বিদ্যার্থীরা শুভ ফল লাভ করবে। মাঝে মাঝে হঠকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় ক্ষতি হতে পারে। নতুন ... বিশদ
রাজ্যের অন্যসকল অঞ্চলের তুলনায় কলকাতায় শিক্ষার হার বেশি। এখানকার উচ্চ শিক্ষিতদের একটি বড় অংশ দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, চেন্নাই প্রভৃতি স্থানে কর্মরত। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর এবং আরব ও ইউরোপের নানা দেশে গবেষণা, চাকরি অথবা বাণিজ্য সূত্রে বসবাস করেন। অনেকের পক্ষে বছরের পর বছর দেশে ফেরা সম্ভব হয় না। তাঁদের বৃদ্ধ বাবা-মা কলকাতা অথবা শহরতলির বাড়িতে বা ফ্ল্যাটে কার্যত নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করেন। ঘরে তাঁদের নগদ টাকা, অলংকার এবং সম্পত্তির দলিল-দস্তাবেজসহ অনেক দামি জিনিসপত্র থাকে। এসব বাড়িতে নিঃশব্দে চুরি, হাত সাফাই হচ্ছে। ওই দম্পতিরা মর্নিংওয়াকে বা বাজার করতে বেরিয়ে ছিনতাবাজদের কবলে পড়ে টাকা গহনা হারাচ্ছেন, খুন জখম পর্যন্ত হয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে আশি পেরনো অতিবৃদ্ধদের অনেকেই নিজেদের দৈনন্দিন কাজকর্ম নিজেরা করতে পারেন না; ডাক্তারের কাছে বা নার্সিংহোমেও যেতে পারেন না। ফোনে ডাক্তার ডেকে আনাও সম্ভব হয় না তাঁদের পক্ষে। তাঁরা পরিচারক, পরিচারিকা, রাঁধুনি, সুইপার প্রভৃতিদের উপর একটু বেশি মাত্রায় নির্ভরীল। এই যে ‘ডোমেস্টিক হেল্প’ হিসেবে যাঁরা আছেন, তাঁদের অনেকে পুত্র-কন্যা এবং পরিবারের নিকটজনের মতোই যত্ন সেবা শুশ্রূষা করেন। আবার একটি অংশ তা করেন না, এমনকী তাঁদের মধ্যে দু-চারজন জীবনের একটি পর্বে এসে পুরনো বিশ্বাসভঙ্গ করে বসেন। এই বিশ্বাসভঙ্গতা কখনও নিজেদের দুর্বুদ্ধিতে, কখনও অন্যকোনও লোভী ব্যক্তির প্ররোচনায় হয়ে থাকে। বিশেষত, শহরে এবং শহরতলিতে যাঁদের এক টুকরো জমি আছে তাঁদের বিপদটা বেশি। ‘প্রমোটার’ নামক মূলত যে বিবেকহীন লোভী অদ্ভুত এক প্রজাতির আবির্ভাব বাম জমানায় ঘটেছে, তারাই এই বিপদের নেপথ্যে। তাদের একাংশ দিনে দিনে আরও লোভী হয়ে উঠেছে। নিঃসঙ্গ দম্পতিদের জমিজমা হাতানোর জন্য তাঁদের খুন করতেও বুক কাঁপছে কারও কারও। সম্প্রতি দক্ষিণ কলকাতার পর্ণশ্রীতে বৃদ্ধার রহস্যমৃত্যু এবং নেতাজিনগরে ও নরেন্দ্রপুরে দুই নিঃসঙ্গ দম্পতি খুনের পর আশঙ্কাটি বেড়েছে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নিঃসঙ্গ দম্পতির সম্পতি হাতানোর ছক বানচাল করতে পুলিসকে আরও সতর্ক এবং সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
তদন্তে নেমে পুলিস দেখছে এইসব বিপন্ন দম্পতির বেশিরভাগই প্রণাম-এর সদস্য নন। তাই প্রবীণদের নিরাপত্তা আরও বাড়াতে কলকাতা পুলিস আরও সক্রিয় হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রণাম-এর সদস্যবৃদ্ধির উপর জোর দেওয়া হয়েছে। পুলিসের হেল্পলাইন ২৪ ঘণ্টার জন্য সক্রিয় রাখার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে তারা। বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের কাউন্সেলিংয়ের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। চালু করা হচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর (এসওপি)। এই ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য দিক হল—শহরের নিঃসঙ্গ দম্পতিদের উপর ডেটাবেস বা তথ্যভাণ্ডার তৈরি করা হবে। তাতে সংশ্লিষ্ট পরিবারের সিসিটিভি ফুটেজ নেওয়া হবে। ওইসব বাড়িতে যাঁদের যাতায়াত আছে তাঁদের উপরেও নজর থাকবে পুলিসের। নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য চালু করা হবে ‘সিকিউরিটি অডিট’। ব্যবস্থাটি উন্নত দেশগুলির নেবারহুড পুলিসিংয়ের ধাঁচে। স্থানীয় ক্লাবগুলিকেও এই ব্যাপারে সহমর্মী হিসেবে পেলে কাজটি সহজতর হতে পারে। এই পরিষেবা সল্টলেক, বারাকপুর, বারাসত, দুর্গাপুর, আসানসোল, হলদিয়া, শিলিগুড়ির মতো মাঝারি মানের শহরগুলিতেও সম্প্রসারিত হওয়া উচিত। কারণ, নিঃসঙ্গ বয়স্ক দম্পতির সংখ্যা কলকাতা ছাড়িয়েও ক্রমবর্ধমান।