বিদ্যার্থীরা শুভ ফল লাভ করবে। মাঝে মাঝে হঠকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় ক্ষতি হতে পারে। নতুন ... বিশদ
কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল, ভারতের একটি শ্রেণীর কাছে স্বচ্ছ জল সবসময়ই অপেয় গণ্য হয়; তৃষ্ণা মেটাতে তাঁরা স্বচ্ছ জল ঘোলা করে নেন। ঘোলা জলে মাছধরাও সহজ ভেবে নেন তাঁরা। এই শ্রেণী আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এরপর উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির বিশেষ অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারে মোদি সরকার। শুধু তাই নয়, এই ঘোলা জলে দার্জিলিংকেও টেনে আনছেন কেউ কেউ। সেই বস্তাপচা দাবি, দার্জিলিং পাহাড়কে বাংলা থেকে বিচ্ছিন্ন করে পৃথক রাজ্য গড়ে দিতে হবে, নিদেনপক্ষে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করে দিলেও তাঁরা খুশি। এইসমস্ত কথা যাঁরা বলছেন, তাঁরা সজ্ঞানে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। কারণ, তাঁরাও জানেন কাশ্মীর একেবারে একটি ভিন্ন প্রশ্ন। কাশ্মীর ভারতের অন্যতম এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তান সেখানে চরম অশান্তি জিইয়ে রেখেছে। সম্মুখসমরে একাধিকবার পরাজিত হয়ে ছায়াযুদ্ধ জারি রেখেছে। কাশ্মীর বিবাদকে বারবার আন্তর্জাতিক মঞ্চে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে পাকিস্তান। কাশ্মীরের ভাগ পাওয়ার জন্য তারা বারবার আন্তর্জাতিক মুরুব্বি ধরে বেড়িয়েছে। এই সেদিনও ইমরান খান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথমবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে একই বায়না রেখেছিলেন। আমরা জানি, ওই প্রসঙ্গে ট্রাম্প সাহেব বেফাঁস মন্তব্য করে নিজের দেশেই নিন্দিত হয়েছেন। কাশ্মীর নিয়ে ইমরান সাহেবের প্রাপ্তি বলতে ওইটুকুই। কাশ্মীর বিষয়ে ভারত সরকারের সর্বশেষ পদক্ষেপ নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে মূলত দুটি দেশ—পাকিস্তান এবং চীন। তাদের প্রতিক্রিয়া আমাদের কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল না। কারণ, কাশ্মীর এবং লাদাখের বিশাল অঞ্চল (আকসাই চীন) এই দুটি দেশ দীর্ঘদিন যাবৎ বেআইনিভাবে দখল করে রেখেছে। এই প্রথম কোনও ভারত সরকার ওই দুই ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারের অঙ্গীকার শুনিয়ে দিয়েছে। একইসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে জানিয়ে দিয়েছেন, উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির বিশেষ অধিকার সংরক্ষিত হয়েছে সংবিধানের ৩৭১ ধারায়, তার সঙ্গে খারিজ-হওয়া ৩৭০ ধারার কোনও সম্পর্ক নেই। ৩৭১ ধারার বাধ্যবাধকতা ভিন্ন প্রেক্ষিতে। এই ধারাটি নিয়ে যাবতীয় আশঙ্কা অমিত শাহ উড়িয়ে দিয়েছেন।
সুতরাং এরপরও কাশ্মীর প্রশ্নের পাশে উত্তর-পূর্বাঞ্চল-চর্চায় চীন এবং পাকিস্তান ছাড়া আর কেউই খুশি হবে না। আর দার্জিলিংকে কোনোভাবেই এই পংক্তিতে আনা যায় না। দার্জিলিং বরাবর বাংলার একটি অংশ ছিল, আছে এবং থাকবে। উন্নয়নই দার্জিলিং সমস্যার একমাত্র সমাধান। রাজ্য সরকার গত আটবছর যাবৎ লাগাতার সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছে আন্তরিকভাবে। কেন্দ্র দরাজ-হস্ত হলে দার্জিলিঙের উন্নয়ন নিশ্চয় ত্বরান্বিত হবে। মোদি সরকারের কাছে সেটাই কাঙ্ক্ষিত। কিন্তু, বিজেপির স্থানীয় এমপি ঘোলা জলে মাছধরার যে চেষ্টা নিয়েছেন তা নিন্দনীয় এবং পরিত্যাজ্য। বিজেপির কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য নেতৃত্ব বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে অনুধাবন না-করলে বাংলায় আগামী বিধানসভার ভোটে তার মূল্য তাদের চোকাতে হবে—আগাম বলে দেওয়া যায়।