কলকাতাও। কলকাতাজুড়ে শুধুই আবাসনের জঙ্গল। সেখানে বসবাস করেন কয়েক হাজার মানুষ। প্রতিদিন এক-একটি আবাসনে কয়েক লক্ষ গ্যালন জল ব্যবহার হয় শুধুমাত্র স্নান, বাসন মাজা, কাপড় কাচা ও শৌচকর্মের জন্য। ভূগর্ভস্থই হোক বা সরকারি পাইপলাইনে সরবরাহ করা হোক, এই পরিমাণ জল রোজ নর্দমা দিয়ে বেরিয়ে চলে যাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ হলে তো আরও মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে জলভাণ্ডারের। এই জল রোজ পাম্প করে উপরে তুলতে খরচ হচ্ছে বাড়তি বিদ্যুতের। সেখানে বহুতলগুলির ব্যবহৃত জল পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তা দিয়েই সিঁড়ি ধোওয়া, গাড়ি পরিষ্কার করা, বাগানে ব্যবহার করা সহ বাকি কাজ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এব্যাপারে মানুষকে আরও বেশি সচেতন করতে যুব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
কলকাতাকে নয়া আঙ্গিকে গড়তে যুবদের কাছ থেকে পরামর্শ পেতে ফেসবুক লাইভে একটি অনুষ্ঠান করেছেন মেয়র। যার নাম ‘ইয়ুথ ফর কলকাতা’। যেখানে ফিরহাদ হাকিম তাঁর বক্তব্যে ব্যবহৃত জল পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলার ব্যাপারে বেশি গুরুত্ব দেন। তিনি বলেছেন, জল অপচয় রুখতে হবে। কারণ, ভূগর্ভস্থ জলস্তরের অবস্থা ভালো নয়। তাই গাড়ি পরিষ্কার, উদ্যান পালনের জন্য যেভাবে জল ব্যবহৃত হয়, তাতে রাশ টানতে হবে। এক পড়ুয়া পরামর্শ দেন, এভাবে গাড়ি পরিষ্কারের জন্য যে জল ব্যাপক পরিমাণে নষ্ট হয়, তা কি রোখা যায়? অন্য কোন উপায় রয়েছে? উত্তরে মেয়র বলেন, অতীতে গঙ্গা থেকে অপরিস্রুত জল দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করা হতো। কিন্তু যে পাইপলাইন দিয়ে ওই জল আসত, তাতে পলি জমে যাওয়ায়, তা বারবার নষ্ট হওয়ায় রক্ষণাবেক্ষণ করা অসুবিধা হয়ে দাঁড়াত। তাই এবার গঙ্গা পার্শ্ববর্তী এলাকায় কলকাতা বন্দরের কাছ থেকে বেশ কিছু জমি চাওয়া হয়েছে। এছাড়াও কিছু জায়গা পরিকল্পনার মধ্যে রাখা হয়েছে। যেখানে গঙ্গার অপরিস্রুত জল তুলে এনে গাড়ি পরিষ্কারের কাজ করা হবে। একজন জিজ্ঞাসা করেন, বৃষ্টির জল ধরে রাখা নিয়ে কোনও ব্যবস্থা রয়েছে কি না? তাতে মেয়র জানান, তিনি নেদারল্যান্ডস থেকে দেখে এসেছেন, কীভাবে ভূগর্ভস্থ জলকে ‘রিচার্জ’ করা যায়। সেই পদ্ধতি মা উড়ালপুলের নীচে প্রয়োগ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যদি তাতে সাফল্য আসে, তাহলে ভূগর্ভস্থ জলকে দ্রুত শেষ হওয়া থেকে রুখতে আধুনিক ওই পদ্ধতি অবলম্বন করা হবে।
শুধু জল নয়, কলকাতা এখন দূষণেরও শহর। এর প্রধান কারণ নগরায়নের জন্য নির্বিচারে বৃক্ষনিধন। যাঁরা প্রবীণ মানুষ, তাঁরা জানেন, ছয়-সাতের দশকেও কলকাতায় কত গাছ ছিল। ধর্মতলা-ময়দান চত্বর তো বটেই সার্কুলার রোড ও ভিআইপি রোড দিয়ে যাওয়ার সময় দু’ধারের গাছ মাথায় যেন ছাতা ধরে রাখত। আর মূল শহর থেকে দু’পা বাইরে গেলেই মনে হতো গ্রামে এসেছি। সেসব আজ ইতিহাসের মতো শোনাবে নবীন প্রজন্মের কাছে। তাই মেয়রও জানিয়েছেন, কলকাতাকে দূষণমুক্ত রাখতে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে শহরে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধিতে দেবদারু এবং নিমগাছ লাগানোর উপরে বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।
শুধু মেয়র নন, রাজ্যের বনমন্ত্রীও এব্যাপারে সচেষ্ট হয়েছেন। তিনিও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কোনওমতেই বনের জমি নিয়ে ব্যবসা করা, বনাঞ্চল ধ্বংস করা বরদাস্ত করবেন না। মন্ত্রী বনভূমি বাড়ানোর উপরও জোর দেন। ২২টি শহরে ও একশোর বেশি গ্রামে নতুন করে ব্যাপক পরিমাণে বৃক্ষরোপণের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।
সুতরাং, দেখা যাচ্ছে—এইভাবে আমাদের মধ্যেও পরিস্থিতি বুঝে জ্ঞানের নাড়ি টনটনে হচ্ছে। কারণ, এখনই এটা না হলে শুধু রাজ্যের নয়, দেশের নয়, গোটা পৃথিবীই সঙ্কটে পড়তে চলেছে। বিদেশে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় আইন অনেক আগেই কঠোর হয়েছে। আমাদেরও সচেতনতার পাশাপাশি কঠোর আইনের পথে হাঁটা আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে।