বিদ্যার্থীরা শুভ ফল লাভ করবে। মাঝে মাঝে হঠকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় ক্ষতি হতে পারে। নতুন ... বিশদ
তবে, এর দুটি প্রভাব সম্পর্কেও হুঁশিয়ার থাকতে হবে। সমাজের একটি অংশের আয়বৃদ্ধির প্রভাব বাজারে পড়বে। তার দরুণ জিনিসপত্রের দাম কিছুটা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে। আর একটি সম্ভাবনা হল সরকারের বাকি সমস্ত ক্ষেত্রও একইসঙ্গে বেতনসহ অন্যান্য প্রাপ্য বৃদ্ধির ব্যাপারে প্রত্যাশী হয়ে উঠবে। যেমন হাইস্কুল, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি এবং সরকার অধিগৃহীত সংস্থাগুলির কর্মীরা। আমরা জানি, সরকারি কর্মীরা মহার্ঘভাতা বৃদ্ধির দাবিতে দীর্ঘদিন যাবৎ সোচ্চার। ইতিমধ্যেই ডিএ মামলায় স্যাটের রায় কর্মীদের পক্ষে গিয়েছে। তাঁদের কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্যাট। নবান্নের উপর আরও রয়েছে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করার চাপ। দাবিপূরণের দরজা একবার খুলে গেলে তা বন্ধ করে দেওয়া কঠিন। আশঙ্কা হয়, এরপর প্রত্যাশা বাড়বে সামাজিক কল্যাণ ক্ষেত্রে সরকার যত রকম ভাতা দিয়ে থাকে (যেমন বিধবাভাতা, বার্ধক্যভাতা, ছাত্রবৃত্তি প্রভৃতি) সেগুলিও বৃদ্ধির জন্য।
সম্প্রতি যতটা বর্ধিত আর্থিক দায় সরকার স্বীকার করে নিয়েছে তার পরিমাণ বিপুল। এরপর ডিএ, ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ গ্রহণ মিলিয়ে আরও এক বিশাল ব্যয়ভার অপেক্ষা করছে। সরকার এই পুরোটাই মেটাতে পারলে তার চেয়ে সুখের কিছু হয় না। কারণ, তাতে নাগরিকদের একটি বৃহৎ অংশের জীবনযাত্রার মানে ইতিবাচক পরিবর্তন সূচিত হবে। যার সুফল বাজারেও পড়বে। কিন্তু প্রশ্ন হল, যে সরকারের কাঁধে ঋণের সুদ বাবদ অবিলম্বে ৫৬ হাজার কোটি টাকা মেটানোর দায় রয়েছে, সেই সরকার এটা কতটা পেরে উঠবে? রাজ্য সরকারের আয়ের ক্ষেত্র সীমিত। কেন্দ্রীয় রাজস্বের প্রাপ্য অংশও রাজ্য কখনও পুরো পায় না। যেমন চতুর্দশ অর্থ কমিশনের নিয়মানুসারে মোট কেন্দ্রীয় রাজস্বের (জিটিআর) ৪২ শতাংশ রাজ্যগুলির প্রাপ্য। এটি রাজ্যগুলির সাংবিধানিক অধিকারও বটে। তারপরেও গত পাঁচ বছরে রাজ্যগুলির প্রাপ্য ৩৬ শতাংশও স্পর্শ করেনি। তাই রাজ্যের দায়ভারকে অংশত কেন্দ্রেরও স্বীকার করে নেওয়া উচিত। তা না-হলে রাজ্যের উপর চাপবৃদ্ধিতে অশান্তিই বাড়বে, বাস্তবে কিছুই করার থাকবে না রাজ্যের। অন্যদিকে, রাজ্যকেও চেষ্টা করতে হবে সংকীর্ণ রাজনীতির ঊর্ধ্বে ওঠার এবং অনাবশ্যক কিছু খরচে লাগাম টানার। আয়বৃদ্ধির নতুন নতুন ক্ষেত্র খুঁজে বের করাও জরুরি। বেতন ভাতা বাবদ যাঁরা বাড়তি অর্থ পেতে চলেছেন, তাঁদেরকেও মনে রাখতে হবে, বাংলার কর্মসংস্কৃতির বিন্দুমাত্র সুনাম নেই। জনপ্রতিনিধিদের একাংশ সম্পর্কেও মানুষের শ্রদ্ধা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। অতএব সরকার যখন সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সংগৃহীত অর্থে তাঁদের জন্য বাড়তি বিপুল ব্যয়ভার স্বীকার করছে, তখন কর্মসংস্কৃতি এবং স্বচ্ছতা ফেরানোর বিষয়ে তাঁরা যেন আন্তরিকতার পরিচয়টি রাখেন।