বিদ্যার্থীরা শুভ ফল লাভ করবে। মাঝে মাঝে হঠকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় ক্ষতি হতে পারে। নতুন ... বিশদ
দলের কিছু নেতা-নেত্রী বা কর্মীর আচার-আচরণ স্বজনপোষণ দুর্নীতি ইত্যাদি যে দলের ভাবমূর্তি কলুষিত করছে তা একজন অভিজ্ঞ নেত্রী বা দক্ষ প্রশাসকের না-বোঝার কথা নয়। বিশেষত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ১৮টি আসন পাওয়ার পর এবং এই রাজ্যে তাদের দলের বাড়বাড়ন্তে তৃণমূলের তরফে আগাম সতর্কতারও প্রয়োজন রয়েছে। সেইসঙ্গে প্রয়োজন পুরনো ধ্যান-ধারণার বদল ঘটিয়ে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিকীকরণ। সাধারণের কাছে পৌঁছাতে আধুনিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে তাই তৃণমূল হাতিয়ার করছে। মাটির এবং মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের অভাব যেমন বিরূপ প্রভাব ফেলে তেমনি দুর্নীতি কাটমানি ইত্যাদি বিষয়ও নেতা-কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে প্রায়শ ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই সমস্যার গভীরে গিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের সবক শেখাতে যে-দাওয়াই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিয়েছেন তা সত্যিই যদি কার্যকর হয় তবে বহু মানুষের পুঞ্জিভূত ক্ষোভও নিঃসন্দেহে অনেকটাই প্রশমিত করবে। কাটমানি ফেরত ও শুদ্ধকরণের বার্তা দিয়ে তিনি দুর্নীতিগ্রস্তদের সতর্ক করেছেন। আবার অন্যদিকে বুথভিত্তিক কর্মী বাহিনী নিয়োগ, জনসংযোগ সভা করার কথা তিনি বলেছেন। আগামী একশো দিন ধরে দলের হাজারের বেশি জনপ্রতিনিধি নেতা-মন্ত্রী-কর্মীকে দশ হাজারের বেশি গ্রাম শহরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে এবং সেখানে রাত্রিবাস ও বুথকর্মীর বাড়িতে পঙ্ক্তিভোজন করে মানুষের সমস্যার কথা শোনার নির্দেশ দিয়ে মা-মাটির সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ বৃদ্ধির উপায়টিও তিনি বের করে দিয়েছেন। ‘দিদিকে বলো’ ব্যবস্থার মাধ্যমে আগামী কুড়ি মাসে রাজ্যের ৮০ শতাংশ (১.৬০ কোটি) পরিবারকে এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত করার টার্গেট নেওয়া হয়েছে। এই উদ্দেশ্য সফল করতে সর্বস্তরে নজরদারি চালানোর রিমোটটি অবশ্যই থাকছে নেত্রীর হাতে। দলের অভ্যন্তরের হাল হকিকৎ সম্পর্কে বা কোথাও দুর্নীতি বা অনিয়ম ঘটছে কি না সে বিষয়ে তিনি ওয়াকিবহাল থাকবেন। ঠিক তেমনি মানুষের অন্তরের কথাটি বা চাহিদার বিষয়টিও অনায়াসেই এই মাধ্যমে জানতে সক্ষম হবেন। সেইসঙ্গে তাঁর রাজ্যের পরিবেশ যাতে অশান্ত হয়ে না-ওঠে তাই সংঘাত এড়াবার বার্তা দিতেও তিনি ভোলেননি।
নয়া এই উদ্যোগে না-হয় মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছানো গেল। জানা গেল তাঁদের মূল সমস্যা বা অভিযোগ কী কী আছে। কিন্তু আসল লক্ষ্য হওয়া উচিত সমস্যার সমাধান। মানুষের অভাব অভিযোগ শুনে তার সমাধানের চেষ্টা করা হলেই হবে লক্ষ্যপূরণ। আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে যে বিষয়টি বড় ব্যাপার, তা হল—নিরপেক্ষতা। রাজনীতির রং না-দেখে যদি নিরপেক্ষভাবে মানুষের অভাব অভিযোগ দূর করার চেষ্টা করা হয় তাহলেই হবে উদ্দেশ্য সফল। আর শায়েস্তা করতে হবে দুর্নীতিগ্রস্তদের। সেক্ষেত্রেও ছোট মাঝারি বড় নেতা বা মন্ত্রী না-দেখে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করতে হবে। এই কাজটি ঠিকভাবে করতে পারলে জননেত্রীর জনপ্রিয়তা নিঃসন্দেহে বাড়বে আর এই উদ্যোগে তিনি কতটা সফল হলেন তা বোঝা যাবে আগামী নির্বাচনগুলির ফলাফলে।