মাঝেমধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। গবেষণায় আগ্রহ বাড়বে। কর্মপ্রার্থীদের নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
এর সত্যতা ধরা পড়ল সরকারি তথ্যেও। এই দেশের ‘ভদ্র’ মানুষের মল বহুকাল ধরে ‘নিম্ন শ্রেণী’র কিছু মানুষকে দিয়ে বহন করানো হয়েছে। ব্যাপারটি নির্মম হলেও ভারতের সংস্কৃতির অঙ্গ হয়েই ছিল। কলকাতা ও হাওড়া শহরের খাটাপায়খানা তো বেশিদিন আগের কথা নয়। কোনও কোনও স্থানে চোরাগোপ্তা এখনও কিছু থাকলেও অবাক হওয়ার নয়। এই নিন্দনীয় অপরাধমূলক সংস্কৃতিতে পূর্ণচ্ছেদ টেনে দেওয়ার জন্যই ২০১৩ সালে কেন্দ্রীয় সরকার একটি আইন পাস করে। প্রোহিবিশন অফ এমপ্লয়মেন্ট অ্যাজ ম্যানুয়াল স্ক্যাভেনজারস অ্যান্ড দেয়ার রিহ্যাবিলিটেশন অ্যাক্ট। এই আইনের উদ্দেশ্য ছিল মানুষের মল মানুষকে দিয়ে বহনের অনাচার চিরতরে বন্ধ করা। সূচনাটা তাহলে পুরসভা এবং পঞ্চায়েতের মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি থেকেই করতে হয়। প্রথমে ম্যানুয়াল স্ক্যাভেনজার বা মেথর নিয়োগের প্রথা তুলে দিতে হবে। তারপর যেটা করতে হবে তা হল—এই পেশায় যাঁরা কাজ করে চলেছেন তাঁদের একটা সম্মানজনক পুনর্বাসন দিতে হবে। এ দেশের একটি চালু রসিকতা হল—‘আইন আইনের পথে চলবে’। আমাদের অভিজ্ঞতা বলে—এই বাক্যটি তাঁরাই বেশি বলে থাকেন, যাঁরা আইনকে কলা দেখানোর খেলায় দড়। এই ক্ষেত্রেও অন্যথা যে হয়নি সরকারি তথ্য তারই সাক্ষ্য দিচ্ছে: নতুন আইন কার্যকর হয়েছে ২০১৩ সালে। তার পরেও মেথর নিয়োগে কতটা ছেদ পড়েছে তা পরখ করে দেখতে চেয়েছিল কেন্দ্র। এজন্য কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায়বিচার মন্ত্রকের পক্ষ থেকে দেশজুড়ে একটি সমীক্ষা করা হয়। রিপোর্টে ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষ থেকে ২০২০ সালের জানুয়ারির মধ্যে ১৩টি রাজ্যে প্রায় ১৫ হাজার ‘মেথর’ চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি অন্য-এক সমীক্ষায় অস্বাস্থ্যকর শৌচালয় (ইনস্যানিটারি ল্যাট্রিন) খুঁজতে গিয়ে ১৮টি রাজ্যের ১৯৪টি জেলায় আরও প্রায় ৫০ হাজার মেথরের সন্ধান মিলেছে! সংখ্যাটি আরও বেড়েছে কি না সেটা জানতে এবার পুরসভা এবং গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে সমীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রক।
উদ্যোগটিকে স্বাগত জানিয়েও সংগত প্রশ্ন তুলতে হয়, আইন প্রণয়নের ছ’বছর পরেও কেন এত মানুষ ঘৃণ্য প্রথাটির শিকার রয়ে গেলেন? এই দায় কেন্দ্র এবং সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলি এড়িয়ে যেতে পারে কি? মানুষের মল মানুষকে দিয়ে বহনের অনাচারে অবিলম্বে পূর্ণচ্ছেদ টানাতেই হবে। প্রয়োজনে এই সংক্রান্ত আইনের প্রয়োগে কঠোরতাই কাম্য। বংশ পরম্পরায় বয়ে আসা প্রথাটি থেকে সরিয়ে আনা পরিবারগুলির জন্য সম্মানজনক পুনর্বাসনও নিশ্চিত করতে হবে। তাদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষা এবং আর্থিক সুরক্ষারও বন্দোবস্ত করতে হবে সরকারকে। এসব এমনভাবে করতে হবে যে হতভাগ্য পরিবারগুলি যেন পুরনো পেশায় পরোক্ষভাবেও ফিরে যেতে বাধ্য না-হয়, তারা যেন নিজেদেরকে দ্রুত ভদ্রসমাজের অংশ ভাবতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এই দাবি মানবিকতার। এই দাবি আধুনিক ভারতের।