বেশি বন্ধু-বান্ধব রাখা ঠিক হবে না। প্রেম-ভালোবাসায় সাফল্য আসবে। বিবাহযোগ আছে। কর্ম পরিবেশ পরিবর্তন হতে ... বিশদ
ফলে গ্রামের প্রতিবেশী বাসিন্দাদের মধ্যে যে এসব নিয়ে ক্ষোভ পুঞ্জিভূত হচ্ছিল, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ বোধহয় সম্প্রতি হয়ে যাওয়া লোকসভা ভোট। যে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে বিরোধীদের কার্যত শুইয়ে দিয়ে শাসক তৃণমূল ক্ষমতা দখল করেছিল, সেই সব জায়গাতেই এবার শোচনীয় পরাজয়ের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাদের। বোঝাই যায়, কোথাও একটা গলদ ছিল। আর সেই গলদ যে কিছু পঞ্চায়েত সদস্যের দুর্ব্যবহারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, এমন নয়। সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করে সরকারের কোটি কোটি টাকার প্রকল্পের কমিশন হস্তগত করে নেওয়াও অন্যতম একটা কারণ হিসেবে কাজ করেছে। আর এ শুধু কথার কথা নয়। খোদ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক কিছু ঘোষণা বা পর্যবেক্ষণ সাধারণ মানুষের সেই অভিযোগ বা ক্ষোভকে সিলমোহর দিয়েছে। নবান্নে তৈরি হয়েছে গ্রিভান্স সেল। ১০০ দিনের কাজে ভুয়ো মাস্টার রোল বানিয়ে টাকা আত্মসাৎ করার পর ক্ষোভের মুখে পড়ে সেই টাকা কোনও এলাকার নেতা রীতিমতো ক্যাম্প করে ফিরিয়ে দিচ্ছেন, এমন ঘটনাও আমরা দেখেছি। শুধু ১০০ দিনের কাজ কেন? গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে এখন কেন্দ্র ও রাজ্য মিলিয়ে নয় নয় করে ২৫ থেকে ২৬টি প্রকল্প চলছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, মিশন নির্মল বাংলা, বাংলার বাড়ি, বাংলার গ্রামীণ সড়ক যোজনা, গ্রাম পঞ্চায়েত সশক্তিকরণ কর্মসূচি, আনন্দধারা প্রভৃতি। প্রতিটি প্রকল্পেই লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি টাকা উড়ে বেড়াচ্ছে। আর তা লুফে নিতে তৎপর পঞ্চায়েতের কিছু মাতব্বর, যাঁরা প্রত্যন্ত এলাকার অসহায় এবং অতি গরিব একজন বৃদ্ধাকে বাংলার বাড়ি প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দিতে গিয়েও দশ-বিশ হাজার টাকা কমিশন দাবি করেন। তারপর খাতায় নাম উঠলে নিম্নমানের কাঁচামাল দেওয়া, সিন্ডিকেট প্রভৃতির মাধ্যমে টাকা লুটে নেওয়ার চিরাচরিত পন্থা তো আছেই।
এমন একটা প্রেক্ষাপটে পঞ্চায়েত দপ্তর যে রাজ্যের ৩ হাজার ৩২৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতই অডিট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা প্রথমেই সাধুবাদযোগ্য। কারণ, এতদিন গ্রামের অসহায় মানুষ দেখে এসেছেন, কাটমানি, কমিশন, চুরি, দুর্নীতি সহ বিভিন্ন অনিয়মের কাজ করেও সবাই পার পেয়ে যাচ্ছে। নিয়ন্ত্রণ নেই, ধরা পড়লে শাস্তি এসবের কোনও নামগন্ধ ছিল না। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে সেই প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় যেমন অনেকেই খুশি, তেমনি এই অডিট করার সিদ্ধান্তও অনেকের মনে নতুন করে আশার আলো জুগিয়েছে। অনেকেই ভাবতে শুরু করেছেন, এবার হয়তো দিনের পর দিন চোখের সামনে চুরি করে যাওয়া রাঘববোয়ালদের সরকার জালে পুরতে সক্ষম হবে। পঞ্চায়েত দপ্তরের সিদ্ধান্ত মোতাবেক, ব্লক স্তরের অডিট অফিসাররাই প্রথম অডিটের কাজটি করবেন। কিন্তু স্থানীয় স্তরে বোঝাপড়ার ভিত্তিতে অনেক সময় সেই অডিটে প্রকৃত চিত্র উঠে আসতে নাও পারে। সেক্ষেত্রে তাই আরও একটি চেক পয়েন্ট রাখা হয়েছে। ওই রিপোর্ট পাঠাতে হবে রাজ্য পঞ্চায়েত দপ্তরে এবং দপ্তর নামী কোনও বেসরকারি পেশাদার সংস্থাকে দিয়ে তা পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা করাবে। অর্থাৎ ফাঁক গলে বেরিয়ে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ।
সরকারের উদ্দেশ্য অত্যন্ত পরিষ্কার। এক, চুরি এবং দুর্নীতি বন্ধ করা। দুই, সরকারি প্রকল্পের টাকা যাতে পুরোপুরি উপভোক্তারাই পান, তা নিশ্চিত করা। সরকারের ওই উদ্যোগ সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে এই দুটি উদ্দেশ্যই সফল হবে, একথা বলাই যায়।