নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্ৰাম: ফুলের রাজ্যে সুন্দরতম অর্কিড। ঠান্ডা পাহাড়ের কোলে এই ফুল ফোটে। বেলপাহাড়ীর পাদদেশে বুনো ফুলের পাশে ফুটছে এবার পাহাড়ি সুন্দরী অর্কিড। দীর্ঘস্থায়ী, বিভিন্ন গড়ন, সুগন্ধী এই ফুল চাষে উৎসাহ দেখাচ্ছেন বেলপাহাড়ীর মানুষ। এখানকার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে পাহাড়, অরণ্য ছড়িয়ে আছে। উঁচুনিচু কোলে সামান্য ধান ও সব্জি চাষ হয়। অরণ্যের শাল পাতা, কুটকুট পিঁপড়ের ডিম, কন্দ সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করেন পাহাড়ী এলাকার বাসিন্দারা। কাজের সন্ধানে স্থানীয় যুবকরা ভিন রাজ্যে পাড়ি দেন। ঝাড়গ্রামের হর্টিকালচার দপ্তর বেলপাহাড়ী এলাকায় বিকল্প চাষের নানা উদ্যোগ নিয়েছে। জারবেরা ফুল চাষে সফলতা মিলতেই অর্কিড চাষে উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিনপুর-২ ব্লকের শিমুলপাল গ্ৰাম পঞ্চায়েতের বোদাডিহা এলাকায় গ্রিন হাউস পদ্ধতিতে গত বছর থেকে অর্কিড ফুলের চাষ শুরু হয়। প্রথম বছরে সফলতা মেলেনি। এই বছর গাছে ফুল ফুটতেই হর্টিকালচার দপ্তরের আধিকারিকরা উচ্ছ্বসিত। গ্রিন হাউসে মাটি ও জল ছাড়াই চাষ করে সাফল্য এসেছে। অর্কিড চাষ বেলপাহাড়ী এলাকায় বিকল্প চাষের দরজা খুলে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। আকর্ষণীয় রং, বিভিন্ন ধরনের গড়ন, ঔষধি গুণাগুণ, সুগন্ধি, দীর্ঘ স্থায়িত্বকালের কারণে অর্কিডের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। দীর্ঘকাল সজীব থাকে বলে বর্তমানে এই ফুলের ব্যবহার বাড়ছে। বিয়ে বাড়ি, বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে অর্কিডের চাহিদা ক্রমবর্ধমান। বাইরে থেকে এই ফুল এতদিন জেলায় আমদানি হতো। জেলায় অর্কিড চাষ হলে ফুল চাষিরা লাভবান হবেন। বিকল্প রোজগারের ব্যাবস্থাও হবে। অর্কিড প্রধানত দু'ভাবে চাষ করা হয়। অনান্য ফুলের মতো যেসব অর্কিড মাটি থেকে খাদ্য ,রস সংগ্রহ করে বড় হয় তাদের পার্থিব অর্কিড বলে। যেসব অর্কিড অন্য কোনও গাছের শাখা বা কাণ্ডে আশ্রিত হয়ে জন্মায় তাদের পরাশ্রয়ী অর্কিড বলে। বাতাস থেকে জলীয় বাষ্প সংগ্ৰহ করে গাছ পুষ্টি সাধন করে। সুতোর মতো সরু গুচ্ছমূল দেখে পার্থিব ও লম্বা মোটা মূল দেখে পরাশ্রয়ী অর্কিড চেনা যায়। হর্টিকালচার দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, বেলপাহাড়ী এলাকায় পরাশ্রয়ী পদ্ধতিতে পরীক্ষা মূলক অর্কিড চাষ শুরু হয়েছে। এখানে জলের সমস্যা রয়েছে। পাহাড়ী ভূমিতে অন্য ফসলের চাষবাস সেভাবে হয় না। সামনের দিনে ফুল চাষ এই এলাকার মানুষের প্রধান জীবিকা হয়ে উঠতে পারে। গত কয়েক বছরে জারবেরা ফুল চাষে সফলতা মিলছে। ঠান্ডা এলাকার পাহাড়ী অর্কিড চাষে সাফল্য এসেছে। দপ্তর থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় চাষিরা অর্কিড চাষে উৎসাহ দেখাচ্ছেন।
ঝাড়গ্রাম জেলা হর্টিকালচার দপ্তরের আধিকারিক সালউদ্দিন খান বলেন, উত্তরবঙ্গের পাহাড়ী এলাকায় অর্কিড ফুল বেশি দেখা যায়। গ্রিন হাউস পদ্ধতিতে বেলপাহাড়ীতে গতবছরের থেকে অর্কিডফুলের পরীক্ষামূলক চাষ হচ্ছে। প্রথমবার ফুল ফোটেনি। তবে এবার গাছে ফুল এসেছে। স্বাভাবিকভাবেই এই সাফল্যে আমরা উচ্ছ্বসিত। বেলপাহাড়ীর বোদাডিহা গ্ৰামের চাষি নির্মল কুমার মাহাত বলেন, জেলার হর্টিকালচার দপ্তর থেকে বাজারে চাহিদা আছে, এমন ফুল চাষে উৎসাহ দিচ্ছে। প্রথমে জারবেরা ফুল চাষে সাফল্য পাই। অর্কিড ফুল চাষ এখানে হবে কি না, তা নিয়ে প্রথমে সন্দেহ ছিল। গতবছর গাছে ফুল আসেনি। এবার ফুল ফুটেছে। বড় জায়গায় অর্কিড চাষ করার চিন্তাভাবনা করছি। স্থানীয় চাষিরা অর্কিড চাষ নিয়ে খোঁজখবর করছেন। -নিজস্ব চিত্র