বিদ্যার্থীরা শুভ ফল লাভ করবে। মাঝে মাঝে হঠকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় ক্ষতি হতে পারে। নতুন ... বিশদ
গত ২১ জুলাই মহাসমাবেশে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহ্বানই ছিল, ইভিএম নয় ব্যালট চাই। কারণ হিসেবে তিনি দাবি করেছিলেন, প্রযুক্তিতে গলদ থাকতে পারে। এমনও হতে পারে, অন্য বোতাম টিপলেও ভোট গিয়ে একটিই দলের ঝুলিতে পড়বে। তাই ইভিএম আর নয়, ফিরতে হবে ব্যালটে। ইভিএমে এই কারচুপির অভিযোগ অবশ্য তিনি একা নন, তেলুগু দেশম পার্টির প্রধান চন্দ্রবাবু নাইডু, মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা সুপ্রিমো রাজ থ্যাকারে কিংবা ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ফারুক আবদুল্লাও এই একই দাবি তুলে এসেছেন। আগে কংগ্রেস তথা তাদের সদ্য পদত্যাগী সভাপতি রাহুল গান্ধীও অবশ্য দাবি তুলেছিলেন, ইভিএমে কারচুপি করে বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার। বছরখানেক আগে বিজেপির গড়েই বিজেপিকে হারানোর পর অবশ্য রাহুল গান্ধী সেই অভিযোগ আর খুব একটা তোলেননি। এমনকী নির্বাচন কমিশন যখন খোলাখুলি সব রাজনৈতিক দল এবং মানুষকে ইভিএমে কারচুপি ধরিয়ে দেওয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছিল, তখনও কেউ এসে ইভিএমের গলদ প্রমাণ করতে পারেনি। বিরোধীরা যে অভিযোগ তুলবে, তা যদি প্রমাণ না করা যায়, তাহলে নির্বাচন কমিশনের মতো একটি স্বশাসিত সংস্থা যে কখনই এমন একটা গুরুতর সিদ্ধান্ত নেবে না, তা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। তার উপর ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন গোটা দেশে চালু করা এবং তার পাশাপাশি নবতম সংযোজন সর্বত্র ভিভিপ্যাট—এতে কেন্দ্রীয় সরকার যে পরিমাণ অর্থ খরচ করেছে, তার থেকে যদি আচমকা একটা অভিযোগের ভিত্তিতে ‘আদিম’ যুগে ফিরে যায়, তাহলে জনগণ কেনই বা মেনে নেবে! গোটা প্রক্রিয়াটাই তো হয়েছে বা হচ্ছে সাধারণ ভারতীয়ের কষ্টার্জিত করের টাকায়। এছাড়া ওয়াকিবহাল মহল আরও একটা প্রশ্ন তুলছে। কারচুপি যদি কোনও একটি মেশিনে করা হয়, তাহলে সেখানে সব ভোটই তো একটি দলের ঝুলিতে যাবে। মেশিন তো আর এমন বুঝবে না যে, তিনটি ভোট বিরোধী পক্ষ আর সাতটি শাসককে দিতে হবে! পাশাপাশি লক্ষ লক্ষ ইভিএমে কারচুপি করতে গেলে অন্তত কয়েক হাজার লোককে তো নিয়োগ করতেই হবে! সেক্ষেত্রে কি কারচুপির গোপনীয়তা বজায় থাকবে?
এমন বহু প্রশ্নের উত্তর নেই বলেই নির্বাচন কমিশন বুক ঠুকে বলতে পারছে, ব্যালটে ফিরব না। বিরোধীরা অবশ্য যুক্তি দেখাচ্ছে, প্রথম বিশ্বের বহু দেশ, অর্থাৎ আমেরিকা বা ইউরোপে অনেকেই প্রযুক্তি ছেড়ে ব্যালটে ফিরেছে। প্রথম কারণ যদি বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়, তাহলে দ্বিতীয়টি অবশ্যই মেশিনে ভরসা রাখতে না পারা। তাহলে ভারতে কেন হবে না। প্রথম যুক্তিটি সত্যিই ভেবে দেখার মতো। ১৩০ কোটি নাগরিকের এবং প্রায় ১০০ কোটি ভোটারের দেশে ব্যালটের ক্ষেত্রে যে পরিমাণ অর্থ খরচ হবে, তা ইভিএম এবং প্রযুক্তির তুলনায় কম। কিন্তু ব্যালট ফিরলে যে দুর্নীতি হবে না, সে গ্যারান্টি কে দিচ্ছে? গত ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটেও রায়গঞ্জের সোনাডাঙিতে পুকুর থেকে ব্যালট বাক্স উদ্ধারের ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। কিংবা বাম জমানায় ব্যালট লুটের ইতিহাস আজও স্মৃতি থেকে ফিকে হয়ে যায়নি। তুমুল ছাপ্পা, বুথ ক্যাপচারে ভোট-দুষ্কৃতীরা কিন্তু ব্যালটেই হাত পাকিয়েছিল।
আসল কথাটা হল, যে রাজনৈতিক দলই হোক, মানুষের জন্য কাজ করলে ইভিএমে কারচুপি বা ব্যালট-ছাপ্পার প্রয়োজন হবে না। সে ক্ষেত্রে কিন্তু পদ্ধতিটাই গৌণ হয়ে যাবে। মানুষ বেছে নেবে তাঁর আস্থাভাজন দল বা প্রতিনিধিকেই। সেটাই গণতন্ত্র।