বেশি বন্ধু-বান্ধব রাখা ঠিক হবে না। প্রেম-ভালোবাসায় সাফল্য আসবে। বিবাহযোগ আছে। কর্ম পরিবেশ পরিবর্তন হতে ... বিশদ
মনমোহন সিং যে অর্থমন্ত্রী হতে চলেছেন, সেটা ভারতীয় রাজনীতির বহু বড় বোদ্ধাও আন্দাজ করে উঠতে পারেননি। নরসিমা রাও সেই সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলেন। ২১ মার্চ, ১৯৯৮। অর্থমন্ত্রী হয়েছিলেন মনমোহন সিং। তার আগের প্রোফাইল যাঁর ছিল রীতিমতো ঈর্ষণীয়। কেন্দ্রীয় সরকারের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর, যোজনা কমিশনের ডেপুটি কমিশনার...। এমন এক ব্যক্তি রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে যদি অর্থমন্ত্রিত্বের দাবিদার হন, তা তো দেশের পক্ষেই গর্বের! তা সত্ত্বেও মনমোহন সিং নিজে দাবি করেছেন, দুর্ঘটনাবশত তিনি অর্থমন্ত্রী হয়ে গিয়েছিলেন। যদিও সেই দুর্ঘটনার সুফল ভারত আজও ভোগ করছে। যে সংস্কার তাঁর হাত ধরে হয়েছিল, তার উপর ভর করেই দেশের অর্থনীতি আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় সাফল্যের ডানা মেলেছে। রাও-মনমোহন মডেল। ভারতের অর্থনীতির সোপান। আর তিনিই গত ৩০ বছরে এই প্রথমবার বাজেট পেশের সময় সংসদে থাকছেন না। কারণ, মনমোহন সিংয়ের রাজ্যসভার সদস্যপদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে আজ।
এটাও কি রাজনৈতিক ইস্যু হতে পারে? পারে। সেটাই করে দেখিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ মহিলা অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে পাঠালেন মনমোহন সিংয়ের নয়াদিল্লির বাসভবনে। কী কথা হল? কেউ কিছুই বলতে চাননি। শুধু বিজেপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সৌজন্য সাক্ষাৎ। এর মাঝে অন্য কিছু খুঁজতে যাবেন না। কিন্তু ৫ জুলাই বাজেট পেশের আগে অর্থমন্ত্রী দেশের অন্যতম হাইপ্রোফাইল অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞের বাড়িতে কেবল সৌজন্য করতে যাবেন, এই ব্যাখ্যা রাজনৈতিক মহল মানতে নারাজ। তাহলে এর নেপথ্যে কী আছে? হতে পারে, পরামর্শ নিতেই নির্মলা গিয়েছিলেন মনমোহনের কাছে। ভোট অন অ্যাকাউন্টকে মনমোহন শুধু একটি কথায় ব্যাখ্যা করেছিলেন—‘ইলেকশন বাজেট’। তাহলে এই পূর্ণাঙ্গ বাজেট কেমন হওয়া উচিত? বা ভোট অন অ্যাকাউন্টের সঙ্গে এর ফারাক কোথায় কোথায় আনা প্রয়োজন? এইসব প্রশ্নের উত্তর বা পরামর্শ যদি নির্মলা সীতারামন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর থেকে শুনতে চান, মনমোহন দেশের স্বার্থেই এর মাঝে রাজনীতি নিয়ে আসবেন না। আর এ ব্যাপারে তাঁর সবচেয়ে বড় নিন্দুকও একমত হবেন।
এ গেল প্রথম সম্ভাবনা। দ্বিতীয়টি রাজনৈতিক। দিন কয়েক আগেই নরেন্দ্র মোদি সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, কংগ্রেস তো নরসিমা রাও, মনমোহন সিংদেরই সেই অর্থে গুরুত্ব দেয়নি। দেশের প্রতি মনমোহন সিংয়ের যা অবদান, তাতে তাঁকে ভারতরত্ন দেওয়া উচিত ছিল কংগ্রেসের। মোদির এক এবং একমাত্র টার্গেট যে গান্ধী পরিবার, তা জানতে পারলে আর কোনও পুরস্কার নেই। গান্ধী-নেহরু পরিবারকে যেভাবে হোক অপদস্থ করা এবং দেশের রাজনীতি থেকে তাঁদের নাম মুছে ফেলার লক্ষ্য নিয়ে প্রথম ইনিংস শুরু করেছিলেন মোদি। দ্বিতীয় ইনিংসে এসেও সেই টার্গেট থেকে একচুল সরেননি তিনি। কংগ্রেসের শিকড়ে আঘাত করতে গিয়ে তারই শাখা-প্রশাখাকে নিশানা করেছেন মোদি। এখন তাঁর সামনে এমনই এক শাখা, যিনি মহীরুহ হয়ে আত্মপ্রকাশ করতে পারতেন। কিন্তু পেরে ওঠেননি। তার প্রথম কারণ যদি সোনিয়া গান্ধী হয়ে থাকেন, দ্বিতীয়টি অবশ্যই মনমোহন সিং নামে সেই ব্যক্তির মার্কেটিংয়ের অভাব। আজকের যুগে সবটাই প্যাকেজিং-নির্ভর। যা মনমোহন সিংয়ের নেই। তিনি শুধুই কাজ করে গিয়েছেন। কাজের প্রচার করেননি। করতে পারলে তাঁর দশ বছরের শাসনকাল এতটা সাদামাটাভাবে শেষ হতো না। সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সংস্কারের যত পালক তাঁর মুকুটে রয়েছে, তা জ্বলজ্বল করে দেশবাসীকে মনমোহন সিংয়ের ক্ষমতা অবগত করাত।
মনমোহন সিং বলতেন, ‘জীবনে কখনও কখনও বোকা হয়ে থাকাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হয়’। মৌন থাকতে পছন্দ করেন মনমোহন। গোটা দেশ যখন তাঁকে সোনিয়া গান্ধীর হাতের পুতুল বলেছে, তখনও চুপ থেকেছেন। তবে তাতে কাজ তাঁর বন্ধ হয়নি। সেই কাজ কিন্তু আজও অস্ত্র মোদির। এবার কি তাহলে প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে আর একটা মাস্টারস্ট্রোক দেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হচ্ছে? মনমোহন সিংকে যদি তিনি ‘ভারতরত্ন’ সম্মানে ভূষিত করেন, অবাক হওয়ার কিন্তু কিছু থাকবে না!