বিদ্যার্থীরা শুভ ফল লাভ করবে। মাঝে মাঝে হঠকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় ক্ষতি হতে পারে। নতুন ... বিশদ
একটু ঘুরিয়ে দেখলে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সিকে অসীম ক্ষমতা দিয়ে দিল সংসদের এই অধিবেশন। দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার খাতিরে এনআইএ এতদিন যে কোনও রাজ্যে গিয়ে তদন্ত করতে পারত। এবার যদি সন্ত্রাসের ধারায় কোনও ভারতীয় অভিযুক্ত বিদেশে থাকে, তাকেও ধরার ছাড়পত্র পেয়ে গেল এনআইএ। অর্থাৎ, বিদেশের মাটিতে সরকারিভাবে পা রাখল। ইন্টারপোলের মাধ্যমে এনআইএকে এরপরও সবকিছু করতে হলেও, অপার স্বাধীনতা পেল এই এজেন্সি।
কিন্তু মৌলিক অধিকার খর্ব হওয়ার যে আশঙ্কা বিরোধী দলগুলি প্রকাশ করছে, তা কি একেবারেই অমূলক? একেবারেই না। কারণটা ব্যাখ্যা করা যাক। এবার থেকে পান থেকে চুন খসলেই যে কোনও ব্যক্তিকে কেন্দ্রীয় সরকার ‘জঙ্গি’ তকমা দিয়ে দিতে পারবে। এক্ষেত্রে কোনও বিচারবিভাগীয় পদ্ধতি মেনে তদন্তকারী সংস্থাকে চলতে হবে না। পাশাপাশি, যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদীর লেবেল সেঁটে বিজ্ঞপ্তি জারি হবে, তিনি শুধু ৪৫ দিনের মধ্যে আবেদন করতে পারবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে। সেই আবেদন পর্যালোচনা কে করবে? কেন্দ্রীয় সরকার নির্ধারিত একটি কমিটি। যা তৈরি হবে একজন বর্তমান বা অবসরপ্রাপ্ত বিচারক এবং দু’জন অবসরপ্রাপ্ত সেক্রেটারি পর্যায়ের আধিকারিককে নিয়ে। ফলে সেই আবেদনের বিচার কতটা নিরপেক্ষভাবে হবে কিংবা সেই কমিটি কতটা সরকারের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে গিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। উপরন্তু যে ব্যক্তিকে হঠাৎ করে জঙ্গি বলে ঘোষণা করা হবে, তাঁর ক্ষেত্রে আইনি কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ এই সংশোধনীতে রাখা হয়নি। অভিযোগ প্রমাণ না হওয়া সত্ত্বেও সমাজে তিনি একঘরে হয়ে যাবেন। কিংবা জনতার হাতে অকারণে মার খেয়ে প্রাণও দিতে পারেন। কাজেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকারের বিরুদ্ধে কিছু লিখতে গেলেও একজন সাধারণ মানুষ জঙ্গি হয়ে যেতে পারেন বলেই আশঙ্কার মেঘ ঘনাতে শুরু করেছে।
কেন্দ্র অবশ্য বলছে এবার হাফিজ সইদ, মাসুদ আজহারদের মতো মার্কামারাদেরই জঙ্গি ঘোষণা করা হবে। তার জন্য তো আনলফুল অ্যাক্টিভিটিজ প্রিভেনশন অ্যাক্ট, ১৯৬৭-ই যথেষ্ট ছিল! সেখানে তো স্পষ্ট বলা রয়েছে, চিহ্নিত কোনও জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি, সেই গোষ্ঠীর সমর্থক কিংবা তাদের টাকা জোগানদারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। তাহলে বিরোধীরা যে দাবি করছে, প্রত্যেক ঘরে একটা আতঙ্কের আবহ তৈরি করার জন্যই এই সংশোধনী আনা হল—সেটাই কি ঠিক?
আতঙ্ক সঙ্গী করেই উত্তরের অপেক্ষায় ভারতবাসী।