মাঝেমধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। গবেষণায় আগ্রহ বাড়বে। কর্মপ্রার্থীদের নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
করোনা আতঙ্কে ইতিমধ্যে চীনসফর বতিল করেছে ভারতের মহিলা হকি দল। বিমান সংস্থাগুলি জানাচ্ছে, ভাইরাসের ভয়ে মার খাচ্ছে পর্যটন ব্যবসাও। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ এবং লুফথানসা বিমান সংস্থা চীনে সব ফ্লাইট বাতিল করেছে। ক্যাথে প্যাসিফিক ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় তাদের বিমানে বালিশ, কম্বল এবং ম্যাগাজিন বহন বন্ধ করে দিয়েছে। চীনের কুনমিং শহরে কলকাতা থেকে সপ্তাহে আটটি করে উড়ান চালাচ্ছিল চায়না ইস্টার্ন উড়ান সংস্থা। তারাও উড়ান সংখ্যা কমিয়ে চারটিতে নামিয়ে এনেছে। শুধু চীন, হংকং নয়, সম্প্রতি ব্যাঙ্কক এবং সিঙ্গাপুর থেকেও কলকাতায় আসা যাত্রীদের থার্মাল পরীক্ষা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কলকাতা থেকে সবচেয়ে বেশি উড়ান রয়েছে ব্যাঙ্ককে। সেখানেও যাত্রী কমতে শুরু করেছে। অতীতে সার্সের মতো মারণ ভাইরাসের প্রকোপে পর্যদুস্ত হয়েছিল পর্যটন। সার্সের কারণে শুধু পর্যটনশিল্পের ক্ষতি হয়েছিল এক হাজার কোটি ডলার। বিশেষজ্ঞরা অনুমান করেছেন যে, এবার নোভেল করোনা ভাইরাসটি পর্যটন শিল্পে এর চেয়ে বেশি লোকসান ঘটাবে। শুধু তাই নয়, এই ক’দিনেই অ্যান্টিবায়োটিক এবং ব্যথানাশক ওষুধের অপরিহার্য উপাদান অ্যাক্টিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্টসের (যেমন প্যারাসিটামল, নিমুসিল্যাইড, অ্যাজিথ্রোমাইসিন ইত্যাদি) দাম ৩-৪ গুণ বেড়ে গিয়েছে। তাতে চলতি মাসের শেষ হওয়ার আগেই চীনের উৎপাদন স্বাভাবিক না-হলে ভারতের পুরো ওষুধ শিল্পেরই বিপদ রয়েছে বলে জানিয়েছেন ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি। মোবাইল এবং কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স ক্ষেত্রেও একই পথে বিপদ ঘনাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন এই ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞরা। ভারতে বিপুল পরিমাণে টেলিভিশন প্যানেল, এলইডি চিপ, ফ্রিজ-এসি এবং মোটরের কম্প্রেশার আমদানি হয় চীন থেকে। যার জোগান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর মধ্যেই ভাঁড়ারে ভাটার টান শুরু হয়েছে।
হংকংয়ে ধাক্কা খেয়েছে ওয়াল্ট ডিজনির ব্যবসা। ভাইরাস সংক্রমণের জেরে তাদের দুটি পার্ক আপাতত বন্ধ। চলতি ত্রৈমাসিকে তাদের আয় ১৭.৫ কোটি ডলার ধাক্কা খেতে পারে। চীনের উহান এলাকাটি ‘ম্যানুফ্যাকচারিং হাব’ হিসেবে পরিচিত। এই অঞ্চলে গড়ে উঠেছে অটোমোবাইল বা গাড়ি নির্মাণশিল্প। সেখানে একাধিক কারখানা রয়েছে জাপানি বহুজাতিক নিসান মোটরের। আর এক জাপানি বহুজাতিক টয়োটা মোটর কর্পের ১২টি কারখানা রয়েছে চীনে। এর মধ্যে চারটি গাড়ি তৈরি করে, বাকিগুলি যন্ত্রাংশ। সবগুলিই এখন বন্ধ। চীনে স্টারবাকসের ৪ হাজার ৩০০টি আউটলেট রয়েছে, যার অর্ধেকই এখন বন্ধ। চীনের সরকারি কর্তাদের মতে, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ একটি ‘জটিল এবং গুরুতর’ সঙ্কটের মুখোমুখি। দেশটি বছরে ২.৩ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের পণ্য রপ্তানি করে, যার দিকে তাকিয়ে থাকে গোটা দুনিয়া। তাছাড়া চীনের জিডিপির সাড়ে ৪ শতাংশ আসে হুবেই প্রদেশ থেকে। ফলে হুবেই স্থবির থাকার অর্থ হল, চীনের অর্থনীতির সার্বিক বৃদ্ধি কমে যাওয়া। প্রশ্ন হল, বিমানবন্দরগুলো বন্ধ করে দেওয়ার পর চীন কি তার নৌবন্দরগুলোও বন্ধ করে দেবে? যদি তাই হয়, তা নিঃসন্দেহে গোটা দুনিয়ার জন্য বড় ধাক্কা। বিখ্যাত তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল ও ফ্রান্সের গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান পিএসএ খুব দ্রুত বিকল্প সরবরাহকারী পথ খোঁজা শুরু করেছে, যাতে তারা কোনও ক্ষতির মুখে না-পড়ে। দুটি প্রতিষ্ঠানেরই উহানে বেশ কয়েকটি কারখানা রয়েছে। চীন ভোগ্যপণ্য, কাঁচামাল, খাদ্যসহ যেসব জিনিস উৎপাদন করে, তার ৮০ শতাংশের বেশি রপ্তানি হয় সমুদ্রপথে। সব মিলিয়ে বোঝা যাচ্ছে, বিশ্ব অর্থনীতি এখন বড় বিপদের মুখোমুখি। কবে চীনের পরিস্থিতি ঠিক হবে, সেই সম্পর্কে কোনও ধারণা না-থাকায় আশা-নিরাশার দোলায় দুলছে ভারতসহ বিশ্বের শিল্প-বাণিজ্য।