মাঝেমধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। গবেষণায় আগ্রহ বাড়বে। কর্মপ্রার্থীদের নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
এটা ঠিক, কয়েক দফায় কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যার শুরুটা হয়েছিল এক চীনা নাগরিক মহিলাকে দিয়ে, যিনি নানা দেশ ঘুরতে ঘুরতে হাজির হয়েছিলেন এরাজ্যে। ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো নানা উপসর্গ দেখা দেওয়ায় একরকম ভয়েই ভর্তি হয়ে যান বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে। নিয়মমতো তাঁকে রাখাও হয়েছিল আইসোলেশন ওয়ার্ডে। কিন্তু থুতুর নমুনা পরীক্ষার পর দেখা গেল, যা আশঙ্কা করা হয়েছিল, তা পুরোপুরি ভুল। আরও মারাত্মক ঘটনা ঘটল ঠিক তার পরেই। সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি নিয়ে একজন ভর্তি হলেন বাইপাস সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, তাঁর মৃত্যু হল। ব্যস, দাবানলের মতো খবর ছড়িয়ে পড়ল, করোনা ভাইরাসে রাজ্যে প্রথম মৃত্যু হয়েছে। যদিও অনেকেরই তখন মাথায় ছিল না, বেঁচে থাকা অবস্থায় ওই রোগীর থুতুর নমুনা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল পরীক্ষাগারে। যে কোনও মৃত্যু দুঃখের। কিন্তু তাঁর থুতুর রিপোর্ট এল নেগেটিভ, যা লক্ষ লক্ষ রাজ্যবাসীকে স্বস্তি দিয়ে গেল। হালফিলের খবর, যে তিনজন চীনা নাগরিককে বেলেঘাটা আইডি’তে ভর্তি করা হয়েছে, তাঁদেরও রিপোর্ট এসেছে নেগেটিভ। অর্থাৎ, যতটা আতঙ্ক ছড়িয়েছে, বাস্তব পরিস্থিতি ততটা উদ্বেগজনক নয়। অনেক ক্ষেত্রেই করোনার উপসর্গের সঙ্গে সাধারণ সর্দি, কাশি, জ্বরের মিল থাকায় আতঙ্কটা আরও বেশি করে ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা পরিষ্কারই জানিয়ে দিয়েছেন, এই ভাইরাস যতই প্রাণঘাতী হোক না কেন, এটি ছড়িয়ে পড়ার পিছনে চীনের হাত কোনও না কোনও ভাবে থাকাটা জরুরি। অর্থাৎ, চীন থেকে আক্রান্ত হয়ে কেউ এসেছেন এবং তাঁর সঙ্গে কোনও না কোনওভাবে সম্পর্ক স্থাপন হয়েছে, এটা হতেই হবে। এটি যেহেতু বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, তাই সতর্কতা অবশ্যই জরুরি। রাজ্য সরকারও এ ব্যাপারে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। যেমন শুরুটা হয়েছিল বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরির মধ্য দিয়ে। পরে গুরুত্ব বুঝে সেই সংখ্যাটা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। কিন্তু আতঙ্ক কাটেনি। একথা ঠিক, সোয়াইন ফ্লু, ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়া যেভাবে রাজ্যবাসীর কাছে পরিচিত, এটি তা নয়। সার্ফ, মার্স ইত্যাদির পর এটি হল ইনফ্লুয়েঞ্জার সপ্তম ভাইরাস। একই চেহারায় এটি হাজির হলেও এসেছে অন্য অস্ত্র নিয়ে। এতে মৃত্যুহারও সাধারণত বেশি হয়ে থাকে। তাই সজাগ থাকা, মাস্ক ব্যবহার করা, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা, বেশি ভিড়ে যাতায়াত না করা, বিশেষত বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সতর্কতা নেওয়া খুবই জরুরি। চীন ফেরত কারও সঙ্গে যোগাযোগ হলে তো আরও বেশি মাত্রায় সতর্কতা আবশ্যিক। কারণ, এটি প্রথমে আপার রেসপিরেটরি ট্র্যাক, পরে লোয়ার এবং এক সময় একেবারে আক্রমণ করে ফুসফুসকেই। যার পরিণতি নিউমোনিয়া। ল্যানসেটের এক সমীক্ষাতেও দেখা গিয়েছে, এই ভাইরাসে আক্রান্ত ৪১ জনের মধ্যে ৪০ জনেরই ছিল নিউমোনিয়া।
তাই সতর্কতা যেমন ভালো, তেমনি অযথা আতঙ্কিত হওয়ার পরিণতি সুখকর নাও হতে পারে। তাতে মানুষে মানুষে অবিশ্বাসের বাতাবরণে সামাজিক এক সঙ্কটও তৈরি হতে পারে। এক্ষেত্রেও রাজ্য সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। রোগ হলে তা সামলানোর জন্য যেমন ব্যবস্থা গ্রহণ চলছে, তেমনি মানুষ যাতে অযথা আতঙ্কিত না হয়, তার জন্যও ব্যাপক প্রচার দরকার।